ঢাকা , সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিসাব মান মানলে ব্যাংকের সম্পদ কমবে ৪০ ভাগ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩
  • 85

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের কোন ব্যাংক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষায় আন্তর্জাতিক হিসাব মান বা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) মানা হয়না। এতে আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে আসে না বলে জানিয়েছেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া। আরও বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসরণ করা হলে, তাদের সম্পদ ৪০ শতাংশ কমে যাবে।

রাজধানীর পল্টনে সোমবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

অনুষ্ঠানে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা কি কখনো পাওয়া যাবে? যদি আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে আমরা যেটা দেখি খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। বরং দুই শতাংশ জমা দিয়ে এগুলোকে আবার নিয়মিত ঋণে রূপান্তর করা হয়।

আরও বলেন, এই দুই শতাংশ দিয়ে তো ইন্টারেস্টও (সুদ আয়) আসে না। ইন্টারেস্ট তার থেকে অনেক বেশি। সুতরাং ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন না, টাকাও পাচ্ছেন না, কিন্তু রিসিডিউল করে রেগুলার করছেন। সে তখন আবার আর এক ব্যাংকে গিয়ে লোন নিচ্ছে।

এফআরসিতে জনবলের ঘাটতি আছে জানিয়ে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, নতুন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি হয়ে গেলে, তিনি প্রথমেই পুঁজিবাজারের প্রতি মনোযোগ দেবেন।

হিসাববিবরণীকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে অনেক কারসাজি করা হয়ে থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইপিওতে অনেক দূর্বল কোম্পানি চলে আসে। দেখা যায়, আইপিওতে আসার আগে ৩ বছর টানা মুনাফা বাড়ছে, আইপিওর বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হচ্ছে। কিন্তু আইপিওতে আসার পর ওই মুনাফা ক্রমাগত কমতে থাকে।

পুঁজিবাজারে কারসাজি হলে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উক্তি করে তিনি বলেন, এখানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে, অথচ তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ‌তিনি তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের বস্তুনিষ্টতা নিয়ে সন্দেহের ইঙ্গিত দেন। এবিষয় আরও বলেন, কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভেলিডিটেশন যাচাই করা খুব জরুরি।

হিসাববিবরণী নিরীক্ষায় স্বচ্ছতা বাড়াতে তারা নিরীক্ষকদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এর পর থেকে এফআরসিতে অনিবন্ধিত কোনো নিরীক্ষক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্যাংক, এনবিএফআই, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির নিরীক্ষা করতে পারবে না। তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের মধ্য থেকে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিরীক্ষার জন্য আলাদা প্যানেল তৈরি করে দেওয়া হবে।

আরও বলেন, কোনো কোম্পানির রাজস্ব ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সেই কোম্পানি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে ৩ হাজার ৪০০-এর মতো। এর বাইরে ২ হাজার ৫০০-এর মতো ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো এফআরসির আওতায় আসবে।

জীবন বিমা কোম্পানিগুলো কখনো প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করে না জানিয়ে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, তারা একটা অ্যাকাউন্ট করে, সেটি হলো রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট। কিন্তু আইএএস-১ স্পষ্ট বলা আছে, প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করতে হবে। আপনার কোম্পানির নেচার যাই হোক না কেন। কিন্তু এরা এটা করে না। এমনকি আমরা চিঠি দেয়, তার রেসপন্সও করে না। অন্যান্য রেগুলেটর কিছুটা হলেও রেসপন্স করে। এই একটা সেক্টর, যেটা থেকে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো রেসপন্স পায়নি।

আরও বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পায়। কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেটের হাজারো রেগুলেশনস এবং ডকুমেন্টেশনের কারণে কোম্পানিগুলো সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী নয়। এই সমস্যাগুলো এখনও আমাদের রয়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে আনা আমাদের জন্য অনেক জরুরি। তাহলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নতি হবে।

বিজনেস আওয়ার/২০ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

হিসাব মান মানলে ব্যাংকের সম্পদ কমবে ৪০ ভাগ

পোস্ট হয়েছে : ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মার্চ ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের কোন ব্যাংক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষায় আন্তর্জাতিক হিসাব মান বা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) মানা হয়না। এতে আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে আসে না বলে জানিয়েছেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া। আরও বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোতে আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুসরণ করা হলে, তাদের সম্পদ ৪০ শতাংশ কমে যাবে।

রাজধানীর পল্টনে সোমবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জিয়াউর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

অনুষ্ঠানে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা কি কখনো পাওয়া যাবে? যদি আদায় করতে সক্ষম হয় তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে আমরা যেটা দেখি খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। বরং দুই শতাংশ জমা দিয়ে এগুলোকে আবার নিয়মিত ঋণে রূপান্তর করা হয়।

আরও বলেন, এই দুই শতাংশ দিয়ে তো ইন্টারেস্টও (সুদ আয়) আসে না। ইন্টারেস্ট তার থেকে অনেক বেশি। সুতরাং ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন না, টাকাও পাচ্ছেন না, কিন্তু রিসিডিউল করে রেগুলার করছেন। সে তখন আবার আর এক ব্যাংকে গিয়ে লোন নিচ্ছে।

এফআরসিতে জনবলের ঘাটতি আছে জানিয়ে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, নতুন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি হয়ে গেলে, তিনি প্রথমেই পুঁজিবাজারের প্রতি মনোযোগ দেবেন।

হিসাববিবরণীকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে অনেক কারসাজি করা হয়ে থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইপিওতে অনেক দূর্বল কোম্পানি চলে আসে। দেখা যায়, আইপিওতে আসার আগে ৩ বছর টানা মুনাফা বাড়ছে, আইপিওর বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হচ্ছে। কিন্তু আইপিওতে আসার পর ওই মুনাফা ক্রমাগত কমতে থাকে।

পুঁজিবাজারে কারসাজি হলে প্রান্তিক বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন উক্তি করে তিনি বলেন, এখানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে, অথচ তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ‌তিনি তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের বস্তুনিষ্টতা নিয়ে সন্দেহের ইঙ্গিত দেন। এবিষয় আরও বলেন, কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ভেলিডিটেশন যাচাই করা খুব জরুরি।

হিসাববিবরণী নিরীক্ষায় স্বচ্ছতা বাড়াতে তারা নিরীক্ষকদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এর পর থেকে এফআরসিতে অনিবন্ধিত কোনো নিরীক্ষক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্যাংক, এনবিএফআই, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো কোম্পানির নিরীক্ষা করতে পারবে না। তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের মধ্য থেকে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিরীক্ষার জন্য আলাদা প্যানেল তৈরি করে দেওয়া হবে।

আরও বলেন, কোনো কোম্পানির রাজস্ব ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সেই কোম্পানি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে ৩ হাজার ৪০০-এর মতো। এর বাইরে ২ হাজার ৫০০-এর মতো ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো এফআরসির আওতায় আসবে।

জীবন বিমা কোম্পানিগুলো কখনো প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করে না জানিয়ে হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, তারা একটা অ্যাকাউন্ট করে, সেটি হলো রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট। কিন্তু আইএএস-১ স্পষ্ট বলা আছে, প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট করতে হবে। আপনার কোম্পানির নেচার যাই হোক না কেন। কিন্তু এরা এটা করে না। এমনকি আমরা চিঠি দেয়, তার রেসপন্সও করে না। অন্যান্য রেগুলেটর কিছুটা হলেও রেসপন্স করে। এই একটা সেক্টর, যেটা থেকে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো রেসপন্স পায়নি।

আরও বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পায়। কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেটের হাজারো রেগুলেশনস এবং ডকুমেন্টেশনের কারণে কোম্পানিগুলো সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী নয়। এই সমস্যাগুলো এখনও আমাদের রয়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে আনা আমাদের জন্য অনেক জরুরি। তাহলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নতি হবে।

বিজনেস আওয়ার/২০ মার্চ, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: