ঢাকা , শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের ৫ টাকার ফুলকপি ব্যবসায়ীর হাতে এসে ২৫ টাকা!

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • 46

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করলেও পাচ্ছেননা ন্যায্য মূল্য। চলতি বছরেও তিনি ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মরিচাডাঙ্গা গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ কৃষক আজামুল হক।

ফলন আসার প্রথম দিকে দাম কিছুটা ভালো পেলেও পরে তা কমে গেছে। তাকে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা করে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়। অথচ গত বছর তা বিক্রি করেছেন ১২০০-১৩০০ টাকা মণ হিসেবে যা কেজি প্রতি ৪০ টাকারও বেশি ছিল। অথচ চলতি শীত মৌসুমে ২০০-৩০০ টাকা মণ দরে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

ফসলের জমিতেই কথা হয় তার সথে তিনি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে লোকসান হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। তবে প্রথমদিকে ১০-১২ টাকা কেজি পেলেও বেশিরভাগ ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে ৫-৭ টাকা কেজি দরে।

কৃষক আরও বলেন, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে। অথচ এবার ৪ বিঘাতে লেকসান ১৮ হাজার টাকা। খরচের টাকাও উঠেনি ফুলকপি বিক্রি করে। এবার চাষাবাদ অনেক হয়েছে, তাই দামও অনেক কম।

অপর কৃষক সুমন আলী জানান, প্রতিবছরের মতো এই বছরেও ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি না হওয়ায় দুই বিঘা ফুলকপি চাষাবাদ করে একটা টাকাও লাভ করতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে কিছু ফুলকপি থাকা অবস্থায় জমিতে হালচাষ করে সেখানে ধান লাগিয়েছি।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকারী বাজার পুরাতন বাজারে একই সময়ে ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮-১৩ টাকা কেজি দরে।
সেখানকার পাইকারী ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আমরা কিনে নেই। পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। এতে কেজি প্রতি ফুলকপিতে ২-৩ টাকা লাভ করে আমাদেরকে বিক্রি করতে হয়।

নিউমার্কেট খুচরা বাজার ও ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, ১০-১৬ টাকায় কিনে তারা ২০-২৫ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করছি।
আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে কিনি, খুচরা বাজারে এর থেকে কয়েক টাকা লাভ করে বিক্রি করি। তবে এ বছর শীতকালীন ফুলকপির দাম একটু কম ছিল।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে খুব বেশি ফুলকপির চাষাবাদ হয়নি এ জেলায়। দাম বেশি পেতে কৃষকদের কৌশলী হতে ও বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা রাখার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, যেকোনো বছর ফসলের দাম বেশি পেলে কৃষকরা পরের বছর অধিক পরিমাণে তা চাষাবাদ করে থাকে। গত বছর ফুলকপির ভালো দাম ছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে কৃষকদের কৌশলী হতে হবে। আগাম জাতের ফুলকপি চাষাবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

বিজনেস আওয়ার/২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

কৃষকের ৫ টাকার ফুলকপি ব্যবসায়ীর হাতে এসে ২৫ টাকা!

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করলেও পাচ্ছেননা ন্যায্য মূল্য। চলতি বছরেও তিনি ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মরিচাডাঙ্গা গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ কৃষক আজামুল হক।

ফলন আসার প্রথম দিকে দাম কিছুটা ভালো পেলেও পরে তা কমে গেছে। তাকে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা করে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়। অথচ গত বছর তা বিক্রি করেছেন ১২০০-১৩০০ টাকা মণ হিসেবে যা কেজি প্রতি ৪০ টাকারও বেশি ছিল। অথচ চলতি শীত মৌসুমে ২০০-৩০০ টাকা মণ দরে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

ফসলের জমিতেই কথা হয় তার সথে তিনি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে লোকসান হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। তবে প্রথমদিকে ১০-১২ টাকা কেজি পেলেও বেশিরভাগ ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে ৫-৭ টাকা কেজি দরে।

কৃষক আরও বলেন, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে। অথচ এবার ৪ বিঘাতে লেকসান ১৮ হাজার টাকা। খরচের টাকাও উঠেনি ফুলকপি বিক্রি করে। এবার চাষাবাদ অনেক হয়েছে, তাই দামও অনেক কম।

অপর কৃষক সুমন আলী জানান, প্রতিবছরের মতো এই বছরেও ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি না হওয়ায় দুই বিঘা ফুলকপি চাষাবাদ করে একটা টাকাও লাভ করতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে কিছু ফুলকপি থাকা অবস্থায় জমিতে হালচাষ করে সেখানে ধান লাগিয়েছি।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকারী বাজার পুরাতন বাজারে একই সময়ে ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮-১৩ টাকা কেজি দরে।
সেখানকার পাইকারী ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আমরা কিনে নেই। পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। এতে কেজি প্রতি ফুলকপিতে ২-৩ টাকা লাভ করে আমাদেরকে বিক্রি করতে হয়।

নিউমার্কেট খুচরা বাজার ও ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, ১০-১৬ টাকায় কিনে তারা ২০-২৫ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করছি।
আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে কিনি, খুচরা বাজারে এর থেকে কয়েক টাকা লাভ করে বিক্রি করি। তবে এ বছর শীতকালীন ফুলকপির দাম একটু কম ছিল।

তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে খুব বেশি ফুলকপির চাষাবাদ হয়নি এ জেলায়। দাম বেশি পেতে কৃষকদের কৌশলী হতে ও বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা রাখার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, যেকোনো বছর ফসলের দাম বেশি পেলে কৃষকরা পরের বছর অধিক পরিমাণে তা চাষাবাদ করে থাকে। গত বছর ফুলকপির ভালো দাম ছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে কৃষকদের কৌশলী হতে হবে। আগাম জাতের ফুলকপি চাষাবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

বিজনেস আওয়ার/২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: