ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় বোনকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপদেই ছোট বোন, দুজনেরই মৃত্যু

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • 49

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বড় বোনকে বাঁচাতে ছোট বোন পানিতে ঝাঁপয়ে উদ্ধারের চেষ্টার সময় ডুবে দুই বোনেরই মৃত্যু হয়েছে। হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটি কাপ্তাই লেকে।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের রিজার্ভ বাজার ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে। ওই নৌকার যাত্রীরা জয়পুরহাট থেকে সেখানে তীর্থ ভ্রমণে গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী নৌকাটি গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকার কাঠ খুলে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়েন বড় বোন। আর বোনকে ডুবতে দেখে তাকে বাঁচানোর জন্য ছোট বোনও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই বোনই। তবে নৌকার অন্য যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

মারা যাওয়া বড় বোন পুষ্পা রানী চক্রবর্তীর (৭০) বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (বড় বন্দর)। তিনি ওই এলাকার গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী। আর ছোট বোন চায়না রানী চক্রবর্তী (৫০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই গ্রামের বৈদ্যনাথের স্ত্রী।

নিহতদের ভাগিনা রতনপুর গ্রামের নিত্যানন্দ চক্রবর্তী জানান, পুষ্পা রানী ও চায়না রানী দুজন আপন বোন। রাঙ্গামাটিতে আমার মাও গিয়েছিলেন। মা বেঁচে গেছেন। পুষ্পা রানী বড়, আমার মা মনজু রানী মেঝ এবং চায়না রানী ছোট বোন। রাঙামাটিতে তীর্থ ভ্রমণে যাবেন বলেন তিন বোন রতনপুর এসছিলেন। সেখান থেকে শিবচতুর্দশীতে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। নিজ নিজ এলাকায় দুই বোনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের ৫৬ জনসহ নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৬৯ জন শিবচতুর্দশীতে পূর্জা-অর্চনা করতে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে যান। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রতনপুর বাজার থেকে একটি বাসে তারা রওনা দেন।

রোববার দুপুরে বাসটি সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। এরপর তারা সেখানে পূর্জা-অর্চনা করেন। সোমবার বিকেলে ৬০ জনের ওপর নারী-পুরুষ রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় করে ফিরছিলেন। নৌকাটি ডিসি বাংলো এলাকায় এসে গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নৌকা লেকের পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রী পুষ্পা রানী ও চায়না রানী চক্রবর্তী পানিতে ডুবে প্রাণ হারান।

রতনপুর গ্রামের সুজয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমার বাবা বিপুল চন্দ্র বর্মণ ও মা শ্রীমতি ষষ্ঠী রানী ওই নৌকায় ছিলেন। আমার মা-বাবাসহ গ্রামের অন্যরা এখন সুস্থ রয়েছেন। নৌকাডুবিতে প্রায় সবার মুঠোফোন পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এ কারণে যোগাযোগ একটু কষ্ট হচ্ছিল।

পাঁচবিবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, রতনপুর গ্রামের সনাতন ধর্ম্বালম্বীরা লোকজনেরা রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুই জন নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। তারা রতনপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে সেখানে গিয়েছিলেন।

বিজনেস আওয়ার/২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বড় বোনকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপদেই ছোট বোন, দুজনেরই মৃত্যু

পোস্ট হয়েছে : ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বড় বোনকে বাঁচাতে ছোট বোন পানিতে ঝাঁপয়ে উদ্ধারের চেষ্টার সময় ডুবে দুই বোনেরই মৃত্যু হয়েছে। হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটি কাপ্তাই লেকে।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শহরের রিজার্ভ বাজার ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী নৌকাডুবির ঘটনাটি ঘটে। ওই নৌকার যাত্রীরা জয়পুরহাট থেকে সেখানে তীর্থ ভ্রমণে গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, ডিসি বাংলো এলাকায় কাপ্তাই লেকে পর্যটকবাহী নৌকাটি গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকার কাঠ খুলে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পানিতে লাফিয়ে পড়েন বড় বোন। আর বোনকে ডুবতে দেখে তাকে বাঁচানোর জন্য ছোট বোনও পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই বোনই। তবে নৌকার অন্য যাত্রীদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

মারা যাওয়া বড় বোন পুষ্পা রানী চক্রবর্তীর (৭০) বাড়ি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা সদরের দক্ষিণ বাসুদেবপুর (বড় বন্দর)। তিনি ওই এলাকার গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী। আর ছোট বোন চায়না রানী চক্রবর্তী (৫০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বগেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই গ্রামের বৈদ্যনাথের স্ত্রী।

নিহতদের ভাগিনা রতনপুর গ্রামের নিত্যানন্দ চক্রবর্তী জানান, পুষ্পা রানী ও চায়না রানী দুজন আপন বোন। রাঙ্গামাটিতে আমার মাও গিয়েছিলেন। মা বেঁচে গেছেন। পুষ্পা রানী বড়, আমার মা মনজু রানী মেঝ এবং চায়না রানী ছোট বোন। রাঙামাটিতে তীর্থ ভ্রমণে যাবেন বলেন তিন বোন রতনপুর এসছিলেন। সেখান থেকে শিবচতুর্দশীতে রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। নিজ নিজ এলাকায় দুই বোনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ধরঞ্জী ইউনিয়নের রতনপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামের ৫৬ জনসহ নারী-পুরুষ ও শিশুসহ মোট ৬৯ জন শিবচতুর্দশীতে পূর্জা-অর্চনা করতে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ মন্দিরে যান। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রতনপুর বাজার থেকে একটি বাসে তারা রওনা দেন।

রোববার দুপুরে বাসটি সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। এরপর তারা সেখানে পূর্জা-অর্চনা করেন। সোমবার বিকেলে ৬০ জনের ওপর নারী-পুরুষ রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখে নৌকায় করে ফিরছিলেন। নৌকাটি ডিসি বাংলো এলাকায় এসে গাছের গুড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে নৌকা লেকের পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রী পুষ্পা রানী ও চায়না রানী চক্রবর্তী পানিতে ডুবে প্রাণ হারান।

রতনপুর গ্রামের সুজয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, আমার বাবা বিপুল চন্দ্র বর্মণ ও মা শ্রীমতি ষষ্ঠী রানী ওই নৌকায় ছিলেন। আমার মা-বাবাসহ গ্রামের অন্যরা এখন সুস্থ রয়েছেন। নৌকাডুবিতে প্রায় সবার মুঠোফোন পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এ কারণে যোগাযোগ একটু কষ্ট হচ্ছিল।

পাঁচবিবি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, রতনপুর গ্রামের সনাতন ধর্ম্বালম্বীরা লোকজনেরা রাঙামাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুই জন নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। তারা রতনপুর গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে এসে সেখানে গিয়েছিলেন।

বিজনেস আওয়ার/২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: