শেয়ারবাজারে আসছে তালিকাভুক্ত ২৪ ব্যাংকের ১৪২ কোটি বোনাস শেয়ার। যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতি ও ব্যাংকগুলোর বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনক্রমে তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে পাঠানো হবে। এতে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়বে। যে শেয়ারগুলোর বর্তমানে বাজার দর রয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
দেখা গেছে, ২০২২ সালের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে ৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এছাড়া ২০টি ব্যাংকের পর্ষদ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ ২০২২ সালের ব্যবসায় ২৪টি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার শেয়ারবাজারে যোগ হতে যাচ্ছে।
তালিকাভুক্ত ২৪ ব্যাংকের পর্ষদ ২০২২ সালের ব্যবসায় ১৪২ কোটি ১৮ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪টি বোনাস শেয়ার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৪০ টাকার পরিশোধিত মূলধন বাড়বে।
একইসময়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টির পর্ষদ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ব্যাংকগুলোর পর্ষদ মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ বোনাস শেয়ারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে নগদ লভ্যাংশে কড়াকড়ি আরোপের আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ব্যবসায় ব্যাংকগুলো ২২০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৫টি বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। ওই বছরের ব্যবসায় শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল ১৬টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর ৮টি ব্যাংকের পর্ষদ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ব্যবসায় ২৪টি ব্যাংকের বোনাস শেয়ার শেয়ারবাজারে যোগ হয়েছিল।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার দেওয়ার বিষয়টি একটু অন্য রকম। অনেক ব্যাংককে ব্যাসেল-২ এর শর্ত পরিপালনে বোনাস শেয়ার দিতে হচ্ছে। তবে অনেক ব্যাংকের নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাও নেই। একটা পর্যায়ে গিয়ে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। তারপরেও বোনাস শেয়ারের কারনে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছরই বোনাস শেয়ারের বড় চাপ বাজারে আসে।
এবার ব্যাংকগুলোর ঘোষিত বোনাস শেয়ারগুলোর বর্তমান (০৯ মে) বাজার দর রয়েছে ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এই শেয়ার শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া হলেও তা সমন্বয় হয়ে প্রাপ্তি প্রায় শূন্য হয়ে যায়। কারন বোনাস শেয়ার রেকর্ড ডেটের দরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এতে বোনাস শেয়ার পাওয়ার আগের এবং সমন্বয় পরবর্তী বোনাস শেয়ারসহ দর একই হয়ে যায়।
উদাহরন স্বরূপ : কোন একটি ব্যাংকের পর্ষদ ৫% বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যার রেকর্ড ডেট ছিল ৭ মে এবং ওইদিন ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিল ১২ টাকা। কিন্তু রেকর্ড ডেট এর পরের দিন শেয়ারটি ৫% বোনাস শেয়ার সমন্বয় করে ১১.৪০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ রেকর্ড ডেটের দিন ১টি শেয়ারের যে দর ছিল, তা পরের দিন ৫% বোনাস শেয়ার সমন্বয় করে কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, রেকর্ড ডেটের দিন ১টি শেয়ারের যে দর ছিল, পরের দিন বোনাস শেয়ারসহ ১.০৫টি শেয়ারের দর সমান হয়েছে।
নিম্নে ব্যাংকগুলোর ২০২২ সালের ব্যবসায় পরিচালনা পর্ষদের ঘোষিত বোনাস শেয়ারের তথ্য তুলে ধরা হল-
ব্যাংকের নাম | লভ্যাংশ | বোনাস শেয়ারের সংখ্যা | বাজার দর (কোটি টাকায়) |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ১২.৫% বোনাস | ১৩৪১৩৭১৯১ | ৩৯৪.৩৬ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৭.৫% বোনাস | ১১২২৪৩৯০০ | ৪৩২.১৪ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক | ১০% বোনাস | ১০৪৬০০৮১২ | ১০২.৫১ |
উত্তরা ব্যাংক | ১৪% বোনাস | ৯০১২৩৪৬৯ | ১৯৮.২৭ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ১০% বোনাস | ৮৯৩৭৪৫২২ | ১৪৮.৩৬ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৭.৫% বোনাস | ৫২১৮১২৫০ | ৩২৬.৬৫ |
শাহজালাল ব্যাংক | ৩% বোনাস | ৩২৪১৬৫৫৪ | ৬০.৯৪ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ২% বোনাস | ২১৬৯৭৫৫৮ | ২৯.৫১ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ৭.৫% বোনাস | ৮৬০৫৩৩৩৫ | ১২২.২০ |
যমুনা ব্যাংক | ৮.৫% বোনাস | ৬৩৬৮৪১৮০ | ১৪৫.৮৪ |
সিটি ব্যাংক | ২% বোনাস | ২৪০১২১৩৫ | ৫২.৩৫ |
এনআরবিসি ব্যাংক | ৪.৫% বোনাস | ৩৫৬৮৩৪৭৩ | ৬২.৮০ |
এনসিসি ব্যাংক | ৫% বোনাস | ৫২৮৭৭২৯০ | ৭২.৯৭ |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ১০% বোনাস | ৭৭৮৩৮৮১৩ | ২৭১.৬৬ |
আল-আরাফাহ ব্যাংক | ৩% বোনাস | ৩১৯৪৭০৬৫ | ৮০.৫১ |
ঢাকা ব্যাংক | ৬% বোনাস | ৫৬৯৭৭৪৮৫ | ৭৫.২১ |
এবি ব্যাংক | ২% বোনাস | ১৭২১৮২৭৭ | ১৭.০৫ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ২.৫% বোনাস | ২৬৫৫১৮৬৯ | ২৩.৩৭ |
স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক | ৫% বোনাস | ৫১৭০৭৭১৪ | ৬৩.৬০ |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ৪% বোনাস | ৪৯৪৫৯৯২৬ | ৬৮.২৫ |
ইউসিবি | ৫% বোনাস | ৭০৩১১৮৩১ | ৯১.৪১ |
আইএফআইসি ব্যাংক | ২.৫% বোনাস | ৪৪৬৪৭৭৭৩ | ৫১.৩৪ |
ওয়ান ব্যাংক | ৫% বোনাস | ৪৯০৩৭১২৪ | ৪৯.০৪ |
গ্লোবাল ব্যাংক | ৫% বোনাস | ৪৭০২০৯৩৮ | ৪২.৩২ |
মোট | ১৪২১৮০৪৪৮৪টি | ২৯৮২.৬৬ কোটি টাকা |
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, পরিচালকদের বোনাস শেয়ার নিয়ে খামখেয়ালিমূলক সিদ্ধান্তের কারনেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে নগদ লভ্যাংশে কড়াকড়ি আরোপের কারনে বোনাস শেয়ার কমে এসেছে।
এবার সবচেয়ে বেশি বোনাস শেয়ার দেবে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকটি শেয়ারহোল্ডারদের ১২.৫০ শতাংশ হারে ১৩ কোটি ৪১ লাখ বোনাস শেয়ার দেবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ কোটি ২২ লাখ বোনাস শেয়ার দেবে ব্র্যাক ব্যাংক। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক দেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ কোটি ৪৬ লাখ বোনাস শেয়ার।
বিজনেস আওয়ার/১০ মে, ২০২৩/আরএ