বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঝুঁকি নিতে আত্মবিশ্বাসের অভাবে শেয়ারবাজারে নারীদের অংশগ্রহন কম। এটাকে ওভারকাম করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম। পাশাপাশি বলেন, আজ বিনিয়োগ করে কালই মুনাফা ঘরে তোলার মনোভাব বর্জন করতে হবে।
গত সোমবার ডিএসই ট্রেনিং একাডেমি নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগকারী সচেতনতামূলক কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থতি ছিলেন ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার। কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেন ডিএসইর উপ মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেনিং একাডেমির প্রধান সৈয়দ আল আমিন রহমান এবং বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে, তাই বিনিয়োগকারীদের জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে জানিয়ে রুমানা ইসলাম বলেন, আমেরিকা বা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে আমাদের দেশে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক কম। এর একটা বড় কারণ হল ঝুঁকি নিতে আত্মবিশ্বাসের অভাব। এই ধারনাটাকে ওভারকাম করতে হবে। তাহলেই শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সহ তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।
আরও বলনে, সাবধানতা অবলম্বনের ক্ষেত্রে ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বা যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মেয়েরা ঝুঁকি কম নিতে পছন্দ করে যা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। সঞ্চয়কৃত অলস টাকা হতে পারে শেয়ারবাজারের মূলধন। মেয়েরা বাবার কাছ থেকে, স্বামীর কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বা চাকুরী করে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
শেয়ারবাজারে অলস টাকা বিনিয়োগ করতে হবে মন্তব্য করে রুমানা ইসলাম বলেন, এই অলস টাকা হতে পারে আপনাদের সঞ্চয়ের একটা একক অংশ। এমন টাকা যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা যাবে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে লাভবান হওয়া যায়। তাই ঝুঁকি কমাতে ধৈর্য্য সহকারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে মনোযোগী হতে হবে। আজ বিনিয়োগ করে কালই মুনাফা ঘরে তোলার মনোভাব বর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন শেয়ার কখন কিনবেন এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনাদের সহায়তাকরণের জন্যই এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের প্রয়াসে ও মহিলা বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার বলতে আমরা শুধু শেয়ার বুঝি, কিন্তু শেয়ারবাজারে আরো অনেক বিনিয়োগযোগ্য প্রডাক্ট রয়েছে, যেখানে আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন। কোথায় বিনিয়োগ করবেন তা আপনি কতটুকু ঝুঁকি নিতে পারছেন তার উপর নির্ভরশীল। মেয়েদের পুঁজিবাজারে অংশ গ্রহণ করা উচিত কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ডিগ্রিধারী, যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া স্বত্তেও দেখা যায় তাদের চাকুরী করা হয়ে ওঠেনা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে। অনেক সময় কর্মজীবনে উন্নতি করার জন্য যতটুকু সময় বা মেধার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন সেই সুযোগ মেয়েরা পায়না পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে। আর তাই মহিলা বিনিয়োগকারীরা যদি শেয়ারবাজারে সক্রিয় থাকেন তাহলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্য কাজের পাশাপাশি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে ফেলতে পারবেন।
তাছাড়া প্রত্যেকটা নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই প্রয়োজনীয় তাদের যেকোন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সামলানোর জন্য। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত না জনগনের অর্ধেক নারীদের সম্পৃক্ত করতে পারছি ততক্ষন পর্যন্ত এই উন্নয়ন সম্পূর্ণকরণ সম্ভব নয়। মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ যতই সম্পৃক্ত করতে পারব ততই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধ হবে।
তার আগে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, এই ট্রেনিং প্রোগ্রামটি হলো আপনাদের এ বিষয়ে স্টার্টিং পয়েন্ট। পরবর্তীতে আপনাদের এ বিষয়ে অনেক অনুশীলন করতে হবে। এছাড়া আমাদের বিশেষ বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। আমরা আশা করি, এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তার উপর ভিত্তি করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন৷ পরবর্তীতে আমাদের অন্যান্য প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহন করবেন। পুঁজিবাজারে এখন পর্যন্ত নারী অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক কম৷ আশা করি আগামীতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে।
বিজনেস আওয়ার/১ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড