ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাথা উঁচু করেই চালাচ্ছে চাঁনের অবৈধ চুনা কারখানা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
  • 0

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : পরিবেশ নীতিমালা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় বাঁধাহীন ভাবে চলছে পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ প্রায় ২২টি চুনা কারখানা। এখানে ২৪ ঘন্টা আগুন জ্বালিয়ে পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরি হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে বাতাশ। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ।

অভিযোগ ওঠেছে, পরিবেশ নীতিমালা ও তিতাসের নিয়ম অমান্য করে গড়ে ওঠেছে চুনা কারখানাগুলো। এসব কারখানায় নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। নেই ট্রেড লাইসেন্স। অনেক কারখানায় নেই ছাদ। ফলে খোলা আকাশে নিচে ঝুঁকির মধ্যে পোড়াচ্ছে পাথর। আরও অভিযোগ ওঠেছে, অনেকেই ব্যবসা না গুটিয়ে বরং আরো সম্প্রসারন করছে। এসব দেখেও না দেখার ভান রয়েছে তিতাস। এতে বেশ দাপটের সাথে মাথা উঁচু করে কারখানাগুলোতে দিনরাত পুড়ানো হচ্ছে পাথর।

ব্যবসা না গুটিয়ে আরো বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলের বাসিন্দা রুবেল সরদার বলেন, আমাদের এলাকা থেকে চুনা কারখানাগুলো ওঠানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের শক্তি কাছে সবাই হার মেনেছে। তাদের হাত লম্বা। তেমনি হীরাঝিলের এক নাম্বার ওয়ার্ডের কারখানা মেসার্স রনি লাইমস। কারখানাটি সরিয়ে নিতে কয়েকবার আমরা বিভিন্ন মহলে গিয়েছে। কিন্তু সব ফেল করেছে। সব চেষ্টা ব্যর্থ মেসার্স রনি লাইমসের কর্তৃপক্ষের কাছে।

কাদের প্রশ্রয়ে বা উৎসাহে মাথা উঁচু করে মেসার্স রনি লাইমস ব্যবসা দিনদিন বাড়িয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি, রনি লাইমস তাদের ব্যসবা আরো দ্বিগুন করার পায়তারা করছে। পাশের জায়গাও নিচ্ছে। আরো জায়গা খোঁজে এলাকার জমির দালালদের লাগিয়ে রেখেছে।

ব্যবসা না গুটিয়ে আরো বাড়ানো প্রসঙ্গে মেসার্স রনি লাইমসের মালিক হাজী চাঁন মিয়া কথা বলতে নারাজ। তবে তিনি বলেন, আমি কারখানা হস্তান্তরের আবেদন করেছি। অন্যত্রে নিয়ে যেতে সেখানে বা সেই স্থানে গ্যাস সংযোগ চেয়েছি। কিন্তু তারা সেখানে আমাকে এখনো গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে না। এই কারনে আমি এখনো হীরাঝিলে কারখানা চালু রেখেছি। যদি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আমাকে হস্তান্তরের সকল ব্যাবস্থা করে দেন তাহলে আমি সোনারগাঁয়ে চলে যাবো।

সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, কারখানাগুলোতে সারাক্ষণ পাথর পুড়ানোতে তৈরি হচ্ছে কালো ধোঁয়া। আবার পোড়ানোর পর চুনের ডাস্ট বাতাসে উড়ে মিশে যাচ্ছে। এসব ডাস্ট ও ধোঁয়া দুটিই জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এতে পথচারী ও আশ পাশের ঘর বাড়ীর মানুষদের হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি।

এদিকে, আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে চার বছর আগে নোটিস করে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কয়েক দফা নোটিস করলেও অদৃশ্য কারণে আজ পর্যন্ত কারখানাগুলো সরানো হচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে বছরের পর বছর ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানায় চুন তৈরি চলছে। অবশ্য বায়ু দূষণের কারণে ২০১৯ সাল থেকে এসব কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান বন্ধ রেখেছে পরিবেশ অধিদফতর।

অপরদিক কারখানার বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চলছে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন ওইসব কারখানার মালিকরা। তবে কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রায় সবাই।

কালো ধোঁয়ার দম বন্ধ হয়ে আসে জানিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ওয়াপদা কলোনির বাসিন্দা সাইফুল রহমান বলেন, কারখানায় দিনরাত জ্বলছে আগুন। পাথর পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে চুন। কালো ধোঁয়ায় উড়ছে ছাই। এই ধোঁয়া আশপাশের মানুষের নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।

ডাস্ট ও কালো ধোঁয়ার জন্য বাসাতে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে জানিয়ে মক্কীনগরের বাসিন্দা মমতাজ খাতুন বলেন, চুনা কারখানাগুলো বাতাস দূষণ করছে। এই দূষন কারনে আমার দুই সন্তানের ঠান্ডা লেগেই আছে। সাথে চোখ জ্বালা পোড়া করে। ডাক্তার দেখায়, কিন্তু কোন পরিবর্তন নেই। ওষুধ খেলে দুইদিন ভাল থাকে, পরে ফের আগের অবস্থায় চলে যায়।

বিজনেস আওয়ার/১১ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মাথা উঁচু করেই চালাচ্ছে চাঁনের অবৈধ চুনা কারখানা

পোস্ট হয়েছে : ০৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : পরিবেশ নীতিমালা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় বাঁধাহীন ভাবে চলছে পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ প্রায় ২২টি চুনা কারখানা। এখানে ২৪ ঘন্টা আগুন জ্বালিয়ে পাথর পুড়িয়ে চুন তৈরি হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে বাতাশ। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ।

অভিযোগ ওঠেছে, পরিবেশ নীতিমালা ও তিতাসের নিয়ম অমান্য করে গড়ে ওঠেছে চুনা কারখানাগুলো। এসব কারখানায় নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। নেই ট্রেড লাইসেন্স। অনেক কারখানায় নেই ছাদ। ফলে খোলা আকাশে নিচে ঝুঁকির মধ্যে পোড়াচ্ছে পাথর। আরও অভিযোগ ওঠেছে, অনেকেই ব্যবসা না গুটিয়ে বরং আরো সম্প্রসারন করছে। এসব দেখেও না দেখার ভান রয়েছে তিতাস। এতে বেশ দাপটের সাথে মাথা উঁচু করে কারখানাগুলোতে দিনরাত পুড়ানো হচ্ছে পাথর।

ব্যবসা না গুটিয়ে আরো বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলের বাসিন্দা রুবেল সরদার বলেন, আমাদের এলাকা থেকে চুনা কারখানাগুলো ওঠানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের শক্তি কাছে সবাই হার মেনেছে। তাদের হাত লম্বা। তেমনি হীরাঝিলের এক নাম্বার ওয়ার্ডের কারখানা মেসার্স রনি লাইমস। কারখানাটি সরিয়ে নিতে কয়েকবার আমরা বিভিন্ন মহলে গিয়েছে। কিন্তু সব ফেল করেছে। সব চেষ্টা ব্যর্থ মেসার্স রনি লাইমসের কর্তৃপক্ষের কাছে।

কাদের প্রশ্রয়ে বা উৎসাহে মাথা উঁচু করে মেসার্স রনি লাইমস ব্যবসা দিনদিন বাড়িয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি, রনি লাইমস তাদের ব্যসবা আরো দ্বিগুন করার পায়তারা করছে। পাশের জায়গাও নিচ্ছে। আরো জায়গা খোঁজে এলাকার জমির দালালদের লাগিয়ে রেখেছে।

ব্যবসা না গুটিয়ে আরো বাড়ানো প্রসঙ্গে মেসার্স রনি লাইমসের মালিক হাজী চাঁন মিয়া কথা বলতে নারাজ। তবে তিনি বলেন, আমি কারখানা হস্তান্তরের আবেদন করেছি। অন্যত্রে নিয়ে যেতে সেখানে বা সেই স্থানে গ্যাস সংযোগ চেয়েছি। কিন্তু তারা সেখানে আমাকে এখনো গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে না। এই কারনে আমি এখনো হীরাঝিলে কারখানা চালু রেখেছি। যদি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আমাকে হস্তান্তরের সকল ব্যাবস্থা করে দেন তাহলে আমি সোনারগাঁয়ে চলে যাবো।

সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, কারখানাগুলোতে সারাক্ষণ পাথর পুড়ানোতে তৈরি হচ্ছে কালো ধোঁয়া। আবার পোড়ানোর পর চুনের ডাস্ট বাতাসে উড়ে মিশে যাচ্ছে। এসব ডাস্ট ও ধোঁয়া দুটিই জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এতে পথচারী ও আশ পাশের ঘর বাড়ীর মানুষদের হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি।

এদিকে, আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে চার বছর আগে নোটিস করে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কয়েক দফা নোটিস করলেও অদৃশ্য কারণে আজ পর্যন্ত কারখানাগুলো সরানো হচ্ছে না। কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য খুঁটির জোরে বছরের পর বছর ধরে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানায় চুন তৈরি চলছে। অবশ্য বায়ু দূষণের কারণে ২০১৯ সাল থেকে এসব কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান বন্ধ রেখেছে পরিবেশ অধিদফতর।

অপরদিক কারখানার বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চলছে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন ওইসব কারখানার মালিকরা। তবে কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রায় সবাই।

কালো ধোঁয়ার দম বন্ধ হয়ে আসে জানিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ওয়াপদা কলোনির বাসিন্দা সাইফুল রহমান বলেন, কারখানায় দিনরাত জ্বলছে আগুন। পাথর পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে চুন। কালো ধোঁয়ায় উড়ছে ছাই। এই ধোঁয়া আশপাশের মানুষের নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।

ডাস্ট ও কালো ধোঁয়ার জন্য বাসাতে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে জানিয়ে মক্কীনগরের বাসিন্দা মমতাজ খাতুন বলেন, চুনা কারখানাগুলো বাতাস দূষণ করছে। এই দূষন কারনে আমার দুই সন্তানের ঠান্ডা লেগেই আছে। সাথে চোখ জ্বালা পোড়া করে। ডাক্তার দেখায়, কিন্তু কোন পরিবর্তন নেই। ওষুধ খেলে দুইদিন ভাল থাকে, পরে ফের আগের অবস্থায় চলে যায়।

বিজনেস আওয়ার/১১ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: