ঢাকা , রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকা-১৪ আসনে ভোটযুদ্ধে ‘ভাই-বোন’

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: একজন নিজে গুমের শিকার ছিলেন, একজন গুমের শিকার ব্যক্তির বোন। দুজনই প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৪ আসন থেকে। দুই শীর্ষ দল জামায়াত ও বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তারা। নির্বাচনি প্রচারে তারা একে অন্যকে সম্বোধন করছেন ‘ভাই’-‘বোন’। ব্যতিক্রমী দুই প্রার্থীতে জমে উঠেছে এ আসনের নির্বাচনি প্রচারণা।

রাজধানীর দারুস সালাম, শাহ আলী থানা, মিরপুর থানার আংশিক এবং সাভারের কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। সাড়ে চার লাখ ভোটারের এ আসনে গত এক বছর নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী, আওয়ামী সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। দীর্ঘ আট বছর গুম হয়ে ছিলেন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ৫ আগস্টের পর মুক্ত হয়ে জামায়াত আমিরের আহ্বানে মিরপুর-১৪ আসনে প্রার্থী হন।

আরমানের বাবা জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মীর কাসেম আলী। তাকে জামায়াতের আর্থিক উইংয়ের থিঙ্কট্যাংক ধরা হতো। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার ফাঁসি হয়। বিদেশে সেটেল ব্যারিস্টার আরমান বাবার মামলায় লড়তে দেশে এসে গুমের শিকার হন বলে জানা যায়।

কাউন্দিয়া, বনগাঁও এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড) আরমানের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ নানা দৃষ্টিনন্দন কর্মসূচি করছেন জামায়াতের এই প্রার্থী। তার সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় ছিলেন প্রয়াত এমপি এসএ খালেকের সন্তান এসএস সিদ্দিক সাজু ও যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজ। দুজনের প্রচারণা বেশ জমেও উঠেছিল।

কয়েকদিন ধরে ছন্দপতন হয়েছে বিএনপি শিবিরের সে প্রচারণায়। দৃশ্যপটে এসেছেন নতুন প্রার্থী। গুমের শিকার বিএনপি নেতা সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি পেয়েছেন ধানের শীষের টিকিট। এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদি আমিনকে নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় মিছিল করতে দেখা গেছে তুলিকে। এরই মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রার্থী নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে ঝড় তুলেছেন বিএনপির এই প্রার্থী।

অনেক দোয়া আরমান ভাইয়ের জন্য: তুলি

প্রতিদিনই নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তুলি। চলছে লম্বা বহর নিয়ে শো-ডাউন। এছাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, লিফলেট বিতরণ, বৈঠক তো আছেই।

প্রচারণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ১২ বছর আন্দোলন করার পরে আয়নাঘরের সেই সিক্রেট ডিটেনশন থেকে আমরা কিছু প্রাণ ফিরে পেয়েছি। আরমান ভাই আমার সেই ভাই। সুমন ভাইয়ের মতো যাদের ফেরত পাইনি এখনো, তাদের অধিকার আদায়ে আমাকে এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। সেই পরিবারগুলোর অধিকার আদায়ে আমাকে সোচ্চার থাকতে হচ্ছে। আমার অনেক দোয়া আরমান ভাইয়ের জন্য। কারণ, আপনি জানেন আরমান ভাই থেকে আমি সেই ঘ্রাণ পাই, তার কথায় আমি সেটা পাই, যেটা সুমন ভাই থেকে পেতাম।

তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে একটা মানবিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের সবার যাত্রা। যেখানে আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। যার জন্য তিনি ছয়বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, সেই আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশটাকে যেন উপহার দিতে পারি। এই ঢাকা-১৪ আসনের বাসিন্দাদের যে বিড়ম্বনা, নানান প্রতিকূলতা আমি সেগুলো শুনছি। সেগুলোই আমার ম্যানিফেস্টোতে রাখবো।

তুলি আমার বোন: আরমান

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমও (আরমান) সানজিদা ইসলাম তুলিকে নিজের বোন বলে তার এই বক্তব্যকে উৎসাহিত করেছেন। আরমান হুড খোলা গাড়িতে চড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাছ বাজার থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নির্বাচনি প্রচারণায় এলাকার সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে মাদক। তরুণ সমাজ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা মসজিদ কমিটি, বাড়ির মালিক সমিতিসহ সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো। কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়নের যোগাযোগে সমস্যা আছে। ব্রিজ তৈরি করে দিয়ে সে সমস্যা সমাধান করবো। শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা মানুষের জন্য সহজলভ্য করার চেষ্টা করবো।

‘ভোটে রোল মডেল হবে ঢাকা-১৪’

বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকের মন খারাপ হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শিবিরে স্বস্তি আরমান-তুলিকে নিয়ে। তাদের দাবি, এ আসনটি ভোটে মাঠে মডেল হবে। আকরাম মির্জা নামে এক অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘ঢাকা-১৪ আসনের বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক খবর। এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের মদতদাতা এস এ সিদ্দিকী সাজু মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকের শঙ্কা থাকলেও, ঢাকা-১৪ আসনে চাঁদাবাজি, দখলবাজি আর সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি দারুণ পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি। প্রচণ্ড বিতর্কিত সাজুকে বাদ দেওয়ার এই পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। তারা পুরোনো পচা মুখগুলো বাদ দিয়ে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সানজিদা ইসলাম তুলির মতো একজন সৎ, সাহসী ও মানবিক মানুষকে ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে।’

বিএনপির এই অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘জামায়াত থেকে ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান), যিনি একজন শিক্ষিত, ভদ্র ও অত্যন্ত সংযত মানুষ। আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি আসনেই এমন মানুষ আসুক, যারা দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ক্ষমতার নয়, বিবেকের রাজনীতি করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা-১৪ আসন আগামী দিনের অংশগ্রহণমূলক, সম্মানজনক ও নীতিনিষ্ঠ নির্বাচনের এক রোল মডেল হয়ে উঠবে।’

আসনটিতে ঘুরে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। মিরপুর-২ এর বাসিন্দা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আরমান বিগত সরকারের সরাসরি ভিকটিম। আয়নাঘর থেকে ফিরে এসেছে। তুলিও ভিকটিম পরিবারের। তার ভাইকে পাওয়াও যায়নি। দীর্ঘদিন লড়াই করছেন গুম হওয়াদের ফেরাতে। প্রথমে ভাবছিলাম, তাদের দুটি আসনে থাকলে ভালো হতো। দুজনই জয়ী হতে পারতেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে দুজনের ইতিবাচক আচরণে মনে হচ্ছে, তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সারথিদের মেসেজ দেবেন।’

কল্যাণপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেন বলেন, ‘কে জিতবে জানি না। তবে আমরা খুশি, মনোনয়নে দলগুলো ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের জন্য শুভ কামনা।’

ভোটের হিসাব

ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত হিসাবে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৯ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার চারজন। হালনাগাদে এ সংখ্যা কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে।

আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান প্রায় সমান। যে দল যখন ক্ষমতায় ছিল, সে দলেরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নিকট অতীতে বিএনপির প্রয়াত এসএ খালেক এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের আসলামুল হক, আগা খান মিন্টু ও মাইনুল হাসান খান নিখিল এমপি ছিলেন এ আসনে।

বিজনেস আওয়ার/ ০৯ নভেম্বর / কাওছার

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা-১৪ আসনে ভোটযুদ্ধে ‘ভাই-বোন’

আপডেট সময় ১৮ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: একজন নিজে গুমের শিকার ছিলেন, একজন গুমের শিকার ব্যক্তির বোন। দুজনই প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৪ আসন থেকে। দুই শীর্ষ দল জামায়াত ও বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তারা। নির্বাচনি প্রচারে তারা একে অন্যকে সম্বোধন করছেন ‘ভাই’-‘বোন’। ব্যতিক্রমী দুই প্রার্থীতে জমে উঠেছে এ আসনের নির্বাচনি প্রচারণা।

রাজধানীর দারুস সালাম, শাহ আলী থানা, মিরপুর থানার আংশিক এবং সাভারের কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। সাড়ে চার লাখ ভোটারের এ আসনে গত এক বছর নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী, আওয়ামী সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। দীর্ঘ আট বছর গুম হয়ে ছিলেন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ৫ আগস্টের পর মুক্ত হয়ে জামায়াত আমিরের আহ্বানে মিরপুর-১৪ আসনে প্রার্থী হন।

আরমানের বাবা জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মীর কাসেম আলী। তাকে জামায়াতের আর্থিক উইংয়ের থিঙ্কট্যাংক ধরা হতো। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার ফাঁসি হয়। বিদেশে সেটেল ব্যারিস্টার আরমান বাবার মামলায় লড়তে দেশে এসে গুমের শিকার হন বলে জানা যায়।

কাউন্দিয়া, বনগাঁও এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড) আরমানের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ নানা দৃষ্টিনন্দন কর্মসূচি করছেন জামায়াতের এই প্রার্থী। তার সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় ছিলেন প্রয়াত এমপি এসএ খালেকের সন্তান এসএস সিদ্দিক সাজু ও যুবদল নেতা সাজ্জাদুল মিরাজ। দুজনের প্রচারণা বেশ জমেও উঠেছিল।

কয়েকদিন ধরে ছন্দপতন হয়েছে বিএনপি শিবিরের সে প্রচারণায়। দৃশ্যপটে এসেছেন নতুন প্রার্থী। গুমের শিকার বিএনপি নেতা সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি পেয়েছেন ধানের শীষের টিকিট। এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদি আমিনকে নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় মিছিল করতে দেখা গেছে তুলিকে। এরই মধ্যে প্রতিপক্ষের প্রার্থী নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে ঝড় তুলেছেন বিএনপির এই প্রার্থী।

অনেক দোয়া আরমান ভাইয়ের জন্য: তুলি

প্রতিদিনই নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তুলি। চলছে লম্বা বহর নিয়ে শো-ডাউন। এছাড়া এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, লিফলেট বিতরণ, বৈঠক তো আছেই।

প্রচারণাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ১২ বছর আন্দোলন করার পরে আয়নাঘরের সেই সিক্রেট ডিটেনশন থেকে আমরা কিছু প্রাণ ফিরে পেয়েছি। আরমান ভাই আমার সেই ভাই। সুমন ভাইয়ের মতো যাদের ফেরত পাইনি এখনো, তাদের অধিকার আদায়ে আমাকে এখনো মাঠে থাকতে হচ্ছে। সেই পরিবারগুলোর অধিকার আদায়ে আমাকে সোচ্চার থাকতে হচ্ছে। আমার অনেক দোয়া আরমান ভাইয়ের জন্য। কারণ, আপনি জানেন আরমান ভাই থেকে আমি সেই ঘ্রাণ পাই, তার কথায় আমি সেটা পাই, যেটা সুমন ভাই থেকে পেতাম।

তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে একটা মানবিক বাংলাদেশের জন্য আমাদের সবার যাত্রা। যেখানে আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। যার জন্য তিনি ছয়বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, সেই আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশটাকে যেন উপহার দিতে পারি। এই ঢাকা-১৪ আসনের বাসিন্দাদের যে বিড়ম্বনা, নানান প্রতিকূলতা আমি সেগুলো শুনছি। সেগুলোই আমার ম্যানিফেস্টোতে রাখবো।

তুলি আমার বোন: আরমান

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমও (আরমান) সানজিদা ইসলাম তুলিকে নিজের বোন বলে তার এই বক্তব্যকে উৎসাহিত করেছেন। আরমান হুড খোলা গাড়িতে চড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাছ বাজার থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নির্বাচনি প্রচারণায় এলাকার সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে মাদক। তরুণ সমাজ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা মসজিদ কমিটি, বাড়ির মালিক সমিতিসহ সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো। কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়নের যোগাযোগে সমস্যা আছে। ব্রিজ তৈরি করে দিয়ে সে সমস্যা সমাধান করবো। শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা মানুষের জন্য সহজলভ্য করার চেষ্টা করবো।

‘ভোটে রোল মডেল হবে ঢাকা-১৪’

বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকের মন খারাপ হলেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শিবিরে স্বস্তি আরমান-তুলিকে নিয়ে। তাদের দাবি, এ আসনটি ভোটে মাঠে মডেল হবে। আকরাম মির্জা নামে এক অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘ঢাকা-১৪ আসনের বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি স্বস্তিদায়ক খবর। এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের মদতদাতা এস এ সিদ্দিকী সাজু মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকের শঙ্কা থাকলেও, ঢাকা-১৪ আসনে চাঁদাবাজি, দখলবাজি আর সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি দারুণ পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি। প্রচণ্ড বিতর্কিত সাজুকে বাদ দেওয়ার এই পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। তারা পুরোনো পচা মুখগুলো বাদ দিয়ে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সানজিদা ইসলাম তুলির মতো একজন সৎ, সাহসী ও মানবিক মানুষকে ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে।’

বিএনপির এই অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘জামায়াত থেকে ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান), যিনি একজন শিক্ষিত, ভদ্র ও অত্যন্ত সংযত মানুষ। আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি আসনেই এমন মানুষ আসুক, যারা দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াবে। ক্ষমতার নয়, বিবেকের রাজনীতি করবে। আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা-১৪ আসন আগামী দিনের অংশগ্রহণমূলক, সম্মানজনক ও নীতিনিষ্ঠ নির্বাচনের এক রোল মডেল হয়ে উঠবে।’

আসনটিতে ঘুরে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। মিরপুর-২ এর বাসিন্দা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আরমান বিগত সরকারের সরাসরি ভিকটিম। আয়নাঘর থেকে ফিরে এসেছে। তুলিও ভিকটিম পরিবারের। তার ভাইকে পাওয়াও যায়নি। দীর্ঘদিন লড়াই করছেন গুম হওয়াদের ফেরাতে। প্রথমে ভাবছিলাম, তাদের দুটি আসনে থাকলে ভালো হতো। দুজনই জয়ী হতে পারতেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে দুজনের ইতিবাচক আচরণে মনে হচ্ছে, তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সারথিদের মেসেজ দেবেন।’

কল্যাণপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেন বলেন, ‘কে জিতবে জানি না। তবে আমরা খুশি, মনোনয়নে দলগুলো ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের জন্য শুভ কামনা।’

ভোটের হিসাব

ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত হিসাবে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৯ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার চারজন। হালনাগাদে এ সংখ্যা কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে।

আসনটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান প্রায় সমান। যে দল যখন ক্ষমতায় ছিল, সে দলেরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নিকট অতীতে বিএনপির প্রয়াত এসএ খালেক এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের আসলামুল হক, আগা খান মিন্টু ও মাইনুল হাসান খান নিখিল এমপি ছিলেন এ আসনে।

বিজনেস আওয়ার/ ০৯ নভেম্বর / কাওছার