বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবককে হাত বেঁধে ২২ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পর সাদা কাগজে স্বাক্ষর তার রেখে বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবকের হাতে দড়ি দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করতে দেখা গেছে। এ সময় আরেকজন এসে ওই যুবকের পায়ের ওপর পা রেখে চাপ দিতে থাকেন। কিছু সময় পর এক ব্যক্তি একটি লাঠি দিয়ে ওই যুবকের পায়ের তালুতে মারতে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে অটোরিকশায় বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যান শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন।
অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু তিনি আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। পরে টাকা বাবদ শেখ হাসান আলী তার অটোরিকশাটি আমার কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ায় আলী অটোরিকশাটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন দেওয়ার পর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন আলী। তাই জানুয়ারি মাসে আমি অটোরিকশাটি অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেই। হঠাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগ্নে আবু সালেহসহ কয়েকজন আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যায় আমার বন্ধু প্রাইভেটকারচালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। আল আমিন এলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে বেঁধে নির্যাতন করেছে তারা। শরীরে সিগারেটের ছেঁকা ও আঙুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছে। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার ও মায়ের স্বাক্ষর এবং ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্ত নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, এভাবে মানুষ মানুষকে মারে না, আবু সালেহ চেয়ারম্যানের ভাগ্নে হওয়াতে, ক্ষমতা দেখিয়ে অনেক মানুষকে নির্যাতন করে। এসব বলে কোনো লাভ নেই। কেউ ভয়ে কোনো কথা বলতে চায় না।
আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষ করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি ছেলের নির্যাতনের বিচার চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেট কারচালক আল আমিন বলেন, ‘বন্ধুর ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।’
নির্যাতনের বিষয়ে রামপাল ৩নং বাইনতলা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগ্নে না।’
পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজনেস আওয়ার/২৯ মার্চ, ২০২৩/এএইচএ