ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ডলার সংকট : শেয়ারবাজার থেকে বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার কোটি

বৈশ্বিক মন্দাসহ নানা ইস্যুতে দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। যা লাঘবে আমদানি নির্ভর বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া বন্ধ এবং বিলাসী পণ্য আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজারের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ ডলার আকারে বিদেশে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে আবারও এমনটি হওয়ার পথে রয়েছে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও দেশের বর্তমান অবস্থায় কিভাবে কম পাঠানো যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেটা নগদের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমেও হতে পারে।

দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের ১৩টি বহূজাতিক কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোতে বিদেশীদের বা উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা বেশি। যেগুলোর প্রতিটিই নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে মালিকানা বেশি থাকায় অধিকাংশ লভ্যাংশ বিদেশে চলে যায়। যা ডলারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

কিন্তু দেশে বর্তমানে ডলার সংকট চলছে। ফলে আগের ন্যায় আমদানি নির্ভর বা ডলার প্রয়োজন হয়, এমন সবকিছু করা যাচ্ছে না। এজন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকার ডলার বিদেশে পাঠানোরোধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩টি বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ বছরে ৬ হাজার ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরমধ্যে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাই বা বিদেশীরা পেয়েছেন ৫ হাজার ১৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার। যা সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের দেশে ডলারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

বহূজাতিক ১৩ কোম্পানি ছাড়াও বিদেশীদের কুইন সাউথ টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হা-ওয়েল টেক্সটাইল ও রিং সাইনের মতো কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। যেগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার কারনেও ডলার বিদেশে যায়।

সেই একই পরিস্থিতি দেশের ডলার সংকটের মধ্যে আবারও তৈরী হতে যাচ্ছে। সামনে কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হবে। এছাড়া যেকোন সময় অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগতো রয়েছেই।

এ বিষয়ে এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বিদেশীরা লভ্যাংশ তাদের দেশে নিয়ে যাবে, এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু যারা এই দেশে বিনিয়োগ করে উপকৃত হচ্ছেন, তাদেরও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা দরকার। তারা এই মুহূর্তে নগদ লভ্যাংশ কমিয়ে দিয়ে ডলার সংকটরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া বোনাস দেওয়ার সুযোগতো রয়েছেই। বহূজাতিক কোম্পানির বোনাসের অনেক চাহিদা শেয়ারবাজারে আছে। 

একই বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের লভ্যাংশ বিদেশে নিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে বিএসইসির বাধাঁ দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় ওইসব কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা নগদ লভ্যাংশের চেয়ে পূণ:বিনিয়োগ বা বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারে। এতে করে শেয়ারবাজার এবং দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

নিম্নে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ বছরে ঘোষণাকৃত লভ্যাংশের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

বহূজাতিক কোম্পানির নামলভ্যাংশের হারলভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানাউদ্যোক্তা/পরিচালকদের লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)
গ্রামীণফোন২৫০%৩৩৭৫.৭৫৯০%৩০৩৮.১৮
ব্রিটিশ আমেরিকান২৭৫%১৪৮৫৭২.৯১%১০৮২.৭১
রবি আজিয়াটা৫%২৬১.৯০৯০%২৩৫.৭১
ম্যারিকো বাংলাদেশ৮০০%২৫২৯০%২২৬.৮০
লাফার্জহোলসিম২৫%২৯০.৩৪৬৪.১৫%১৮৬.২৫
বার্জার পেইন্টস৪০০%১৮৫.৫১৯৫%১৭৬.২৩
রেকিট বেনকিজার১৬৫০%৭৭.৯৬৮২.৯৬%৬৪.৬৮
লিন্ডে বাংলাদেশ৫৫০%৮৩.৭০৬০%৫০.২২
ইউনিলিভার কনজিউমার৪৪০%৫৩৮৬.৯৬%৪৬.০৮
আরএকে সিরামিকস১২.৫০%৫৩.৫০৭২.০৮%৩৮.৫৬
সিঙ্গার বাংলাদেশ৬০%৫৯.৮২৫৭%৩৫.৮৯
বাটা সু১০০% নগদ১৩.৬৮৭০%৯.৫৮
হাউডেলবার্গ সিমেন্ট২৬%১৪.৬৯৬০.৬৭%৮.৯১
মোট ৬২০৬.৮৫ কোটি টাকা ৫১৯৯.৮০ কোটি টাকা

বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন থেকে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৩৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছেন বিদেশী উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা।কোম্পানিটির ঘোষণা করা ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ৯০ শতাংশই বিদেশী উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা নিয়ে গেছেন।

বিজনেস আওয়ার/১৭ নভেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দেশে ডলার সংকট : শেয়ারবাজার থেকে বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার কোটি

পোস্ট হয়েছে : ১২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২

বৈশ্বিক মন্দাসহ নানা ইস্যুতে দেশে এখন ডলার সংকট চলছে। যা লাঘবে আমদানি নির্ভর বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া বন্ধ এবং বিলাসী পণ্য আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজারের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ ডলার আকারে বিদেশে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে আবারও এমনটি হওয়ার পথে রয়েছে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও দেশের বর্তমান অবস্থায় কিভাবে কম পাঠানো যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেটা নগদের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমেও হতে পারে।

দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশীদের ১৩টি বহূজাতিক কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোতে বিদেশীদের বা উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা বেশি। যেগুলোর প্রতিটিই নিয়মিত বড় লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে মালিকানা বেশি থাকায় অধিকাংশ লভ্যাংশ বিদেশে চলে যায়। যা ডলারের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

কিন্তু দেশে বর্তমানে ডলার সংকট চলছে। ফলে আগের ন্যায় আমদানি নির্ভর বা ডলার প্রয়োজন হয়, এমন সবকিছু করা যাচ্ছে না। এজন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকার ডলার বিদেশে পাঠানোরোধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৩টি বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ বছরে ৬ হাজার ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরমধ্যে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাই বা বিদেশীরা পেয়েছেন ৫ হাজার ১৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার। যা সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারদের দেশে ডলারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

বহূজাতিক ১৩ কোম্পানি ছাড়াও বিদেশীদের কুইন সাউথ টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, হা-ওয়েল টেক্সটাইল ও রিং সাইনের মতো কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। যেগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার কারনেও ডলার বিদেশে যায়।

সেই একই পরিস্থিতি দেশের ডলার সংকটের মধ্যে আবারও তৈরী হতে যাচ্ছে। সামনে কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হবে। এছাড়া যেকোন সময় অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগতো রয়েছেই।

এ বিষয়ে এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বিদেশীরা লভ্যাংশ তাদের দেশে নিয়ে যাবে, এটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু যারা এই দেশে বিনিয়োগ করে উপকৃত হচ্ছেন, তাদেরও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করা দরকার। তারা এই মুহূর্তে নগদ লভ্যাংশ কমিয়ে দিয়ে ডলার সংকটরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া বোনাস দেওয়ার সুযোগতো রয়েছেই। বহূজাতিক কোম্পানির বোনাসের অনেক চাহিদা শেয়ারবাজারে আছে। 

একই বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের লভ্যাংশ বিদেশে নিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে বিএসইসির বাধাঁ দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। তবে দেশের বর্তমান অবস্থায় ওইসব কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা নগদ লভ্যাংশের চেয়ে পূণ:বিনিয়োগ বা বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারে। এতে করে শেয়ারবাজার এবং দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

নিম্নে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ বছরে ঘোষণাকৃত লভ্যাংশের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

বহূজাতিক কোম্পানির নামলভ্যাংশের হারলভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানাউদ্যোক্তা/পরিচালকদের লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা)
গ্রামীণফোন২৫০%৩৩৭৫.৭৫৯০%৩০৩৮.১৮
ব্রিটিশ আমেরিকান২৭৫%১৪৮৫৭২.৯১%১০৮২.৭১
রবি আজিয়াটা৫%২৬১.৯০৯০%২৩৫.৭১
ম্যারিকো বাংলাদেশ৮০০%২৫২৯০%২২৬.৮০
লাফার্জহোলসিম২৫%২৯০.৩৪৬৪.১৫%১৮৬.২৫
বার্জার পেইন্টস৪০০%১৮৫.৫১৯৫%১৭৬.২৩
রেকিট বেনকিজার১৬৫০%৭৭.৯৬৮২.৯৬%৬৪.৬৮
লিন্ডে বাংলাদেশ৫৫০%৮৩.৭০৬০%৫০.২২
ইউনিলিভার কনজিউমার৪৪০%৫৩৮৬.৯৬%৪৬.০৮
আরএকে সিরামিকস১২.৫০%৫৩.৫০৭২.০৮%৩৮.৫৬
সিঙ্গার বাংলাদেশ৬০%৫৯.৮২৫৭%৩৫.৮৯
বাটা সু১০০% নগদ১৩.৬৮৭০%৯.৫৮
হাউডেলবার্গ সিমেন্ট২৬%১৪.৬৯৬০.৬৭%৮.৯১
মোট ৬২০৬.৮৫ কোটি টাকা ৫১৯৯.৮০ কোটি টাকা

বহূজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন থেকে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ৩৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছেন বিদেশী উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা।কোম্পানিটির ঘোষণা করা ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ৯০ শতাংশই বিদেশী উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা নিয়ে গেছেন।

বিজনেস আওয়ার/১৭ নভেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: