ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার মৃত্যুর ১৯ দিনের ব্যবধানে চলে গেলেন মা’ও

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩
  • 45

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মাত্র দুই মাস বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হলো শিশুটি। শুধু এতিমই হয়নি শিশুটি, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ভবিষ্যতও। বাবা-মাকে হারিয়ে দিশেহারা শিশুটির ৪ বছর এবং দেড় বছর বয়সী অবুঝ দুই বোনও।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের উত্তর সর্দারপাড়া গ্রামে।

শিশুটির বাবা একরামুল হক (৩৫)। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। বিয়ের ৬ বছরে দুই মেয়ের পর ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল ছেলে। এতে একদিকে তাদের আনন্দ যেমন ছিলো সীমাহীন, তেমনি স্বপ্নও ছিলো পাহাড়সম। তবে সব কিছুরই ছন্দপতন ঘটেছে এক সড়ক দুর্ঘটনায়।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ট্রাকের চাপায় নিহত হন একরামুল। এতে ৪০ দিন বয়সেই বাবা হারায় তার নবজাতক শিশুটি। স্বামীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি লাবনী বেগমও। স্বামীর শোকে কাতর হয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন তিনি। মুর্ছা যেতেন মাঝে মধ্যেই। এভাবেই কেটে যায় ১৮ দিন। চলতি মাসের ৫ তারিখ অসুস্থ হয়ে পড়েন লাবনী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন শিশুসন্তান রেখেই পরকালে পাড়ি জমান তিনি। এতে নবজাতক শিশুটি ৫৮ দিন বয়সেই বাবার পর মাকেও হারায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর একরামুলের নবজাতক শিশুর বয়স ছিলো একমাস ১০ দিন। সেদিন ছেলের আকীকা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন একরামুল। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে একটি ট্রাকের চাপায় মৃত্যু হয় তার। ১৯ দিন পার না হতেই মারা যান তার স্ত্রীও। এ অবস্থায় একরামুলের শিশু সন্তানসহ মেয়ে নুরে জান্নাত এবং উম্মে সুরাইয়া এখন বড় ভাই আশরাফুলের কাছে থাকছেন।

একরামুলের বাবা নাসির উদ্দীন বিলাপ করে বলেন, ‘১৯ দিনের ব্যবধানে ছেলে এবং ছেলের বউকে হারালাম। আমার ছোট ছোট নাতি-নাতনিরা বুঝতে শেখার আগেই এতিম হলো। এই শোক আমি কিভাবে সইবো।’

নিহত একরামুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা ছিলো আকীকা করে ছেলের নাম রাখবে। তার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। এই ছোট বাচ্চাগুলোর এখন কি হবে- বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।’

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘মাত্র ১৯ দিনের ব্যবধানে দুইমাস বয়সী শিশুসহ ছোট ছোট তিনটি সন্তান রেখে একটি দম্পতির মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। ওই শিশুদের দিকে আমার সুদৃষ্টি সবসময় থাকবে।’

বিজনেস আওয়ার/১১ জানুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাবার মৃত্যুর ১৯ দিনের ব্যবধানে চলে গেলেন মা’ও

পোস্ট হয়েছে : ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মাত্র দুই মাস বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হলো শিশুটি। শুধু এতিমই হয়নি শিশুটি, অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার ভবিষ্যতও। বাবা-মাকে হারিয়ে দিশেহারা শিশুটির ৪ বছর এবং দেড় বছর বয়সী অবুঝ দুই বোনও।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের উত্তর সর্দারপাড়া গ্রামে।

শিশুটির বাবা একরামুল হক (৩৫)। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। বিয়ের ৬ বছরে দুই মেয়ের পর ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছিল ছেলে। এতে একদিকে তাদের আনন্দ যেমন ছিলো সীমাহীন, তেমনি স্বপ্নও ছিলো পাহাড়সম। তবে সব কিছুরই ছন্দপতন ঘটেছে এক সড়ক দুর্ঘটনায়।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ট্রাকের চাপায় নিহত হন একরামুল। এতে ৪০ দিন বয়সেই বাবা হারায় তার নবজাতক শিশুটি। স্বামীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি লাবনী বেগমও। স্বামীর শোকে কাতর হয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন তিনি। মুর্ছা যেতেন মাঝে মধ্যেই। এভাবেই কেটে যায় ১৮ দিন। চলতি মাসের ৫ তারিখ অসুস্থ হয়ে পড়েন লাবনী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন শিশুসন্তান রেখেই পরকালে পাড়ি জমান তিনি। এতে নবজাতক শিশুটি ৫৮ দিন বয়সেই বাবার পর মাকেও হারায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর একরামুলের নবজাতক শিশুর বয়স ছিলো একমাস ১০ দিন। সেদিন ছেলের আকীকা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন একরামুল। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে একটি ট্রাকের চাপায় মৃত্যু হয় তার। ১৯ দিন পার না হতেই মারা যান তার স্ত্রীও। এ অবস্থায় একরামুলের শিশু সন্তানসহ মেয়ে নুরে জান্নাত এবং উম্মে সুরাইয়া এখন বড় ভাই আশরাফুলের কাছে থাকছেন।

একরামুলের বাবা নাসির উদ্দীন বিলাপ করে বলেন, ‘১৯ দিনের ব্যবধানে ছেলে এবং ছেলের বউকে হারালাম। আমার ছোট ছোট নাতি-নাতনিরা বুঝতে শেখার আগেই এতিম হলো। এই শোক আমি কিভাবে সইবো।’

নিহত একরামুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা ছিলো আকীকা করে ছেলের নাম রাখবে। তার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। এই ছোট বাচ্চাগুলোর এখন কি হবে- বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।’

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘মাত্র ১৯ দিনের ব্যবধানে দুইমাস বয়সী শিশুসহ ছোট ছোট তিনটি সন্তান রেখে একটি দম্পতির মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। ওই শিশুদের দিকে আমার সুদৃষ্টি সবসময় থাকবে।’

বিজনেস আওয়ার/১১ জানুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: