মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় অভিনেতা খালেকুজ্জামান (৭২) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মঙ্গলবার সাড়ে ১১টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তার ছেলে জিসান এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কোনও সমস্যা ছিলো না বাবার। দুদিন আগে জ্বর হয়েছিলো, সেটাও ভালো হয়ে যায়। একেবারে হুট করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
আরও বলেন, খালেকুজ্জামানের প্রথম জানাজা বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিকেতনে। এরপর বিমানবন্দর প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে বাবা-মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
খালেকুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই। নির্মাতা শিহাব শাহীন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বলেন, আমার অনেক প্রিয়, অনেক দিনের সহকর্মী খালেক ভাই আজ সকালে মারা গেছেন। সেই ২০০৭ সাল থেকে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ দিয়ে খালেক ভাইয়ের সঙ্গে পথচলা। অসংখ্য কাজ হয়েছে খালেক ভাইয়ের সাথে। আজ ছেড়ে চলে গেলেন। দারুণ ভালো একজন মানুষ ছিলেন খালেকুজ্জামান!
অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ফেসবুকে লিখেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমাদের সকলের প্রিয় সহকর্মী খালেকুজ্জামান আজ সকালে মারা গেছেন। সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।
অভিনেত্রী মনিরা মিঠু লিখেছেন, একজন গুণী শিল্পী এবং ভালো মানুষ অভিনেতা খালেকুজ্জামান ভাই আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ ওনাকে বেহেশত নসীব করুন, আমিন।
অভিনেত্রী তানভিন সুইটি শোক প্রকাশ করে বলেছন, আজ সকালে অভিনেতা খালেকুজ্জামান আঙ্কেল মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অনেক ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। সব সময় হাসি থাকতো তার মুখে। এতো ভালো ব্যাবহার ছিলো তার। সবাই আমরা একসময় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো এবং এটাই বড় সত্য। আঙ্কেলের আত্নার শান্তি কামনা করি। আমিন।
উল্লেখ্য, খালেকুজ্জামানের বাবা ডা. শামসুজ্জামান ছিলেন ব্রিটিশ রেলওয়ের মেডিক্যাল অফিসার। মা শায়েস্তা আক্তার জামান ছিলেন গৃহিনী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য ও চারুকলা বিভাগের প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের একজন তিনি। দেশ স্বাধীনের বেশ কয়েকবছর পর খালেকুজ্জামান ১৯৭৫ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। তার আগে স্কুল কলেজ জীবনের তিনি অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন খালেকুজ্জামান। দেশ স্বাধীনের পর যুক্ত হন অভিনয়ে। ১৯৭৫ সালে তিনি বিটিভির তালিকাভূক্ত শিল্পী হন। বিটিভিতে তিনি প্রথম নওয়াজেশ আলী খানের প্রযোজনায় ‘সর্পভ্রমে রজ্জু’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিক নাটক ‘তমা’, ‘বড় বাড়ি’, ‘সময় অসময়’, ‘সুবর্ণ সময়’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে ‘অনিবার্ণ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন বিরতির পর মুরাদ পারভেজ’র ‘বৃহন্নলা’য় অভিনয় করেন। এরপর তিনি শিহাব শাহীনের ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’।