বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আর্থিক, ব্যবসায়িক, ডিজিটালসহ সব খাতেই জেন্ডার (লিঙ্গ) ব্যবধান কমিয়ে আনাতে হবে। অর্থনীতি, সামাজিকসহ যেকোন উন্নয়নে পুরুষের সাথে নারীদেরও কাজ করতে হবে। তাদের (নারী) ঘরে রেখে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘রিং দ্য বেল ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানটি ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ইউএন ওমেন, জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট এবং সুইস স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (এসইসিও) এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ এক্সচেঞ্জের সাথে অংশীদারিত্বর ভিত্তিতে নবম বছর ‘রিং দ্য বেল ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ আয়োজন করে।
বিশ্বের প্রায় ১২০টি স্টক এক্সচেঞ্জ বৈশ্বিক বার্ষিক কর্মউদ্যোগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য লিঙ্গ সমতার গুরুত্ব তুলে ধরে। কোভিড-১৯ মহামারী এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতির কারণে এটি আরও বেশি গুরুত্বের একটি বিষয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন করিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, ডিজিটাল দুনিয়া থেকে নারীদের বাদ দিয়ে গত এক দশকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদন থেকে $১ ট্রিলিয়ন হ্রাস করেছে। পদক্ষেপ না নিলে, এই লোকসান ২০২৫ সাল নাগাদ $১.৫ ট্রিলিয়ন হবে। আজ সকালে আপনাদের সবার সাথে ঘন্টা বাজানো হল আর্থিক, ব্যবসায়িক এবং ডিজিটাল খাতে জেন্ডার ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারের প্রতীক। এক সাথে আমরা কোনও মহিলা বা মেয়েকে পিছনে রাখব না!
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেন, ডিএসই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে লিঙ্গ সমতায় এবং বৈচিত্র্যকরণে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তির দক্ষ ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের সাহায্যে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, সরকারি পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস এবং টেকসই অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল আনতে পারে।
বর্তমানে এসএমই খাতে নারীদের অংশগ্রহণও ধীরে ধীরে বাড়ছে জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বলেন, অর্ধেক জনসংখ্যাকে ঘরে রেখে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে না। আপনি যদি আপনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পেতে চান তবে আপনাকে সম্পূর্ন জনসংখ্যাকে সক্রিয় করতে হবে।
নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার করছি জানিয়ে বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে আমরা নারীদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল চালু করেছি, বেনিফিশিয়ারি ওনার একাউন্টস পরিচালনার খরচ কমিয়েছি। আমরা বোর্ডে নারীদের অংশগ্রহণকেও প্রচার করছি
লিঙ্গ বৈষম্যের রোধ কাজ করার অঅহবান জানিয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের আইএফসি কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যান বলেন, গবেষণায় দেখা যায় যে নারী প্রতিভা বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে কম ব্যবহৃত অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক সম্পদগুলির মধ্যে রয়েছে, যার কোন মানে নেই। আইএফসির নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে যে নেতৃত্বে আরও বেশি নারী ইতিবাচকভাবে উচ্চতর পরিবেশগত, সামাজিক, এবং গভর্নেন্স (ইএসজি) স্ট্যান্ডার্ডের সাথে সংযুক্তির ফলে ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা উন্নত হয় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ হয়। সেজন্য আমরা বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক এবং এসইসিও এর মতো উন্নত অংশীদারদের সাথে লিঙ্গ বৈষম্য শনাক্ত করতে, বিভিন্ন সংকটে সাড়া দিতে এবং লিঙ্গ বৈষম্যের প্রসারণ রোধ করতে কাজ করছি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩-এর থিম ছিল “ডিজিটাল: ইনোভেশন এন্ড টেকনোলজি ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি,” যা রূপান্তরকারী প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার অগ্রগতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া নারী ও মেয়েদের স্বীকৃতি দেয় এবং উদযাপন করে। এই ইভেন্টে এই বছরের থিমের উপর প্যানেল আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন প্রাভা হেলথ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার এবং সিইও সিলভানা কাদের সিনহা, এজিল মাইন্ডস গ্রুপ ডিরেক্টর এবং গ্রুপ সিওও জিশান কিংশুক হক, সহজ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মালিহা কাদির, সেবা.এক্সওয়াইজেড সিইও আদনান ইমতিয়াজ এবং বর্ণ আইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা প্রিয়াঙ্কা রানী সুর। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন আইএফসির সিনিয়র অপারেশন অফিসার আশানি চানুকা এলেস।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন ইউএন গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (ইউএনজিসি) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ফারুক সোবহান, ইউএন উইমেনের উইমেনস ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট (ডব্লিউইই) লিড তপতী সাহা, আইএফসির পরিবেশ, সামাজিক ও গভর্নেন্স অফিসার লোপা রহমান এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার।
বিজনেস আওয়ার/১৫ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড
