ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই রপ্তানি নাই ৭১ শতাংশ

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০২৩
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের ব্যবসা ধারাবাহিকভাবে পতনে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এ খাতের কোম্পানির সংখ্যা ১০৫টি থেকে কমে ৪৩-এ নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করার আগে আছিয়া সী ফুডসের ২১৩ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক রপ্তানি বাড়ে। যাতে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বাড়ে ১৮৪%। করোনা মহামারির কারনে পুরো দুনিয়ার স্থবিরতার সময় এমন উন্নতি করা কোম্পানিটির রপ্তানি তালিকাভুক্তির বছরেই ৭১ শতাংশ নাই।

কোম্পানিটির শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের আগে কৃত্রিম রপ্তানি ও মুনাফা দেখিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেটাকে তোয়াক্কা করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু কৃত্রিম রপ্তানির সেই অভিযোগ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ফুটে উঠেছে।

আছিয়া সী ফুডসের ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকা। যা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়ে যায় ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ৯৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২১৩% বেশি।

অর্থ উত্তোলন শেষে ওই কৃত্রিম রপ্তানি উত্থানের আগের অবস্থা থেকেও নিচে নেমে এসেছে। আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, আছিয়ার ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যাতে আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৯৮ কোটি টাকা বা ৭১ শতাংশ।

রপ্তানিতে ওই ধসের কারনে কোম্পানিটির নিট মুনাফায়ও স্বাভাবিকভাবেই পতন হয়েছে। কোম্পানিটির ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার নিট মুনাফা ২০২১-২২ অর্থবছরে নেমে এসেছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকায়। যাতে আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট মুনাফা কমেছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বা ৪৭ শতাংশ।

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ব্যবসায় আকাশচুম্বি উত্থান হওয়া আছিয়া সী ফুডস প্রথম বছরেই সবাইকে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া যে একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে, তার পুরোটা মুনাফা থেকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। রিজার্ভে হাত দিতে হয়েছে।

আছিয়া সী ফুডসের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে কোম্পানিটির পর্ষদ শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যাতে করে শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদেরকেই দিতে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ম বছরেই এবং শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে গিয়েই ৩৫ লাখ টাকার রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে আছিয়া সী ফুডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) স্বপন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার কারনে মুনাফা কমে গেছে। এই রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপে তৈরী অস্থিরতা প্র্রধান কারন। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে সাদা মাছ রপ্তানি নিয়ে কাজ করলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কম করতে হয়েছে।

ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা আছিয়া সী ফুডসের শেয়ারবাজারে আসার আগে মুনাফার ন্যায় সম্পদেও ছিল অস্বাভাবিকতা। তারা আছিয়া সী ফুডসের ২০-২৫ বছর আগে নির্মাণ করা ভবনের (জমি ছাড়া) প্রতি স্কয়ার ফিট খরচ ৪ হাজার ৪৭২ টাকা করে উল্লেখ করে। যা বর্তমান বাজারের উচ্চ দরের কাঁচামাল দিয়ে নির্মাণেও লাগে না।

শেয়ারবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা আছিয়া সী ফুডসের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.৩১ শতাংশ।

বিজনেস আওয়ার/০৭ মার্চ, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই রপ্তানি নাই ৭১ শতাংশ

পোস্ট হয়েছে : ১২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মার্চ ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের ব্যবসা ধারাবাহিকভাবে পতনে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এ খাতের কোম্পানির সংখ্যা ১০৫টি থেকে কমে ৪৩-এ নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করার আগে আছিয়া সী ফুডসের ২১৩ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক রপ্তানি বাড়ে। যাতে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বাড়ে ১৮৪%। করোনা মহামারির কারনে পুরো দুনিয়ার স্থবিরতার সময় এমন উন্নতি করা কোম্পানিটির রপ্তানি তালিকাভুক্তির বছরেই ৭১ শতাংশ নাই।

কোম্পানিটির শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের আগে কৃত্রিম রপ্তানি ও মুনাফা দেখিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেটাকে তোয়াক্কা করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু কৃত্রিম রপ্তানির সেই অভিযোগ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ফুটে উঠেছে।

আছিয়া সী ফুডসের ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪৪ কোটি ২ লাখ টাকা। যা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়ে যায় ১৩৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ৯৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২১৩% বেশি।

অর্থ উত্তোলন শেষে ওই কৃত্রিম রপ্তানি উত্থানের আগের অবস্থা থেকেও নিচে নেমে এসেছে। আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, আছিয়ার ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যাতে আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৯৮ কোটি টাকা বা ৭১ শতাংশ।

রপ্তানিতে ওই ধসের কারনে কোম্পানিটির নিট মুনাফায়ও স্বাভাবিকভাবেই পতন হয়েছে। কোম্পানিটির ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার নিট মুনাফা ২০২১-২২ অর্থবছরে নেমে এসেছে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকায়। যাতে আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট মুনাফা কমেছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বা ৪৭ শতাংশ।

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের আগে ব্যবসায় আকাশচুম্বি উত্থান হওয়া আছিয়া সী ফুডস প্রথম বছরেই সবাইকে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া যে একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে, তার পুরোটা মুনাফা থেকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। রিজার্ভে হাত দিতে হয়েছে।

আছিয়া সী ফুডসের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার নিট মুনাফার বিপরীতে কোম্পানিটির পর্ষদ শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) ১০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যাতে করে শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদেরকেই দিতে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ম বছরেই এবং শুধুমাত্র সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে গিয়েই ৩৫ লাখ টাকার রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে আছিয়া সী ফুডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) স্বপন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার কারনে মুনাফা কমে গেছে। এই রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপে তৈরী অস্থিরতা প্র্রধান কারন। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে সাদা মাছ রপ্তানি নিয়ে কাজ করলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কম করতে হয়েছে।

ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসা আছিয়া সী ফুডসের শেয়ারবাজারে আসার আগে মুনাফার ন্যায় সম্পদেও ছিল অস্বাভাবিকতা। তারা আছিয়া সী ফুডসের ২০-২৫ বছর আগে নির্মাণ করা ভবনের (জমি ছাড়া) প্রতি স্কয়ার ফিট খরচ ৪ হাজার ৪৭২ টাকা করে উল্লেখ করে। যা বর্তমান বাজারের উচ্চ দরের কাঁচামাল দিয়ে নির্মাণেও লাগে না।

শেয়ারবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা আছিয়া সী ফুডসের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.৩১ শতাংশ।

বিজনেস আওয়ার/০৭ মার্চ, ২০২৩/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: