ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুশাসনে বড় বাধা বিএসইসির জনবল সংকট

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • 66

রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজারে প্রাইমারি রেগুলেটর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৩৬০ জন জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এই ডিএসইসহ পুরো শেয়ারবাজারকে তদারকি করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) রয়েছে ১৬৪ জনের মানবসম্পদ। যাদেরকে তালিকাভুক্ত সাড়ে তিনশর বেশি কোম্পানির পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান, ক্রেডিট রেটিং অ্যাজেন্সি নিয়ে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে ১ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৪ জন দিয়ে তদারকি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কমিশনকে। যাতে কমিশন চাইলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না।

বিএসইসির জনবল সংকটের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই দৃশ্যমান। এ নিয়ে সব মহলেই কম বেশি সমালোচনা আছে। তারপরেও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এ সমস্যাটি এখনো সমাধান করা হয়নি। যাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল নিয়েই এগিয়ে যেতে হচ্ছে বিএসইসিকে। অথচ কাজের পরিধি কম হয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক হাজার জনবল রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত নিয়োগ দেওয়া হয়।

জনবলের সংকটের পাশাপাশি বিএসইসিতে কমিশনারদেরকে সঠিক মূল্যায়ন না করার অভিযোগ আছে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের মাসিক বেতন পৌনে ২ লাখ টাকা ও কমিশনারদের বেতন দেড় লাখ টাকা করে। অথচ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের খন্ডকালীন চাকরীতেও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ৬ লাখ টাকা মাসিক বেতন পান। যাকে বিএসইসির কমিশনারদের ন্যায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় না। এমনকি বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এর নির্বাহি প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) ডিরেক্টর জেনারেলের বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের থেকে বেশি।

বিএসইসির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এখানে চরম জনবল সংকট। এতো কম সংখ্যক জনবল দিয়ে পুরো শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রন করা সত্যিই কঠিন কাজ। দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতেই আরও বেশি জনবল দরকার। সেখানে নিয়মিত কাজের বাহিরে ভালো কোন উদ্যোগ নিতে জনবলের কোন বিকল্প নেই। এই বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু জনবলের সংকটের কথা মাথায় আসলেই দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয়।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ৫২টি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি কোম্পানির জন্য ১ জন করে অফিসার নিযুক্ত করা দরকার। কিন্তু আমাদের সেই জনবল নেই।

এক অনুষ্ঠানে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, বিএসইসির কাজের পরিসর বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (এনবিএফআই) নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। আর আমাদেরকে ব্যাংক, এনবিএফআই, বীমা কোম্পানিসহ ১ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করতে হয়। অথচ আমাদের মাত্র ৮৪ জনের মতো অফিসার। আর পিয়ন ও দারোয়ানসহ আমরা ১৬০ জন কাজ করি।

উল্লেখ্য, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন বিএসইসিতে জনবল বাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে গেছেন। তারা কমিশনে ৩৪১টি নতুন পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে পেরেছিলেন। তবে করোনাভাইরাসে টালমাটালের মধ্যে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন কর যেতে পারেননি। এখন বিষয়টি সার্ভিস রুলস প্রণয়নে আটকে আছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সুশাসনে বড় বাধা বিএসইসির জনবল সংকট

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজারে প্রাইমারি রেগুলেটর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৩৬০ জন জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এই ডিএসইসহ পুরো শেয়ারবাজারকে তদারকি করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) রয়েছে ১৬৪ জনের মানবসম্পদ। যাদেরকে তালিকাভুক্ত সাড়ে তিনশর বেশি কোম্পানির পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ান, ক্রেডিট রেটিং অ্যাজেন্সি নিয়ে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে ১ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৪ জন দিয়ে তদারকি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কমিশনকে। যাতে কমিশন চাইলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না।

বিএসইসির জনবল সংকটের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই দৃশ্যমান। এ নিয়ে সব মহলেই কম বেশি সমালোচনা আছে। তারপরেও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এ সমস্যাটি এখনো সমাধান করা হয়নি। যাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল নিয়েই এগিয়ে যেতে হচ্ছে বিএসইসিকে। অথচ কাজের পরিধি কম হয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েক হাজার জনবল রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত নিয়োগ দেওয়া হয়।

জনবলের সংকটের পাশাপাশি বিএসইসিতে কমিশনারদেরকে সঠিক মূল্যায়ন না করার অভিযোগ আছে। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের মাসিক বেতন পৌনে ২ লাখ টাকা ও কমিশনারদের বেতন দেড় লাখ টাকা করে। অথচ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের খন্ডকালীন চাকরীতেও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ৬ লাখ টাকা মাসিক বেতন পান। যাকে বিএসইসির কমিশনারদের ন্যায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় না। এমনকি বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এর নির্বাহি প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) ডিরেক্টর জেনারেলের বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের থেকে বেশি।

বিএসইসির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এখানে চরম জনবল সংকট। এতো কম সংখ্যক জনবল দিয়ে পুরো শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রন করা সত্যিই কঠিন কাজ। দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতেই আরও বেশি জনবল দরকার। সেখানে নিয়মিত কাজের বাহিরে ভালো কোন উদ্যোগ নিতে জনবলের কোন বিকল্প নেই। এই বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু জনবলের সংকটের কথা মাথায় আসলেই দুঃশ্চিন্তায় পড়তে হয়।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে ৫২টি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি কোম্পানির জন্য ১ জন করে অফিসার নিযুক্ত করা দরকার। কিন্তু আমাদের সেই জনবল নেই।

এক অনুষ্ঠানে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, বিএসইসির কাজের পরিসর বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (এনবিএফআই) নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে ৭ থেকে ৮ হাজার লোকবল রয়েছে। আর আমাদেরকে ব্যাংক, এনবিএফআই, বীমা কোম্পানিসহ ১ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করতে হয়। অথচ আমাদের মাত্র ৮৪ জনের মতো অফিসার। আর পিয়ন ও দারোয়ানসহ আমরা ১৬০ জন কাজ করি।

উল্লেখ্য, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিগত কমিশন বিএসইসিতে জনবল বাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে গেছেন। তারা কমিশনে ৩৪১টি নতুন পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে পেরেছিলেন। তবে করোনাভাইরাসে টালমাটালের মধ্যে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন কর যেতে পারেননি। এখন বিষয়টি সার্ভিস রুলস প্রণয়নে আটকে আছে।

বিজনেস আওয়ার/০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: