রেজোয়ান আহমেদ : গত ৪ বছরে প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলো ইস্যু মূল্যের তুলনায় ৩ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ১টি কোম্পানিও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তারপরেও কোম্পানিগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করবে। কিন্তু একইসময়ের অভিহিত মূল্যের দুই-একটি কোম্পানি ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েও ‘বি’ ক্যটাগরিতে নেমে যাবে।
নিয়ম অনুযায়ি, ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান পায়। আর ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি ঠাই পায় ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। এছাড়া লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত হয়। এই হিসাব গণনায় সব ধরনের কোম্পানির জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যেকে (১০ টাকা) বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা দরে ইস্যু করা কোম্পানি এবং ৮৫ টাকা করে ইস্যু করা কোম্পানিকে একইভাবে বিবেচনা করা হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানি থেকেও যদি বিনিয়োগকারীরা অভিহিত মূল্যের কোম্পানির মতো লভ্যাংশ পায়, তাহলে বুক বিল্ডিংয়ে শেয়ারবাজারে আসার দরকার কি? যদি প্রিমিয়ামের বিপরীতে রিটার্ন নাই আসে, তাহলে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়াই শ্রেয়। তবে ইস্যু মূল্যের লভ্যাংশের উপরে ক্যাটাগরি নির্ধারনে সুফল আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।
ব্যবসায়িক পারফরমেন্স ভালো দেখিয়ে গত ৪ বছরে বুক বিল্ডিংয়ে ৬টি কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলো গড়ে ৬০.৬৭ টাকা করে প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করেছে। একইসময়ে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে (১০ টাকা) তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৬ কোম্পানি। কিন্তু ক্যাটাগরি নির্ধারনের জন্য উভয় ক্ষেত্রে ১০ টাকার উপরে ঘোষিত লভ্যাংশকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সব ধরনের কোম্পানির লভ্যাংশে অভিহিত মূল্য বিবেচনায় নেওয়ায়, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে না। ইস্যু মূল্য বিবেচনায় ক্যাটাগরি নির্ধারন করা হলে, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলোর জন্য ‘এ’ ক্যাটাগরি ধরে রাখা কঠিন হবে। তবে প্রিমিয়াম নেওয়া কিছু কোম্পানির মধ্যে ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়বে।
দেখা গেছে, বুক বিল্ডিংয়ের কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় গড়ে ২.৮০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেখানে ১টি কোম্পানির পর্ষদও ইস্যু মূল্যের তুলনায় ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। তারপরেও সবগুলো ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকবে।
অপরদিকে ফিক্সড প্রাইস মেথডে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ইস্যু মূল্যের তুলনায় গড়ে ১৩.২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে সী পার্ল ও ইয়াকিন পলিমার সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা বুক বিল্ডিংয়ের যে কোন কোম্পানির তুলনায় বেশি। তারপরেও এ কোম্পানি দুটি ‘এ’ ক্যাটাগরির নিচের সাড়ি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামবে।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) চিত্র-
কোম্পানির নাম | কাট-অফ প্রাইস | অভিহিত মূল্যে লভ্যাংশ | কাট-অফ প্রাইসে লভ্যাংশ |
বসুন্ধরা পেপার মিলস | ৮০ | ১৫% | ১.৮৮% |
রানার অটোমোবাইলস | ৭৫ | ১৫% | ২% |
আমান কটন | ৪০ | ১০% | ২.৫০% |
আমরা নেটওয়ার্কস | ৩৯ | ১২% | ৩.০৮% |
এসকোয়্যার নিট | ৪৫ | ১৫% | ৩.৩৩% |
একমি ল্যাবরেটরিজ | ৮৫ | ৩৫% | ৪.১২% |
গড় | ৬০.৬৭ | ১৭% | ২.৮০% |
বসুন্ধরা পেপার প্রতিটি শেয়ার ৮০ টাকা দরে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করেছে। এই কোম্পানিটির পর্ষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায় অভিহিত মূল্য বিবেচনায় (১০ টাকা) ১৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১.৫০ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় ১.৮৮ শতাংশ। তারপরেও কোম্পানিটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকবে। তবে সী পার্ল ও ইয়াকিন পলিমার ইস্যু মূল্যের তুলনায় ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা সত্ত্বেও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে যাবে।
অভিহিত মূল্যে শেয়ারবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের (নগদ ও বোনাস) চিত্র-
কোম্পানির নাম | ইস্যু মূল্য | লভ্যাংশ |
ফরচুন সুজ | ১০ | ২০% |
জেনেক্স ইনফোসিস | ১০ | ২০% |
নাহি অ্যালুমিনিয়াম | ১০ | ১৫% |
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স | ১০ | ১২% |
ড্রাগণ সোয়েটার | ১০ | ১০% |
ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস | ১০ | ১২.৫০% |
বিবিএস কেবলস | ১০ | ২০% |
নূরানি ডাইং | ১০ | ১০% |
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ | ১০ | ১০% |
পেসিফিক ডেনিমস | ১০ | ১৪% |
কাট্টলি টেক্সটাইল | ১০ | ১২% |
ইন্দো-বাংলা | ১০ | ১১% |
সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস | ১০ | ১১% |
এমএল ডাইং | ১০ | ২০% |
ইয়াকিন পলিমার | ১০ | ৫% |
ভিএফএস থ্রেড | ১০ | ১৬% |
এসকে ট্রিমস | ১০ | ২০% |
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং | ১০ | ১০% |
অ্যাডভেন্ট ফার্মা | ১০ | ১২% |
কুইন সাউথ টেক্সটাইল | ১০ | ১৮% |
ইভিন্স টেক্সটাইল | ১০ | ১২% |
কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ | ১০ | ১২% |
সী পার্ল | ১০ | ৫% |
সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস | ১০ | ১২% |
নিউ লাইন ক্লোথিংস | ১০ | ১০% |
এসএস স্টিল | ১০ | ১৫% |
গড় | ১০ | ১৩.২৫% |
বিজনেস আওয়ার/২৭ নভেম্বর, ২০১৯/আরএ