বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যই সবচেয়ে উপকারী। যারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশংসা করেন। আল্লাহ তাআলা পরম করুণাময় ও দয়াবান। কিন্তু বান্দার কিছু গুরুতর অপরাধ যেমন কুফুরি কথা, মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া, মুমিনদের হত্যা করা, মুরতাদ হওয়া, দোয়া না করা, চতুষ্পদ জন্তুর উপাসনা বা শিরক করা ইত্যাদি কারণে তিনি ভীষণ রাগ করেন। তাই মহান আল্লাহর ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকতে সেসব মারাত্মক গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।
একইসঙ্গে তাঁর কাছে আন্তরিক তওবা করতে হবে। আরও কিছু নেক আমলের কারণে আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয় বলে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—
মানুষের ওপর রাগ না করা
আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় আমল হচ্ছে মানুষের ওপর রাগান্বিত হওয়া পরিহার করা। এটি অনেক বড় গুণ। পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় এই গুণটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। প্রিয়নবী (স.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)
গোপনে সদকা করা
গোপন সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় গোপন সদকা রবের ক্রোধকে প্রশমিত করে’ (তাবারানি: ১০১৮; তারগিব: ৮৮৮)
মা-বাবাকে সন্তুষ্ট করা
মা-বাবাকে দুঃখ দিলে বা ব্যথা দিলে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, আর তাদের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। তাই যেভাবেই হোক মা-বাবাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মা-বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি: ১৮৯৯)
বেশি বেশি দোয়া করা
আল্লাহর অসন্তুষ্টি দূর করে দোয়া। কেননা আল্লাহর কাছে না চাওয়ার অর্থ নিজেকে স্বনির্ভর দাবি করা। এটি অনেকটা শিরকের নামান্তর। যারা দোয়া করে না এমন মানুষের প্রতি আল্লাহ খুবই অসন্তুষ্ট হন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহকে ডাকে না আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩) সুতরাং বান্দা কায়মনোবাক্যে দোয়া করলে আল্লাহর রাগ কমে যায়। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)
মানুষকে দয়া করা
মহান আল্লাহ সেসব বান্দাদের দয়া না করে পারেন না, যারা অপরের প্রতি দয়াশীল ও হিতাকাঙ্ক্ষী। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা জমিনে যারা বসবাস করছে তাদের প্রতি দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪৯৪১)
তাই আল্লাহর রাগ প্রশমনে মানুষের প্রতি দয়া করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুহাদ্দিসরা বলেন, আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের সহজ উপায় হলো সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়ার্দ্র আচরণ করা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা। সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও অনুগ্রহ মহান স্রষ্টা আল্লাহর ভালোবাসা ও অনুগ্রহকে ত্বরান্বিত করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত ইহসানকারীদের (অনুগ্রহশীল) নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ: ৫৬)
বিশেষ দোয়া পাঠ
আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচাতে প্রিয়নবী (স.) প্রিয় উম্মতকে বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো— اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নি‘মাতিকা ওয়া তাহবিলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামি‘য়ি সাখাতিকা’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আপনার নিয়ামতের বিলুপ্তি, আপনার অনুকম্পার পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সমস্ত ক্রোধ থেকে।’ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিভিন্ন দোয়ার মধ্যে এটি অন্যতম। (আবু দাউদ: ১৫৪৫)
উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলার বিশেষ দুই সিফাত বা গুণের নাম রহমান ও রাহিম। অর্থাৎ তিনি ভীষণ দয়ালু। তাই তিনি চান বান্দাকে ক্ষমা করতে, বান্দার ওপর রাগ না করতে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মাখলুকাত (সৃষ্টিজগত) সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একটি কিতাব লিখলেন, যা আরশের উপর সংরক্ষিত আছে। এতে আছে, আমার রহমত আমার রাগকে প্রশমিত করেছে।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘আমার রাগের উপর (রহমত) জয়ী হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মেশকাত: ২৩৬৪)
অতএব বান্দার উচিত- মহান দয়ালু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করা এবং তাঁর রাগ প্রশমনের জন্য উল্লেখিত আমলগুলো করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর ক্রোধ থেকে বাঁচতে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিজনেস আওয়ার/০৫ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ