বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ইনসাইডার ট্রেডিংসহ গুরুতর অনিয়মের বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ঘোষিত বোনাস লভ্যাংশে সম্মতি বাতিল করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পাবলিক ইস্যু রুলসও ভঙ্গ করেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। যা বিতরণে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিএসইসির কাছে অনুমতির আবেদন করে। কিন্তু বিএসইসি তাতে সম্মতি দেয়নি।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেদের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির জন্য অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাব প্রকাশের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে বর্তমান ও সাবেক উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ইস্যু ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের ব্যবস্থাপনায় শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানির শেয়ার কিনে পাবলিক ইস্যু রুলসের ব্যত্যয় করেছেন।
বে লিজিং কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ১ম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখায় ২.৭৫ টাকা। তবে ১২ মাসে বা ২০২১ সালে এই মুনাফাতো দূরের কথা লোকসান দেখায় ৯৯ পয়সা। অর্থাৎ ১ম ৯ মাসে ২.৭৫ টাকা মুনাফা হয়েছে শেষ ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) লোকসান হয়েছে ৩.৭৪ টাকা।
এমন অস্বাভাবিক ইপিএসের কারন অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। এলক্ষ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তিন সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন- উপ-পরিচালক কাজী মো: আল-ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক মো: কাউসার আলী ও মো: আতিকুর রহমান।
কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবের মধ্যে কোন জাগলারি হয়েছে কিনা, ইনসাইডার ট্রেডিং আছে কিনা, ওই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাবের কারনে শেয়ার দরে প্রভাব ও মার্কেট ম্যানুপুলেশন হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কমিশন।
এদিকে ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) ভঙ্গ করেছে বে লিজিংয়ের উদ্যোক্তা/পরিচালকরো। তাদের মালিকানাধীন বিএলআই ক্যাপিটালের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা বিডি থাই ফুড অ্যান্ড বেভারেজের শেয়ার আইপিও পূর্বে ধারন করে এই লঙ্ঘন করেছে।
পাবলিক ইস্যু রুলসে বলা আছে, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারন করতে পারবে না। যা ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই সংশোধনীতে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে না এবং শেয়ার ধারন করতে পারবে না।
দেখা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হওয়া বিডি থাই ফুডকে শেয়ারবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড। যার হোল্ডিং কোম্পানি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। অন্যভাবে বললে, বে লিজিংয়ের সাবসিডিয়ারি বা অধীনস্থ কোম্পানি বিএলআই ক্যাপিটাল। এই বে লিজিং, বিএলআই ক্যাপিটাল ও সাউথইস্ট ব্যাংকের কিছু পরিচালকের কমন শেয়ার ধারন রয়েছে। যারা আবার বিডি থাই ফুডেরও শেয়ার ধারন করেছে। এরমধ্য দিয়েই শেয়ারবাজারে এসেছে বিডি থাই ফুড।
বিডি থাই ফুডে আইপিও পূর্ব বা প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছেন- ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান বিএলআই ক্যাপিটালের পরিচালক হূমায়ন কবির, তার ভাই আয়নুল কবির, ভাতিজা আদনান কবির, সাউথইস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবিরের শ্যালক মফিজুর রহমান ও সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস। যাদের শেয়ার ৩ বছর লক-ইন থাকবে।
ওই ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিডি থাই ফুডের ১ লাখ শেয়ার ড. হূমায়ুন কবির, ১ লাখ শেয়ার আয়নুল কবির, ১ লাখ শেয়ার আদনান কবির, ১৫ লাখ শেয়ার মফিজুর রহমান, ৬২ লাখ শেয়ার সাউথইস্ট ব্যাংক ও ৩২ লাখ শেয়ার সাউথইস্ট ব্যাংক সার্ভিসেস ধারন করে আসছে। আর তাদেরই নেতৃত্বাধীন বা সম্পৃক্ত বিএলআই ক্যাপিটাল ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করেছে বিডি থাই ফুডের।
বিজনেস আওয়ার/০১ ডিসেম্বর, ২০২২/আরএ