বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আমাদের আইনগত একটা দায়িত্ব হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের গুর্শমূলক প্রসপেক্টাসসহ সব জায়গায় আমরা লিখে থাকি, পুঁজিবাজার ঝুঁকিপূর্ণ, জেনে বুঝে বিনিয়োগ করুন। আমাদেরকে সর্বোচ্চ মহল থেকে এবিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। কারণ এখানে অর্থায়নের একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যা অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রত্যেকেই তাদের অর্থ খুবই নিরাপদে রাখতে চায়, সেই নিরাপত্তাটাই যাতে আমরা সবাই নিশ্চিত করতে পারি সেজন্যই এই ধরনের ফান্ডামেন্টাল প্রশিক্ষণগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস, ইনভেস্টমেন্ট টেকনিকস এন্ড টুলস শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপণীতে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমদ এসব কথা বলনে।
বিনিয়োগকারীদেরকে আমাদের সঠিক পরামর্শ ও নির্দেশিকা প্রদান করতে হবে জানিয়ে শেখ শামসুদ্দীন আহমদ বলেন, যাতে তারা বিনিয়োগ করার সময় বিচার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আপনারা যে পদাবলীতে আসীন রয়েছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেশা বা প্রেক্ষাপট, যেখানে থেকে আপনারা ইনভেষ্টমেন্ট এনালাইসিস করেন। আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ অনুসারে সেটাকে বিশ্বাস করেই আমরা নতুন কোম্পানিকে অনুমোদন দিচ্ছি। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যারা এখানে শেয়ার বিনে, বন্ড কিনে বা অন্য প্রডাক্টে বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজির সরবরাহ করছে তাদেরকে আপনাদের বিশ্লেষণ বা এনালাইসিসটাই কিন্তু বলছে কোনটা গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ আপনি বিনিয়োগকারীদের যে প্রক্রিয়ায় গাইড করবেন তা তাদের বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। আপনাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে আমরাও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি। আর তাই আপনাদের একটা বিশাল দায়িত্ব রয়েছে, যখন কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে বলা হয়, আপনাদের সেক্ষেত্রে জানতে হবে যে, কখন বলা যেতে পারে যে, বিনিয়োগ করা যাবে।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের যোগ্য রিসোর্স পারসনদের উক্তব্য এবং শুধু বই পুস্তক নয় এর বাইরেও অনেক তর্থ-উপাত্ত রয়েছে, যা আপনাদের জানতে হবে। আজ এমন কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে যাচ্ছি যা হয়তো এখারে আলোচনা হয়নি, কিন্তু আপনাদের জানা প্রয়োজন। যেমন অডিটর ইন্টারনাল ফাইন্যান্স যে তথ্য প্রদান করে তার ভিত্তিতে সে অডিট রিপোর্ট তৈরী করে। অডিটরের গেন রির্পোটের উপর ভিত্তি করে ক্রেডিট রেটিং কোম্পানীগুলো রেটিং করছে। তারা সকলে রিলেটেড প্রসেসর। এই প্রসেস বিল্ডিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক অডিটরের মাধ্যমে অডিট করতে হবে, যাতে কোন অসঙ্গতি ধরা না পড়ে। যেকোন কোম্পানিকে মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে অডিটর রির্পোটের পাশাপাশি বিভিন্ন টুলস এবং টেকনিক মেনে চলতে হবে সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রদানের মাধ্যমে। ভুল তথ্য দিলে এনালাইসিস বা বিশ্লেষণও ভুল হবে আর তাই এক্ষেত্রে ইন্টারনাল ফাইন্যান্স, অডিটর বা অডিট রেটিং কোম্পানির বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তাই তাদের সুরক্ষায় বিভিন্ন টুলস এবং টেকনিক মেনে আমাদেরকে কোন নির্দিষ্ট কোম্পানি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে হবে। সেই কোম্পানির কাঁচামাল, তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে সাধারণতঃ রিপোর্টগুলো করা হয়। সেক্ষেত্রে সেই তথ্য সমূহ সঠিক আছে কিনা তার তদারক আমাদের করতে হবে, তাহলেই এসব টুলস এবং টেকনিক ব্যবহারের সুফল আসবে। টুলস এবং টেকনিকস বলছে, কিভাবে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হবে কিন্তু বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আপনাদের ফর্মুলা, থিওরি, ক্যালকুলেটরি টেকনিকস যদি সঠিক উপারে পরিচালিত হয় তাহলে কোন সমস্যা হবেনা। আর তাই সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হবে। আর তা বিনিয়োগকারী, ফার্ম এবং সকলের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।
তার আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদার সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস পুঁজিবাজারের খুবই প্রাথমিক বিষয়। পুঁজিবাজার কাজ করতে বা পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনিয়োগকারীদের মাঝে আপনার যা শিখলেন সেই জ্ঞান যদি বিতরণ করেন তবে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক খাত লাভবান হবে। আমাদের ওয়েবসাইটে যেসব তথ্যসময়হ রয়েছে, সেখান থেকে কোন তথ্য কিভাবে নিবেন, সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কেমন হবে সেই বিষয়গুলোর উপর ফোকাস করাই হলো এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য। আপনারা যারা এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন তারা যা শিখছেন তা আপনাদের পরবর্তী কার্যক্রমে আরও শক্তিশালী করবেন। চর্চা অব্যহত রাখবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বিজনেস আওয়ার/৫ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড