ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনাদোষে ২৭ মাস কারাভোগ, এসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
  • 45

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মাছ শিকারী জেলে মো. হোসেনকে বিনাদোষে ২৭ মাস কারাগারে বন্দি করে ও দুই মেয়েকে বিদ্যুতের শক দিয়ে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদারসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল (রামগতি) আদালতে ভুক্তভোগী এ মামলা দায়ের করেন।

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন মামলাটি আমলে নিয়েছেন। এটি তদন্ত করে আগামী ৬ জুন প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য সিআইডি লক্ষ্মীপুর শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী পারুল বেগমকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী মো. হোসেন ২৭ মাস জেল খেটেছেন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি জানতে পারেন, তার স্ত্রী ঢাকায় একটি বাসায় আত্মহত্যা করেছেন। হোসেন গ্রেফতার হওয়ার ৫ দিন পর তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। স্ত্রীর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আদালতের নির্দেশনায় সিআইডির তদন্তে ঘটনার সত্যতা উন্মোচিত হয়। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৪ এপ্রিল একই আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন হত্যা মামলা থেকে ভুক্তভোগী হোসেনকে রেহাই দেয়।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তপাদার বর্তমানে লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন হোসনের শ্বশুর মো. বাহার মিস্ত্রি, তার স্ত্রী হাজেরা বেগম ও ছেলে মো. বাবুল। পারুলের বাবা বাহার উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নের বড়খেরী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে তিনি উপজেলার চরগাজী বয়ারচরের দিদার বাজার এলাকায় বসবাস করেন। এই মামলার বাদী তিনি।

মো. হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মা মারা গেছেন, আমি মাটি দিতে পারিনি। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। আমার মেয়েদেরকে বিদ্যুতের শক দিয়ে এসআই মজিবুর আমার বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। এ জন্য আদালতে মামলা করেছি।

অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদারের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমি মামলাটি অল্প কিছুদিন তদন্ত করেছি। তখন হোসেনের স্ত্রী বেঁচে থাকার ঘটনাটি জানতাম না। পরে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে। তারা ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। আর হোসেনের মেয়েদেরকে বিদ্যুতের শক দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

মামলার এজাহার সূত্র ও আইনজীবী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বাড়ির পাশে সুজন গ্রামে বাংলালিংক টাওয়ারের পরিত্যক্ত টয়লেটে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাতের তিনটি তাবিজ দেখে পারুলের মরদেহ বলে চিহ্নিত করেন তার মা হাজেরা। পরে পারুলের বাবা মো. বাহার বাদী হয়ে জামাই হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ হোসেনকে গ্রেফতার করে লক্ষ্মীপুর আদালতে পাঠান।

এর প্রায় ২৭ মাস পর জামিনে বের হয়ে হোসেন স্ত্রী পারুলের আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি ঢাকার লালবাগ থানায় স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা ও হাসপাতালের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। তখন থানা থেকে জানানো হয়, পারুলের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার ভাই মো. বাবুলের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। সব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে ২০২২ সালের ১০ মার্চ হোসেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী রামগতি আদালতে হাজির হন। আদালতের বিচারক নুসরাত জামান কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ১৩ মার্চ হত্যা মামলায় জবানবন্দি দেওয়া হোসেনের দুই মেয়ে ঝুমুর আক্তার ও নূপুর আক্তারকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঝুমুরকে উপস্থিত করা হয়।

তখন ঝুমুর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবুর রহমান তফাদারের শেখানো কথাতেই সে তার বাবার বিরুদ্ধে জবাবন্দি দিয়েছে। এতে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত সিআইডি লক্ষ্মীপুর জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন সরদারকে নির্দেশনা দেন।

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা আশরাফ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম পারুল অন্য কোনো ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন। কিন্তু স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে ১৪ অক্টোবর হোসেনকে গ্রেফতার করে রামগতি থানা পুলিশ। তখন বাদী একজন অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহকে নিজের মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করে হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগে মামলা করেছে। তদন্তকালীন ঘটনাটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে মেয়ে জীবিত থাকার বিষয় সত্যতা গোপন রেখে মিথ্যে মামলায় হোসেনকে হয়রানি করার অভিযোগে বাদী বাহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা নারীর মৃত্যুর রহস্য ভবিষ্যতে উদঘাটিত হলে মামলাটি পুনঃরুজ্জীবিত করা হবে।

হোসেন জানান, তিনি পেশায় একজন জেলে। তিনি রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা। মৌসুমে বেশিরভাগ সময়ই তাকে নদীতে থাকতে হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তার মা সৈয়দা খাতুন ও স্ত্রী পারুলের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে রাগ করে পারুল তার বাবার বাড়িতে চলে যান। এর চার দিন পর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে না পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করেন তিনি। না পেয়ে স্ত্রীর খোঁজে তিনি থানায় একটি জিডিও করেন।

পারুলের বাবা মো. বাহার মিস্ত্রি বলেন, হাতের তিনটি তাবিজ দেখে পারুলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছিল। আমরা জানতাম না পারুল ঢাকাতে আছে। ঢাকায় তার মৃত্যুর বিষয়টিও অজানা ছিল। আমার ছেলে বাবুলের কাছে সেই মরদেহ হস্তান্তরের কথা জানালেও তা সত্য নয়। জানতে চাইলে বাবুল এ বিষয়ে আমার কাছে এমনটিই জানিয়েছে। আমরা যদি সত্যটা জানতাম তাহলে কখনোই হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতাম না।

এ বিষয়ে মো. বাবুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল নম্বর চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান বাহার।

প্রসঙ্গত, হোসেন আর পারুলের দ্বিতীয় সংসার ছিল। পারুলের প্রথম স্বামীর নাম আবুল কালাম। সেই অনুযায়ী ঢাকার লালবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা ও ময়নাতদন্তের প্রত্যয়নপত্রে প্রথম স্বামীর নাম লেখা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৭ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিনাদোষে ২৭ মাস কারাভোগ, এসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মাছ শিকারী জেলে মো. হোসেনকে বিনাদোষে ২৭ মাস কারাগারে বন্দি করে ও দুই মেয়েকে বিদ্যুতের শক দিয়ে জবানবন্দি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদারসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল (রামগতি) আদালতে ভুক্তভোগী এ মামলা দায়ের করেন।

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন মামলাটি আমলে নিয়েছেন। এটি তদন্ত করে আগামী ৬ জুন প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য সিআইডি লক্ষ্মীপুর শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী পারুল বেগমকে হত্যার অভিযোগে তার স্বামী মো. হোসেন ২৭ মাস জেল খেটেছেন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি জানতে পারেন, তার স্ত্রী ঢাকায় একটি বাসায় আত্মহত্যা করেছেন। হোসেন গ্রেফতার হওয়ার ৫ দিন পর তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। স্ত্রীর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। আদালতের নির্দেশনায় সিআইডির তদন্তে ঘটনার সত্যতা উন্মোচিত হয়। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৪ এপ্রিল একই আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন হত্যা মামলা থেকে ভুক্তভোগী হোসেনকে রেহাই দেয়।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তপাদার বর্তমানে লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন হোসনের শ্বশুর মো. বাহার মিস্ত্রি, তার স্ত্রী হাজেরা বেগম ও ছেলে মো. বাবুল। পারুলের বাবা বাহার উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়নের বড়খেরী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে তিনি উপজেলার চরগাজী বয়ারচরের দিদার বাজার এলাকায় বসবাস করেন। এই মামলার বাদী তিনি।

মো. হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মা মারা গেছেন, আমি মাটি দিতে পারিনি। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। আমার মেয়েদেরকে বিদ্যুতের শক দিয়ে এসআই মজিবুর আমার বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। এ জন্য আদালতে মামলা করেছি।

অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তপাদারের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমি মামলাটি অল্প কিছুদিন তদন্ত করেছি। তখন হোসেনের স্ত্রী বেঁচে থাকার ঘটনাটি জানতাম না। পরে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে। তারা ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। আর হোসেনের মেয়েদেরকে বিদ্যুতের শক দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।

মামলার এজাহার সূত্র ও আইনজীবী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বাড়ির পাশে সুজন গ্রামে বাংলালিংক টাওয়ারের পরিত্যক্ত টয়লেটে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাতের তিনটি তাবিজ দেখে পারুলের মরদেহ বলে চিহ্নিত করেন তার মা হাজেরা। পরে পারুলের বাবা মো. বাহার বাদী হয়ে জামাই হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ হোসেনকে গ্রেফতার করে লক্ষ্মীপুর আদালতে পাঠান।

এর প্রায় ২৭ মাস পর জামিনে বের হয়ে হোসেন স্ত্রী পারুলের আত্মহত্যার ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি ঢাকার লালবাগ থানায় স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা ও হাসপাতালের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। তখন থানা থেকে জানানো হয়, পারুলের মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার ভাই মো. বাবুলের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। সব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে ২০২২ সালের ১০ মার্চ হোসেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী রামগতি আদালতে হাজির হন। আদালতের বিচারক নুসরাত জামান কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ১৩ মার্চ হত্যা মামলায় জবানবন্দি দেওয়া হোসেনের দুই মেয়ে ঝুমুর আক্তার ও নূপুর আক্তারকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া ঝুমুরকে উপস্থিত করা হয়।

তখন ঝুমুর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবুর রহমান তফাদারের শেখানো কথাতেই সে তার বাবার বিরুদ্ধে জবাবন্দি দিয়েছে। এতে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত সিআইডি লক্ষ্মীপুর জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ উদ্দিন সরদারকে নির্দেশনা দেন।

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা আশরাফ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম পারুল অন্য কোনো ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবর ঢাকার লালবাগ এলাকার একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন। কিন্তু স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে ১৪ অক্টোবর হোসেনকে গ্রেফতার করে রামগতি থানা পুলিশ। তখন বাদী একজন অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহকে নিজের মেয়ে হিসেবে শনাক্ত করে হোসেনের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগে মামলা করেছে। তদন্তকালীন ঘটনাটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে মেয়ে জীবিত থাকার বিষয় সত্যতা গোপন রেখে মিথ্যে মামলায় হোসেনকে হয়রানি করার অভিযোগে বাদী বাহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা নারীর মৃত্যুর রহস্য ভবিষ্যতে উদঘাটিত হলে মামলাটি পুনঃরুজ্জীবিত করা হবে।

হোসেন জানান, তিনি পেশায় একজন জেলে। তিনি রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা। মৌসুমে বেশিরভাগ সময়ই তাকে নদীতে থাকতে হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তার মা সৈয়দা খাতুন ও স্ত্রী পারুলের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে রাগ করে পারুল তার বাবার বাড়িতে চলে যান। এর চার দিন পর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে না পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করেন তিনি। না পেয়ে স্ত্রীর খোঁজে তিনি থানায় একটি জিডিও করেন।

পারুলের বাবা মো. বাহার মিস্ত্রি বলেন, হাতের তিনটি তাবিজ দেখে পারুলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছিল। আমরা জানতাম না পারুল ঢাকাতে আছে। ঢাকায় তার মৃত্যুর বিষয়টিও অজানা ছিল। আমার ছেলে বাবুলের কাছে সেই মরদেহ হস্তান্তরের কথা জানালেও তা সত্য নয়। জানতে চাইলে বাবুল এ বিষয়ে আমার কাছে এমনটিই জানিয়েছে। আমরা যদি সত্যটা জানতাম তাহলে কখনোই হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতাম না।

এ বিষয়ে মো. বাবুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল নম্বর চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান বাহার।

প্রসঙ্গত, হোসেন আর পারুলের দ্বিতীয় সংসার ছিল। পারুলের প্রথম স্বামীর নাম আবুল কালাম। সেই অনুযায়ী ঢাকার লালবাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা ও ময়নাতদন্তের প্রত্যয়নপত্রে প্রথম স্বামীর নাম লেখা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১৭ এপ্রিল, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: