ঢাকা , রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে বিষাক্ত মদপানে ৩১ জনের মৃত্যু

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • 69

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের সারান জেলায় বিষাক্ত মদ্যপানে অন্তত ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনায় আরও কয়েকজনকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে। খবর এএফপির

দেশটির পূর্বাঞ্চলের দরিদ্র এই রাজ্যের দুটি গ্রামে বিষাক্ত মদ্যপানে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে; যেখানে ২০১৬ সালে মদ বিক্রি এবং পান নিষিদ্ধ করা হয়। সেখানকার গরীব লোকজন তাদের আয়ের বেশিরভাগই মদ্যপানের পেছনে ব্যয় করছেন বলে নারীদের একাধিক গ্রুপ আন্দোলন করার পর রাজ্য সরকার ওই সময় আইন করে মদ নিষিদ্ধ করে।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে মদ্যপান ও বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। যে কারণে এসব রাজ্যে গোপনে কালোবাজারে নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরি সস্তা মদের কেনাবেচা হয়। আর এতে প্রত্যেক বছর দেশটিতে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে সারান জেলার কয়েকজন পুরুষ বিষাক্ত মদ্যপান করেন। এর পরপরই তারা বমি শুরু করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই দিন হাসপাতালে নেওয়ার পথে কয়েকজন মারা যান। বাকিরা বুধবার এবং বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে বিষাক্ত মদ্যপানের এই ঘটনায় প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বিহারের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় অবৈধ মদের দোকান বন্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।

কুমার আরও বলেন, এই ঘটনার পর গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। একই সঙ্গে এই ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সারান জেলার স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডাঃ গোপাল কৃষ্ণ বলেন, বুধবার বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ৫৫ জনকে আনা হয়েছিল।

বিহারের এই চিকিৎসক বলেছেন, কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারানো, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ঘাম এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পরপরই চারজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিহারের বিজেপি দলীয় নেতা সুশীল মোদি বলেছেন, ছয় বছর আগে বিহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিষাক্ত মদ্যপানের কারণে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বিরোধীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মদ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় নয়, বরং রাজ্যের নারীদের কান্নার প্রতিক্রিয়ায় জারি করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, যারা মদ পান করেন, তারা অবশ্যই মারা যাবেন। এর একটি উদাহরণ রয়েছে আমাদের।

ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিটস অ্যান্ড ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রত্যেক বছর প্রায় ৫০০ কোটি লিটার মদ পান করা হয়; যার প্রায় ৪০ শতাংশ তৈরি হয় অবৈধ উপায়ে। অবৈধ উপায়ে তৈরি মদের কার্যকারিতা বাড়াতে প্রায়ই এতে মিথানল মেশানো হয়। মিথানল সেবনের ফলে অন্ধত্ব, লিভারের ক্ষতি এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে।

২০২০ সালে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য পাঞ্জাবে ভেজাল মদ্যপানের ফলে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। গত জুলাইয়ে মদপানে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ৪২ জন প্রাণ হারান। একই ধরনের ঘটনায় গত বছর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়।

বিজনেস আওয়ার/১৫ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভারতে বিষাক্ত মদপানে ৩১ জনের মৃত্যু

পোস্ট হয়েছে : ০৭:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের সারান জেলায় বিষাক্ত মদ্যপানে অন্তত ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ঘটনায় আরও কয়েকজনকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে। খবর এএফপির

দেশটির পূর্বাঞ্চলের দরিদ্র এই রাজ্যের দুটি গ্রামে বিষাক্ত মদ্যপানে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে; যেখানে ২০১৬ সালে মদ বিক্রি এবং পান নিষিদ্ধ করা হয়। সেখানকার গরীব লোকজন তাদের আয়ের বেশিরভাগই মদ্যপানের পেছনে ব্যয় করছেন বলে নারীদের একাধিক গ্রুপ আন্দোলন করার পর রাজ্য সরকার ওই সময় আইন করে মদ নিষিদ্ধ করে।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে মদ্যপান ও বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। যে কারণে এসব রাজ্যে গোপনে কালোবাজারে নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরি সস্তা মদের কেনাবেচা হয়। আর এতে প্রত্যেক বছর দেশটিতে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে সারান জেলার কয়েকজন পুরুষ বিষাক্ত মদ্যপান করেন। এর পরপরই তারা বমি শুরু করেন। পরে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই দিন হাসপাতালে নেওয়ার পথে কয়েকজন মারা যান। বাকিরা বুধবার এবং বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তবে বিষাক্ত মদ্যপানের এই ঘটনায় প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বিহারের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় অবৈধ মদের দোকান বন্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।

কুমার আরও বলেন, এই ঘটনার পর গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। একই সঙ্গে এই ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সারান জেলার স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডাঃ গোপাল কৃষ্ণ বলেন, বুধবার বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ৫৫ জনকে আনা হয়েছিল।

বিহারের এই চিকিৎসক বলেছেন, কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারানো, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ঘাম এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পরপরই চারজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিহারের বিজেপি দলীয় নেতা সুশীল মোদি বলেছেন, ছয় বছর আগে বিহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিষাক্ত মদ্যপানের কারণে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বিরোধীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মদ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় নয়, বরং রাজ্যের নারীদের কান্নার প্রতিক্রিয়ায় জারি করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, যারা মদ পান করেন, তারা অবশ্যই মারা যাবেন। এর একটি উদাহরণ রয়েছে আমাদের।

ইন্টারন্যাশনাল স্পিরিটস অ্যান্ড ওয়াইন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রত্যেক বছর প্রায় ৫০০ কোটি লিটার মদ পান করা হয়; যার প্রায় ৪০ শতাংশ তৈরি হয় অবৈধ উপায়ে। অবৈধ উপায়ে তৈরি মদের কার্যকারিতা বাড়াতে প্রায়ই এতে মিথানল মেশানো হয়। মিথানল সেবনের ফলে অন্ধত্ব, লিভারের ক্ষতি এবং মৃত্যুও ঘটতে পারে।

২০২০ সালে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য পাঞ্জাবে ভেজাল মদ্যপানের ফলে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। গত জুলাইয়ে মদপানে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে ৪২ জন প্রাণ হারান। একই ধরনের ঘটনায় গত বছর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়।

বিজনেস আওয়ার/১৫ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: