বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ভালো মুনাফা দেখিয়ে উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার ইস্যু করে আমান ফিড। সেই কোম্পানি এখন উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে ঋণে জর্জরিত হয়ে নিয়মিত তলানির দিকে যাচ্ছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দূর্ণীতি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় কোম্পানির সঠিক তথ্য বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি বিনিয়োগকারীদের।
ফিড ব্যবসায় দেশব্যাপি খুবই ভালো আয় করে আমান ফিড। কিন্তু তার বড় অংশ চলে যায় উদ্যোক্তা/পরিচালকদের পকেটে। যে কারনে কোম্পানির আয় বাড়লেও এখন মুনাফা কমে। কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই ২২- ডিসেম্বর ২২) পণ্য বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ১৩২ কোটি টাকার বেশি। এসত্ত্বেও কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৮০ শতাংশ।
আমান ফিড থেকে চলে যাওয়া সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটির যে পরিমাণ বিক্রি ও মুনাফা হয়, তার অর্ধেকও যদি আর্থিক হিসাবে দেখানো যেতো, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ভেসে যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির জন্য ব্যবহার করা। যা সমন্বয় করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমান ফিডকে।
দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসে (জুলাই ২২-ডিসেম্বর ২২) আমান ফিডের ৫৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৪৫৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রি বেড়েছে ১৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকার বা ২৯ শতাংশ।
তারপরেও কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসে নিট মুনাফা কমেছে ১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার বা ৮০ শতাংশ। এ কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসে বিক্রি মূল্য থেকে পরিচালন ব্যয়, সুদজনিত ব্যয় ও কর সঞ্চিতি বিয়োগ এবং অন্যান্য আয় যোগ শেষে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৩৬ টাকায়। যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১.৮৫ টাকা।
মুনাফায় এই ধসের কারন হিসাবে আমান ফিড কর্তৃপক্ষ পণ্য উৎপাদনে ৫১% দাম বৃদ্ধিকে উল্লেখ করে ডিএসইকে জানিয়েছেন। এছাড়া সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিকে কারন হিসেবে জানিয়েছেন। যা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
কিন্তু ভালো ব্যবসা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করা আমান ফিড এখন অনেক পিছিয়ে। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পূর্ব শেয়ারপ্রতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের ৪.৯৭ টাকার মুনাফা এখন ৬ মাসে ০.৩৬ টাকা।
কোম্পানিটি ২০১৫ সালে প্রিমিয়াম নিয়ে শেয়ারবাজারে আসে। ওইসময় প্রতিটি শেয়ার ৩৬ টাকা করে ইস্যু করে। এতে প্রতিটি শেয়ারে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে ২৬ টাকা। কিন্তু সেই কোম্পানি সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। যা ইস্যু মূল্য বিবেচনায় ৩ শতাংশেরও কম বা ২.৭৮ শতাংশ। আর শেয়ার দর এখন ৩৩.৫০ টাকার ফ্লোরে আটকে আছে।
এদিকে ঋণ পরিশোধের জন্য শেয়ারবাজারে আসা আমান ফিড এখন ঋণেই জর্জরিত। এই কোম্পানির নামে ঋণ নিয়ে অন্যসব কোম্পানিতে ব্যবহারের কারনে যা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে লাভবান হয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা, লোকসান গুণছে সাধারন শেয়ারহোল্ডাররা।
দেখা গেছে, আমান ফিডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ৪৫৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ পরিশোধিত মূলধনের প্রায় সাড়ে ৩ গুণ ঋণে আমান ফিড। অথচ কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে এসেছিল ঋণ কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে।
বিজনেস আওয়ার/২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩/আরএ