ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বগুড়ার সেই প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহার

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩
  • 44

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বগুড়ার আলোচিত সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে প্রত্যাহার করে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

রোববার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে নিজ কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক বিমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) করেছে।

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বের জেরে দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। ওই ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেদিন ঘটনার সময় কি ঘটেছিল অডিও ক্লিপটিতে উঠে এসেছে। তবে

তবে তার বিবৃতির সঙ্গে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের মিল না থাকায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি‌ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে একদিন পরেই প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করা হলো।

তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠানো হবে। কিন্তু মাউশি ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সংযুক্ত করেছে। এখন তদন্ত প্রতিবেদনে অন্য শিক্ষকেরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তাকে ওএসডি করার কোনও চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। তবে মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা তাকে ওএসডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তাদের দাবি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডির চিঠি ওয়েবসাইটে না দিয়ে সরাসরি স্কুলে পাঠানো কথা জানিয়েছে কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দুর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে রোববার অপরাহ্ণ থেকে তিনি নিজ কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক বিমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এমন কোনো চিঠি তিনি পাননি এবং বিষয়টি তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেছেন।

বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়ার এক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছিল।

শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ভিএম স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত ২০ মার্চ ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তার সহপাঠীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই রাতে (২০ মার্চ) বিচারকের মেয়ে ফেসবুকে তার সহপাঠীদের নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে তার চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন পরের দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ওই চার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে ডেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। সেখানে দুই অভিভাবককে পা ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। রাতে জেলা প্রশাসক গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হলে গত ২৩ মার্চ ওই বিচারককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। ঢাকায় গিয়ে বিচারক এই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একটি লিখিত বিবৃতি দেন। এরপরে তাদের ওই দিনের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ওই বিচারককে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধমক এবং হুমকি দিতে শোনা যায়।

বিজনেস আওয়ার/১০ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বগুড়ার সেই প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহার

পোস্ট হয়েছে : ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বগুড়ার আলোচিত সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে প্রত্যাহার করে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

রোববার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে নিজ কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক বিমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) করেছে।

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বের জেরে দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। ওই ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেদিন ঘটনার সময় কি ঘটেছিল অডিও ক্লিপটিতে উঠে এসেছে। তবে

তবে তার বিবৃতির সঙ্গে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের মিল না থাকায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি‌ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে একদিন পরেই প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করা হলো।

তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠানো হবে। কিন্তু মাউশি ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে সংযুক্ত করেছে। এখন তদন্ত প্রতিবেদনে অন্য শিক্ষকেরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তাকে ওএসডি করার কোনও চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। তবে মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা তাকে ওএসডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তাদের দাবি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডির চিঠি ওয়েবসাইটে না দিয়ে সরাসরি স্কুলে পাঠানো কথা জানিয়েছে কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দুর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে রোববার অপরাহ্ণ থেকে তিনি নিজ কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক বিমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এমন কোনো চিঠি তিনি পাননি এবং বিষয়টি তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেছেন।

বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়ার এক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটেছিল।

শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ভিএম স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত ২০ মার্চ ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তার সহপাঠীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই রাতে (২০ মার্চ) বিচারকের মেয়ে ফেসবুকে তার সহপাঠীদের নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে তার চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন পরের দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ওই চার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে ডেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। সেখানে দুই অভিভাবককে পা ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। রাতে জেলা প্রশাসক গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হলে গত ২৩ মার্চ ওই বিচারককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। ঢাকায় গিয়ে বিচারক এই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একটি লিখিত বিবৃতি দেন। এরপরে তাদের ওই দিনের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ওই বিচারককে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধমক এবং হুমকি দিতে শোনা যায়।

বিজনেস আওয়ার/১০ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: