বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ঋণ খেলাপি ঠেকাতে বড় ছাড় দিয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা (৫০ শতাংশ) ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করলেই খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে না।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ‘ঋণ শ্রেণীকরণ’ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারটির সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, অশ্রেণিকৃত মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ ত্রৈমাসিকের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণ বিরূপমাণে শ্রেণিকরণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ায় এর দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা এবং ঋণগ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজ করতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের অক্টোবর হতে ডিসেম্বর সময়কাল পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তিসমূহের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ চলতি ডিসেম্বরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলোর বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। এর আগে গত বছরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ২০২০ সালের পুরো সময়ে ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পান গ্রাহকরা।
সার্কুলারের মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়াদি ঋণসমূহের ২০২২ সালের এপ্রিল হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তি বা কিস্তিগুলোর অপরিশোধিত অংশ বিদ্যমান ঋণের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সমকিস্তিতে (মাসিক ও ত্রৈমাসিক) প্রদেয় হবে। তবে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশিষ্ট মেয়াদকালের সঙ্গে বর্ধিত ১ বছর সময়কে বিবেচনায় নিয়ে কিস্তি পুনর্নির্ধারণপূর্বক নতুন সূচি অনুযায়ী আদায় করা যাবে। এছাড়া আগে সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবৎকালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
বিজনেস আওয়ার/১৮ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ