বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: একদিকে করোনা মহামারী আর অন্যদিকে বন্যা! দেশে এমন দুই মহা সঙ্কটের মধ্যে চালের দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে। গত ২০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা করে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আর মিল মালিকদের দাবি ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দামও বাড়াতে হচ্ছে।
চালের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে মিরপুর-১ নম্বর বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা হারুন বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। এই কয়দিনে বস্তায় (৫০ কেজি) অন্তত দেড়শ টাকা বেড়েছে। গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে চালের দাম বস্তায় অন্তত ৩০০ টাকা করে বেড়েছে।
তিনি বলেন, ধানের ফলন ভালো হওয়ার পরেও কেন যে চালের দাম বাড়ছে তাতো বুঝে আসছেনা। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু বাজারে এখন পর্যন্ত কোনো আমদানি করা চাল আসেনি। বর্তমানে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ২৫০০ টাকা থেকে ২৬০০, নাজির ২৫৫০ টাকা থেকে ২৬০০, পাইজাম ও কাটারি ২৩০০, আটাশ ২১৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগে মুদি দোকানি বলেন, সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে চালের দাম। বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা, বিআর আটাশ ৫২ টাকা এবং মিনিকেট ৬১ টাকায় করে বিক্রি করছি।
তবে সঙ্কটকালীন এই সময়ে সুগন্ধি চালের দাম বেশ খানিকটা কমে এসেছে। সুগন্ধি চালের বস্তা (৫০ কেজি) ৩৩০০ টাকা থেকে ৩৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাস লকডাউন পরিস্থিতিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘটা বন্ধ থাকায় সুগন্ধি চালের দাম পড়ে গেছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে নওগাঁ জেলা চালকল সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের শেষের দিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। সরকার চাল আমদানির পথ সুগম করলে এর প্রভাবে দাম কিছুদিনের জন্য স্থির ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ চাল আমদানি করেছে বলে খবর পায়নি। সে কারণ গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও চাল ও ধানের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)এর হিসাব অনুযায়ী, গতকাল শনিবার নাজিরশাইল ও মিনিকেটের মতো সরু চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা থেকে ৬৪ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা থেকে ৬২ টাকায়। আর গতবছর একই সময়ে ৪৭ টাকা থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এসব চাল, অর্থাৎ এবছর চালের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
মোটা চাল হিসাবে পরিচিতি স্বর্ণা ও গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও লতা) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৪৪ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চাল গতবছরের একই সময়ের তুলনায় আট শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/২৩ আগস্ট, ২০২০/এ