ঢাকা , শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডোপ টেস্টের নমুনায় প্রস্রাবের বদলে ট্যাপের পানি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • 161

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রত্যাশী একজনের ডোপ টেস্টে জালিয়াতি ধরা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ডোপ টেস্টের নমুনায় প্রস্রাব না দিয়ে শিশিতে ট্যাপের পানি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন ওই প্যাথলজি ল্যাবে গড়ে শখানেক পেশাদার চালকের ডোপ টেস্ট করা হয়।

এর বাইরে সরকারিসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিতে যোগদানের আগে এখানে ডোপ টেস্ট করা হয়। মেশিনে এই টেস্ট করার আগে লিটমাস পেপার দিয়ে তা প্রকৃত ইউরিন (প্রস্রাব) কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। যদি প্রকৃত ইউরিন হয় তাহলে লিটমাস পেপারটি নীল হয়ে যাবে। যদি প্রকৃত ইউরিন না হয় তাহলে লিটমাস পেপারের রং অপরিবর্তিত থাকবে। ১০ দিন আগে পেশাদার চালকের নিবন্ধনপ্রত্যাশী এক ব্যক্তির ইউরিন লিটমাস পেপারে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় নীল বর্ণ হয়নি। লিটমাস পেপারের রং অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব ইনচার্জ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি, বাথরুমে ঢুকে পেশাদার চালকের নিবন্ধনপ্রত্যাশী এক ব্যক্তি তার প্রস্রাবের নমুনা শিশিতে না ভরে ট্যাপ থেকে পানি ভরে জমা দেন। কিন্তু লিটমাস পেপার দিয়ে পরীক্ষা করতেই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ফাইল তিনি নিয়ে গেছেন। তার টেস্ট হবে না মর্মে আমরা মতামত দিয়েছি। বিআরটিএ থেকে ফাইল পাঠালে আমরা পরীক্ষাটি করব। কিন্তু গত ১০ দিনেও ওই ব্যক্তি আর এখানে আসেননি।’

শুভাশীষ বড়ুয়া আরো বলেন, ‘এখন আমরা ডোপ টেস্ট করার আগে স্যাম্পল সংগ্রহের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছি। বাথরুমের পানির ট্যাপ বন্ধ রাখা হয়, যাতে কেউ আর কোনো ধরনের জালিয়াতি করতে না পারে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডোপ টেস্ট করা শুরু হলে হাসপাতালের পরিচালক স্যার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এ পরীক্ষা করতে। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবরেটরি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু ওই জালিয়তি নয়, পেশাদার চালকের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় পেশাদার চালকের কেউ কেউ অপেশাদার হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চেষ্টা করছেন। কারণ অপেশাদারের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করাতে হয় না। পেশাদার চালকদের মধ্যে যারা মাদকগ্রহীতা, তারা এই টেস্ট এড়ানোর জন্য অপেশাদার হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে ঝুঁকছেন। ’

বিষয়টি জানতে চেয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের একাধিক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও কেউ ধরেননি। তবে এক কর্মচারী জানান, যারা পেশাদার চালক হিসেবে আগের কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা দেবেন (নতুন লাইন্সেস কিংবা নবায়ন) তাদের পক্ষে অপেশাদার চালক হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার সুযোগ নেই।

বিজনেস আওয়ার/১৯ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ডোপ টেস্টের নমুনায় প্রস্রাবের বদলে ট্যাপের পানি

পোস্ট হয়েছে : ০৫:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রত্যাশী একজনের ডোপ টেস্টে জালিয়াতি ধরা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ডোপ টেস্টের নমুনায় প্রস্রাব না দিয়ে শিশিতে ট্যাপের পানি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন ওই প্যাথলজি ল্যাবে গড়ে শখানেক পেশাদার চালকের ডোপ টেস্ট করা হয়।

এর বাইরে সরকারিসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিতে যোগদানের আগে এখানে ডোপ টেস্ট করা হয়। মেশিনে এই টেস্ট করার আগে লিটমাস পেপার দিয়ে তা প্রকৃত ইউরিন (প্রস্রাব) কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। যদি প্রকৃত ইউরিন হয় তাহলে লিটমাস পেপারটি নীল হয়ে যাবে। যদি প্রকৃত ইউরিন না হয় তাহলে লিটমাস পেপারের রং অপরিবর্তিত থাকবে। ১০ দিন আগে পেশাদার চালকের নিবন্ধনপ্রত্যাশী এক ব্যক্তির ইউরিন লিটমাস পেপারে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় নীল বর্ণ হয়নি। লিটমাস পেপারের রং অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব ইনচার্জ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি, বাথরুমে ঢুকে পেশাদার চালকের নিবন্ধনপ্রত্যাশী এক ব্যক্তি তার প্রস্রাবের নমুনা শিশিতে না ভরে ট্যাপ থেকে পানি ভরে জমা দেন। কিন্তু লিটমাস পেপার দিয়ে পরীক্ষা করতেই জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ফাইল তিনি নিয়ে গেছেন। তার টেস্ট হবে না মর্মে আমরা মতামত দিয়েছি। বিআরটিএ থেকে ফাইল পাঠালে আমরা পরীক্ষাটি করব। কিন্তু গত ১০ দিনেও ওই ব্যক্তি আর এখানে আসেননি।’

শুভাশীষ বড়ুয়া আরো বলেন, ‘এখন আমরা ডোপ টেস্ট করার আগে স্যাম্পল সংগ্রহের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করছি। বাথরুমের পানির ট্যাপ বন্ধ রাখা হয়, যাতে কেউ আর কোনো ধরনের জালিয়াতি করতে না পারে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডোপ টেস্ট করা শুরু হলে হাসপাতালের পরিচালক স্যার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে এ পরীক্ষা করতে। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবরেটরি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু ওই জালিয়তি নয়, পেশাদার চালকের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় পেশাদার চালকের কেউ কেউ অপেশাদার হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে চেষ্টা করছেন। কারণ অপেশাদারের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করাতে হয় না। পেশাদার চালকদের মধ্যে যারা মাদকগ্রহীতা, তারা এই টেস্ট এড়ানোর জন্য অপেশাদার হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে ঝুঁকছেন। ’

বিষয়টি জানতে চেয়ে বিআরটিএ চট্টগ্রাম সার্কেলের একাধিক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও কেউ ধরেননি। তবে এক কর্মচারী জানান, যারা পেশাদার চালক হিসেবে আগের কাগজপত্র বিআরটিএতে জমা দেবেন (নতুন লাইন্সেস কিংবা নবায়ন) তাদের পক্ষে অপেশাদার চালক হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার সুযোগ নেই।

বিজনেস আওয়ার/১৯ ডিসেম্বর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: