ঢাকা , বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বসেরা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির জিপিএইচ ইস্পাতের পতন

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০২২
  • 73

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দৃঢ়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জিপিএইচ ইস্পাত নিয়ে এসেছে ইতিহাসের সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম টেকনোলজি। জিপিএইচ কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে কন্টিনিউয়াস কাস্টিং মেশিন থেকে শতভাগ পরিশোধিত বিলেট উৎপাদন করা হয়। যার প্রতিটি স্টিল রিবারে ইউনিফর্ম মার্টেনসাইট রিং গঠন নিশ্চিত করে। যার ফলে রিবারের ইউনিফর্ম স্ট্রেংথ, সুপিরিয়র ডাক্টিলিটি ও হায়েস্ট বেন্ডিবিলিটি অক্ষুন্ন থাকে। জিপিএইচ ইস্পাতই নির্মাণ করে বিশ্বসেরা পিউর এন্ড ক্লিন কোয়ান্টাম কনস্ট্রাকশন স্টিল। টেলিভিশনে চোখ রাখলেই জিপিএইচের এমন প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়বে।

অথচ এমন একটি বিশ্বমানের পণ্য তৈরী করা জিপিএইচ ইস্পাতের ২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা ও লভ্যাংশে পতন হয়েছে। এ কোম্পানিটির আগের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৪.১৮ টাকা করে নিট মুনাফা হয়েছিল ১৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩.৪২ টাকা করে ১৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
পতনে মুনাফার থেকে লভ্যাংশে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে বিশ্ব প্রযুক্তির জিপিএইচ ইস্পাত। যতটা মুনাফা কমেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লভ্যাংশ কমেছে। আগের বছর ৩০% (২০% নগদ ও ১০% বোনাস) লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির পর্ষদ এ বছর ১১% (৫.৫০% নগদ ও ৫.৫০% বোনাস) লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মুনাফার পতনের কারন হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বৈদেশি মুদ্রা বিনিময় লোকসান হয়েছে। এছাড়া আমদানিকৃত কাচাঁমাল ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২১-২২ অর্থবছরের ১৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার অর্জিত মুনাফার মধ্য থেকে মাত্র ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারদের দেবে। বাকি ১২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ৮৪ শতাংশই কোম্পানিতে রেখে দেওয়া হবে। এরমধ্যে ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে এবং ১০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে।

জিপিএইচ ইস্পাত ২০০৮ সালে ব্যবসায় শুরু করে। এরপরে ৪ বছরের মাথায় ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে আসে। ওইসময়ে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ৩০ টাকা (প্রিমিয়াম ২০ টাকা) দরে ইস্যুর মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর ৪ বছর পরে (২০১৬ সাল) এসে ১৪ টাকা দরে ১৮ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার রাইট শেয়ার ইস্যু করে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু তারপরেও কোম্পানিটির পর্ষদ বোনাস শেয়ার থেকে বেরোতে পারেনি।

আরও পড়ুন……
১১২ টাকা ইস্যু মূল্যের ক্রাউন সিমেন্টের ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা

২০১৬ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ব্যবসায় কোম্পানিটির পর্ষদ ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়। এরপরে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার করে লভ্যাংশ দেয়। এরপরের বছর (২০২০-২১) ২০ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস দেয়। আর সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ৫.৫০ শতাংশ নগদ ও ৫.৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি বড় অর্থ সংগ্রহের পরেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে।

নিয়মিত বোনাস শেয়ার প্রদান ও ২০১৬ সালে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আইপিও পূর্ব ছিল মাত্র ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ৭৭৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় আরও ২৪ কোটি ২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে জিপিএইচ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পর্ষদ ১১ বার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ৪ বার শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। আর ৫ বার বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর ২ বার শুধুমাত্র নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য রবিবার (০৬ নভেম্বর) লেনদেন শেষে জিপিএইচ ইস্পাতের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৭.৩০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/০৭ নভেম্বর, ২০২২/এস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিশ্বসেরা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির জিপিএইচ ইস্পাতের পতন

পোস্ট হয়েছে : ১১:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দৃঢ়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জিপিএইচ ইস্পাত নিয়ে এসেছে ইতিহাসের সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম টেকনোলজি। জিপিএইচ কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে কন্টিনিউয়াস কাস্টিং মেশিন থেকে শতভাগ পরিশোধিত বিলেট উৎপাদন করা হয়। যার প্রতিটি স্টিল রিবারে ইউনিফর্ম মার্টেনসাইট রিং গঠন নিশ্চিত করে। যার ফলে রিবারের ইউনিফর্ম স্ট্রেংথ, সুপিরিয়র ডাক্টিলিটি ও হায়েস্ট বেন্ডিবিলিটি অক্ষুন্ন থাকে। জিপিএইচ ইস্পাতই নির্মাণ করে বিশ্বসেরা পিউর এন্ড ক্লিন কোয়ান্টাম কনস্ট্রাকশন স্টিল। টেলিভিশনে চোখ রাখলেই জিপিএইচের এমন প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়বে।

অথচ এমন একটি বিশ্বমানের পণ্য তৈরী করা জিপিএইচ ইস্পাতের ২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা ও লভ্যাংশে পতন হয়েছে। এ কোম্পানিটির আগের অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৪.১৮ টাকা করে নিট মুনাফা হয়েছিল ১৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩.৪২ টাকা করে ১৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
পতনে মুনাফার থেকে লভ্যাংশে আরো একধাপ এগিয়ে গেছে বিশ্ব প্রযুক্তির জিপিএইচ ইস্পাত। যতটা মুনাফা কমেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লভ্যাংশ কমেছে। আগের বছর ৩০% (২০% নগদ ও ১০% বোনাস) লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির পর্ষদ এ বছর ১১% (৫.৫০% নগদ ও ৫.৫০% বোনাস) লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মুনাফার পতনের কারন হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাত কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বৈদেশি মুদ্রা বিনিময় লোকসান হয়েছে। এছাড়া আমদানিকৃত কাচাঁমাল ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২১-২২ অর্থবছরের ১৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার অর্জিত মুনাফার মধ্য থেকে মাত্র ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারদের দেবে। বাকি ১২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ৮৪ শতাংশই কোম্পানিতে রেখে দেওয়া হবে। এরমধ্যে ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে এবং ১০১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে।

জিপিএইচ ইস্পাত ২০০৮ সালে ব্যবসায় শুরু করে। এরপরে ৪ বছরের মাথায় ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে আসে। ওইসময়ে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ৩০ টাকা (প্রিমিয়াম ২০ টাকা) দরে ইস্যুর মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর ৪ বছর পরে (২০১৬ সাল) এসে ১৪ টাকা দরে ১৮ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার রাইট শেয়ার ইস্যু করে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু তারপরেও কোম্পানিটির পর্ষদ বোনাস শেয়ার থেকে বেরোতে পারেনি।

আরও পড়ুন……
১১২ টাকা ইস্যু মূল্যের ক্রাউন সিমেন্টের ১ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা

২০১৬ সালে রাইট শেয়ার ইস্যুর পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ব্যবসায় কোম্পানিটির পর্ষদ ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়। এরপরে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার করে লভ্যাংশ দেয়। এরপরের বছর (২০২০-২১) ২০ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস দেয়। আর সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ৫.৫০ শতাংশ নগদ ও ৫.৫০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি বড় অর্থ সংগ্রহের পরেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে।

নিয়মিত বোনাস শেয়ার প্রদান ও ২০১৬ সালে রাইট ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪৩৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আইপিও পূর্ব ছিল মাত্র ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ৭৭৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় আরও ২৪ কোটি ২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে জিপিএইচ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানিটির পর্ষদ ১১ বার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ৪ বার শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। আর ৫ বার বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর ২ বার শুধুমাত্র নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য রবিবার (০৬ নভেম্বর) লেনদেন শেষে জিপিএইচ ইস্পাতের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৭.৩০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/০৭ নভেম্বর, ২০২২/এস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: