ঢাকা , রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার আত্মহত্যাচেষ্টা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২
  • 110

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তৃতীয় দফায় অনশন করা প্রেমিকা বুধবার দিবাগত রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানা সংলগ্ন চরগাধাতলী মহল্লায়।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী এলাকার সঞ্জয় দত্ত নামের এক যুবকের বাড়ির ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ওই তরুণী সাথী মন্ডল (২০)। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন।

এরআগে বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন সাথী মন্ডল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তরুণী সেখানে অবস্থান করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিয়ের দাবিতে প্রেমিক সঞ্জয়ের বাড়িতে তিন দফায় অনশন করছেন ওই তরুণী।

সাথী মন্ডল গৌরনদীর পাশ্র্ববর্তী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালাইরচর গ্রামের নরেশ চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে। সঞ্জয় দত্ত গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী এলাকার সত্য নারায়ণ দত্তের ছেলে।

সাথী মন্ডল জানান, সাত মাস আগে ফেসবুকে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তার সঙ্গে সঞ্জয়ের প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যান সঞ্জয়।

কয়েকমাস আগে কালকিনিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান সঞ্জয়। এরপর তাকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে সেখানের একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শাখা-সিঁদুর পরিয়ে তাকে বিয়ে করেন। এরপর হঠাৎ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সঞ্জয়।

গত ১৯ অক্টোবর স্ত্রীর দাবি নিয়ে সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন সাথী মন্ডল। পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রি বিয়ের জন্য সঞ্জয়ের কাছে প্রস্তাব করেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বিয়ের হলফনামা চুক্তিপত্রে সই করেন সঞ্জয়।

সাক্ষী হিসেবে স্থানীয় ১৫ জন ব্যক্তি ওই চুক্তিপত্রে সই করেন। এরপর সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে ওই তরুণী চলে যান। চুক্তিপত্র অনুযায়ী বিয়ের দিন ছিল গত ১০ নভেম্বর।

সাথী মন্ডল অভিযোগ করে আরও বলেন, ওই বাড়ি থেকে চলে আসার পর তার সঙ্গে ফের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সঞ্জয়। এরপর পুনরায় সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন। এ সময় এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেয় সঞ্জয়ের পরিবার। সেই আশ্বাস পেয়ে তিনি পুনরায় বাড়ি ফিরে যান।

পরে এক সপ্তাহ পার হলেও সঞ্জয়ের পরিবার কোনো যোগাযোগ না করায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে তৃতীয়বারের মতো অনশন শুরু করেছেন। তবে এর আগেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন সঞ্জয়।

সাথী মন্ডল বলেন, ‘বিয়ের পর সঞ্জয় আমার সঙ্গে স্ত্রীর মতো মেলামেশা করেছেন। বিষয়টি এখন এলাকার অনেকেই জানেন। এখন আর কোথাও ফিরে যাওয়ার পথ নেই। সব পথই আমার বন্ধ। সঞ্জয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করায় আমি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছি।’

ওই তরুণীর ভাই বিপ্লব মন্ডল বলেন, তার বোনের সঙ্গে সঞ্জয় দত্ত বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্ক গড়েছেন। কয়েকবার বিয়ের তারিখ দিয়ে ঘুরিয়েছেন। এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। লোকজন নানা কথা বলছেন। এ অবস্থায় তার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। প্রতারণার জন্য তিনি সঞ্জয় দত্তের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

সঞ্জয় দত্ত এলাকায় না থাকায় এবং তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে গত ২০ অক্টোবর তার বাড়িতে ওই তরুণী অনশন করার সময় প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে সঞ্জয় দত্ত বলেছিলেন, ‘ওই তরুণীর সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে। সে হিসেবে বলা যায় ফেসবুক ফ্রেন্ড। তার সঙ্গে কথা হয়েছে ও দেখা হয়েছে। এর বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই। মাসখানেক আগে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তার আগে বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি সে গোপন করে গেছেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সে ব্ল্যাকমেল করতে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে নানা নাটক করছে।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, সঞ্জয় দত্তের বাড়িতে তরুণীর অভিভাবকদের ডেকে আনা হয়েছিল। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়। কিন্তু আজ বিকেলে সেখানে একই ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৭ নভেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার আত্মহত্যাচেষ্টা

পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে তৃতীয় দফায় অনশন করা প্রেমিকা বুধবার দিবাগত রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানা সংলগ্ন চরগাধাতলী মহল্লায়।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী এলাকার সঞ্জয় দত্ত নামের এক যুবকের বাড়ির ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান ওই তরুণী সাথী মন্ডল (২০)। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করেন।

এরআগে বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন সাথী মন্ডল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই তরুণী সেখানে অবস্থান করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিয়ের দাবিতে প্রেমিক সঞ্জয়ের বাড়িতে তিন দফায় অনশন করছেন ওই তরুণী।

সাথী মন্ডল গৌরনদীর পাশ্র্ববর্তী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালাইরচর গ্রামের নরেশ চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে। সঞ্জয় দত্ত গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী এলাকার সত্য নারায়ণ দত্তের ছেলে।

সাথী মন্ডল জানান, সাত মাস আগে ফেসবুকে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তার সঙ্গে সঞ্জয়ের প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যান সঞ্জয়।

কয়েকমাস আগে কালকিনিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান সঞ্জয়। এরপর তাকে ডেকে নেওয়া হয়। পরে সেখানের একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শাখা-সিঁদুর পরিয়ে তাকে বিয়ে করেন। এরপর হঠাৎ করে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সঞ্জয়।

গত ১৯ অক্টোবর স্ত্রীর দাবি নিয়ে সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন সাথী মন্ডল। পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রি বিয়ের জন্য সঞ্জয়ের কাছে প্রস্তাব করেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বিয়ের হলফনামা চুক্তিপত্রে সই করেন সঞ্জয়।

সাক্ষী হিসেবে স্থানীয় ১৫ জন ব্যক্তি ওই চুক্তিপত্রে সই করেন। এরপর সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে ওই তরুণী চলে যান। চুক্তিপত্র অনুযায়ী বিয়ের দিন ছিল গত ১০ নভেম্বর।

সাথী মন্ডল অভিযোগ করে আরও বলেন, ওই বাড়ি থেকে চলে আসার পর তার সঙ্গে ফের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সঞ্জয়। এরপর পুনরায় সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে অনশন শুরু করেন। এ সময় এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেয় সঞ্জয়ের পরিবার। সেই আশ্বাস পেয়ে তিনি পুনরায় বাড়ি ফিরে যান।

পরে এক সপ্তাহ পার হলেও সঞ্জয়ের পরিবার কোনো যোগাযোগ না করায় বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সঞ্জয়ের বাড়িতে এসে তৃতীয়বারের মতো অনশন শুরু করেছেন। তবে এর আগেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন সঞ্জয়।

সাথী মন্ডল বলেন, ‘বিয়ের পর সঞ্জয় আমার সঙ্গে স্ত্রীর মতো মেলামেশা করেছেন। বিষয়টি এখন এলাকার অনেকেই জানেন। এখন আর কোথাও ফিরে যাওয়ার পথ নেই। সব পথই আমার বন্ধ। সঞ্জয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করায় আমি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছি।’

ওই তরুণীর ভাই বিপ্লব মন্ডল বলেন, তার বোনের সঙ্গে সঞ্জয় দত্ত বিয়ের প্রলোভনে সম্পর্ক গড়েছেন। কয়েকবার বিয়ের তারিখ দিয়ে ঘুরিয়েছেন। এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। লোকজন নানা কথা বলছেন। এ অবস্থায় তার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। প্রতারণার জন্য তিনি সঞ্জয় দত্তের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

সঞ্জয় দত্ত এলাকায় না থাকায় এবং তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে গত ২০ অক্টোবর তার বাড়িতে ওই তরুণী অনশন করার সময় প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে সঞ্জয় দত্ত বলেছিলেন, ‘ওই তরুণীর সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে। সে হিসেবে বলা যায় ফেসবুক ফ্রেন্ড। তার সঙ্গে কথা হয়েছে ও দেখা হয়েছে। এর বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই। মাসখানেক আগে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তার আগে বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি সে গোপন করে গেছেন। এরপর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। এখন সে ব্ল্যাকমেল করতে বাড়িতে অবস্থান নিয়ে নানা নাটক করছে।’

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, সঞ্জয় দত্তের বাড়িতে তরুণীর অভিভাবকদের ডেকে আনা হয়েছিল। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ছেলেমেয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়। কিন্তু আজ বিকেলে সেখানে একই ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৭ নভেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: