ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাওয়ার গ্রীডের সম্পদে গরমিল

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদে গরমিল খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীডের ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবে ১৫ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ টাকার স্থায়ী সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। তবে কোম্পানিটির এই সম্পত্তির রেজিস্টারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নেই। এছাড়া স্বশরীরে ওইসব সম্পত্তির অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি।

এই বিশাল পরিমাণ স্থায়ী সম্পদ থাকলেও পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করে না। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৬ লংঘন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেস (ব্যবহার উপযোগি করার জন্য প্রক্রিয়াধীন) হিসেবে ২১ হাজার ৭৬৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে ব্যবহার উপযোগি হয়ে গেছে এমন ১০টি প্রজেক্টের ৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ অন্তর্ভূক্ত আছে। যেগুলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রাপার্টি, প্লান্ট অ্যান্ড ইক্যুপমেন্টে (পিপিই) স্থানান্তর না করে ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেস বেশি ও পিপিই কম দেখিয়েছে।

এদিকে ওই ১০টি প্রজেক্টের ৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেসে রেখে দিয়ে অবচয় চার্জ করেনি পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হিসাব মান অনুযায়ি, কোন স্থায়ী সম্পদ যখন ব্যবহার উপযোগি হয়, তখন থেকে অবচয় চার্জ করতে হয়। যা না করে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়েছে।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেশনা মানছে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, পাওয়ার গ্রীডে ‘ডিপোজিট ফর শেয়ার’ হিসাবে ৮ হাজার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এফআরসির নির্দেশনার পরে কোম্পানিটি থেকে ওই অর্থের মধ্য থেকে ১৯৬ কোটি ৮ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি এবং ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। অন্যথায় কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের ইপিএসে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

রাষ্ট্রায়াত্ত্ব এই কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে মুনাফা করলেও ২য় প্রান্তিকে বড় লোকসানের কবলে পড়েছে। যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫.৫১ টাকা করে। যার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় লোকসানকে কারন হিসেবে উল্লেখ করেছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পাওয়ার গ্রীডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৭১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ২৫ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৫২.৪০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

পাওয়ার গ্রীডের সম্পদে গরমিল

পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদে গরমিল খুঁজে পেয়েছে নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীডের ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এ তথ্য জানিয়েছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবে ১৫ হাজার ৩৪২ কোটি ৩৯ টাকার স্থায়ী সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। তবে কোম্পানিটির এই সম্পত্তির রেজিস্টারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নেই। এছাড়া স্বশরীরে ওইসব সম্পত্তির অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি।

এই বিশাল পরিমাণ স্থায়ী সম্পদ থাকলেও পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করে না। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৬ লংঘন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেস (ব্যবহার উপযোগি করার জন্য প্রক্রিয়াধীন) হিসেবে ২১ হাজার ৭৬৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে ব্যবহার উপযোগি হয়ে গেছে এমন ১০টি প্রজেক্টের ৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ অন্তর্ভূক্ত আছে। যেগুলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রাপার্টি, প্লান্ট অ্যান্ড ইক্যুপমেন্টে (পিপিই) স্থানান্তর না করে ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেস বেশি ও পিপিই কম দেখিয়েছে।

এদিকে ওই ১০টি প্রজেক্টের ৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার সম্পদ ওয়ার্ক-ইন-প্রগ্রেসে রেখে দিয়ে অবচয় চার্জ করেনি পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হিসাব মান অনুযায়ি, কোন স্থায়ী সম্পদ যখন ব্যবহার উপযোগি হয়, তখন থেকে অবচয় চার্জ করতে হয়। যা না করে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়েছে।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেশনা মানছে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, পাওয়ার গ্রীডে ‘ডিপোজিট ফর শেয়ার’ হিসাবে ৮ হাজার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এফআরসির নির্দেশনার পরে কোম্পানিটি থেকে ওই অর্থের মধ্য থেকে ১৯৬ কোটি ৮ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি এবং ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। অন্যথায় কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরের ইপিএসে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

রাষ্ট্রায়াত্ত্ব এই কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে মুনাফা করলেও ২য় প্রান্তিকে বড় লোকসানের কবলে পড়েছে। যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫.৫১ টাকা করে। যার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় লোকসানকে কারন হিসেবে উল্লেখ করেছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পাওয়ার গ্রীডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৭১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদদের মালিকানা ২৫ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৫২.৪০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: