ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গেম্বলিং ফরচুন সুজে ধরা গেম্বলার সোনালি পেপার

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে এখন কারসাজিকাররা অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেলেও কিছুদিন আগেও ছিল সক্রিয়। যেখানে সবচেয়ে বেশি নাম আলোচিত হতো আবুল খায়ের হিরুর নাম। যার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যিনি সোনালি পেপার থেকেসহ বিভিন্নভাবে অর্থায়নের মাধ্যমে হিরুর কারসাজি করা শেয়ারে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। তবে সেই ইউনুসের সোনালি পেপারই ধরা খেয়েছে হিরুর অন্যতম গেম্বলিং আইটেম ফরচুন সুজের শেয়ারে।

হিরুর গেম্বলিং আইটেম ফরচুন সুজে বিনিয়োগ করে বড় লোকসানে পড়েছে সোনালি পেপার। ওই কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করার কারনেই মূলত সোনালি পেপারের ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ২১-মার্চ ২২) ১৪.৭২ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) পুরো অর্থবছরে কমে আসে ৬.০৩ টাকায়।

দেখা গেছে, সোনালি পেপারের দুটি বিও হিসাবের মধ্যে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকে ১৮ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ কোটি ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা বা ৯৯.৯৫ শতাংশই ফরচুন সুজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইবিএল সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার টাকার মধ্যে ৮ কোটি ৫৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা বা ৪৫.৮৬ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে ফরচুন সুজে।

ফরচুন সুজে দুই বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগ করা মোট ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার বাজার দর গত ৩০ জুন দাঁড়ায় ১৯ কোটি ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। এতে করে সোনালি পেপারের আনরিয়েলাইজড লোকসান হয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ ২১ হাজার টাকা বা ২৯ শতাংশ।

সোনালি পেপার থেকে ফরচুন সুজের ২০ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৩টি শেয়ার কেনা হয়। এতে প্রতিটি শেয়ারে কস্ট হয় ১৩০.৫০ টাকা করে। যার বাজার দর গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষদিন নেমে আসে ৯৩.৩০ টাকায়। এ হিসাবে ফরচুনে সুজের প্রতিটি শেয়ারে সোনালি পেপার লোকসান করে ৩৭.২০ টাকা বা ২৮.৫১ শতাংশ। যে শেয়ারটি গত বছরের ৩১ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকে ৭৯.৫০ টাকায় আটকে আছে।

সোনালি পেপার থেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে ফরচুন সুজের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে যেমন ভূমিকা রেখেছিল। একইভাবে ফরচুন সুজ থেকেও সোনালি পেপারে বিনিয়োগ করে কোম্পানিটির দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা হয়। অনেকটা মালিকপক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির দর বৃদ্ধি ঘটায়। এতে করে শেয়ারবাজারের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, একইভাবে সাধারন বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

আরও পড়ুন…..
ফরচুন সুজও কোটি কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে গেম্বলিং আইটেমে

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, দেখেন শুরুতে একজন ব্যক্তি কয়েকজনের ফান্ড নিয়ে শেয়ারবাজারে কোম্পানি ধরে ধরে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি বলেন বা কারসাজি বলেন, সেটা শুরু করে দিল। পরে বিভিন্ন কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে তিনি সেই দলে নিয়ে গেলেন। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোও তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তারই নির্দেশিত বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে অনেকটা ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে আবার ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘঠানো হয়। অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করে। যা দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথে বাধাঁ।

বিজনেস আওয়ার/১২ জানুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

গেম্বলিং ফরচুন সুজে ধরা গেম্বলার সোনালি পেপার

পোস্ট হয়েছে : ০১:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে এখন কারসাজিকাররা অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেলেও কিছুদিন আগেও ছিল সক্রিয়। যেখানে সবচেয়ে বেশি নাম আলোচিত হতো আবুল খায়ের হিরুর নাম। যার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। যিনি সোনালি পেপার থেকেসহ বিভিন্নভাবে অর্থায়নের মাধ্যমে হিরুর কারসাজি করা শেয়ারে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। তবে সেই ইউনুসের সোনালি পেপারই ধরা খেয়েছে হিরুর অন্যতম গেম্বলিং আইটেম ফরচুন সুজের শেয়ারে।

হিরুর গেম্বলিং আইটেম ফরচুন সুজে বিনিয়োগ করে বড় লোকসানে পড়েছে সোনালি পেপার। ওই কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করার কারনেই মূলত সোনালি পেপারের ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ২১-মার্চ ২২) ১৪.৭২ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) পুরো অর্থবছরে কমে আসে ৬.০৩ টাকায়।

দেখা গেছে, সোনালি পেপারের দুটি বিও হিসাবের মধ্যে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকে ১৮ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ কোটি ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা বা ৯৯.৯৫ শতাংশই ফরচুন সুজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইবিএল সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার টাকার মধ্যে ৮ কোটি ৫৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা বা ৪৫.৮৬ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে ফরচুন সুজে।

ফরচুন সুজে দুই বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগ করা মোট ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার বাজার দর গত ৩০ জুন দাঁড়ায় ১৯ কোটি ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। এতে করে সোনালি পেপারের আনরিয়েলাইজড লোকসান হয় ৭ কোটি ৫৯ লাখ ২১ হাজার টাকা বা ২৯ শতাংশ।

সোনালি পেপার থেকে ফরচুন সুজের ২০ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৩টি শেয়ার কেনা হয়। এতে প্রতিটি শেয়ারে কস্ট হয় ১৩০.৫০ টাকা করে। যার বাজার দর গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষদিন নেমে আসে ৯৩.৩০ টাকায়। এ হিসাবে ফরচুনে সুজের প্রতিটি শেয়ারে সোনালি পেপার লোকসান করে ৩৭.২০ টাকা বা ২৮.৫১ শতাংশ। যে শেয়ারটি গত বছরের ৩১ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকে ৭৯.৫০ টাকায় আটকে আছে।

সোনালি পেপার থেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে ফরচুন সুজের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে যেমন ভূমিকা রেখেছিল। একইভাবে ফরচুন সুজ থেকেও সোনালি পেপারে বিনিয়োগ করে কোম্পানিটির দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা হয়। অনেকটা মালিকপক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির দর বৃদ্ধি ঘটায়। এতে করে শেয়ারবাজারের পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, একইভাবে সাধারন বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

আরও পড়ুন…..
ফরচুন সুজও কোটি কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে গেম্বলিং আইটেমে

এসব বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, দেখেন শুরুতে একজন ব্যক্তি কয়েকজনের ফান্ড নিয়ে শেয়ারবাজারে কোম্পানি ধরে ধরে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি বলেন বা কারসাজি বলেন, সেটা শুরু করে দিল। পরে বিভিন্ন কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে তিনি সেই দলে নিয়ে গেলেন। পরবর্তীতে কোম্পানিগুলোও তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তারই নির্দেশিত বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে অনেকটা ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে আবার ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘঠানো হয়। অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করে। যা দীর্ঘমেয়াদি শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথে বাধাঁ।

বিজনেস আওয়ার/১২ জানুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: