1. [email protected] : anjuman : anjuman
  2. [email protected] : user : user
  3. [email protected] : Admin : Admin
  4. [email protected] : Nayan Babu : Nayan Babu
প্রতিবন্ধী রোগীর পেটের ভিতর ছিল ২৩টি কলম
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

প্রতিবন্ধী রোগীর পেটের ভিতর ছিল ২৩টি কলম

  • পোস্ট হয়েছে : মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩
print sharing button

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: মানসিক প্রতিবন্ধী আব্দুল মোতালেবের পেট থেকে বিনা অস্ত্রোপচারে দুই দফায় মোট ২৩টি কলম বের করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তার পেট থেকে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে দ্বিতীয় বার আরও আটটি কলম বের করে আনেন চিকিৎসকরা।

এ নিয়ে দুই দফায় অস্ত্রোপচার ছাড়াই মোট ২৩টি কলম বের করা হলো ওই রোগীর পেট থেকে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) ওই রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করা হয়।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ও এন্ডোস্কোপি করা চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম ও কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মেডিকেল সায়েন্সের ইতিহাসে বিনা অস্ত্রোপচারে রোগীর পেট থেকে এতগুলো আস্ত কলম বের করার ঘটনা এটিই প্রথম বলে দাবি করেছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর পেট থেকে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছিলেন চিকিৎসকরা।

ভুক্তভোগী রোগী মোতালেব হোসেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খুকনি আটার দাগ গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। মোতালেব ৪-৫ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এসব কলম আস্ত গিলে খেয়েছেন বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে তার পেট থেকে আরও আটটি কলম বের করা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম তার পেটে আর চারটি কলম আছে। কিন্তু আজ বের করার সময় দেখি আটটি। বর্তমানে তার পেটে আর কোনো কলম নেই এবং এখন সে সুস্থ আছে। কাল থেকে তাকে মুখ দিয়ে খাবার দেওয়া হবে এবং ৪-৫ দিনের মধ্যেই তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, রোগীটি প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিল। পরে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে তাকে আমার কাছে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, আমরা এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর এতগুলো কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই, এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নিই।

ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না, আমাদের জন্য দারুন চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটা। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল, কলমগুলো যেন কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।

তিনি বলেন, সেদিন ১৫টি কলম বের করা হলেও আমাদের ধারণা ছিল তার পেটের মধ্যে আরও চারটি কলাম রয়ে গেছে। কিন্তু আজ সোমবার আমরা কলমগুলো বের করার সময় দেখি চারটি নয়, তার পেটে আরও আটটি কলম রয়েছে। আমরা সেই আটটি কলম আজ বের করতে সক্ষম হয়েছি। এখন রোগী ভালো আছেন।

মোতালেবের মা লাইলী বেগম বলেন, এক বছর ধরে আমার ছেলে পেটের ব্যথায় ভুগছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করার পরও সে সুস্থ হয়নি। ১৫ দিন আগে সমস্যা আরও বাড়ে তার। তখন সে খেতে পারতো না, খালি বমি করতো। এ কারণে তাকে এ হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার পর তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেটের মধ্য থেকে কলমগুলো বের করে এনেছেন চিকিৎসকরা।

তিনি আরও বলেন, ১২ বছর ধরে আমার ছেলে মানসিক রোগী। তাকে মানসিক চিকিৎসকও দেখানো হয়েছে। সে কলমগুলো না বুঝেই খেয়ে ফেলেছে।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন তার পেট থেকে ১৫টি কলম বের করা হলেও আজ আরও আটটি কলম বের করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কোপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে মোট ২৩টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনি থেকে পাথর বের করাসহ অনেক কিছুই অপসারণে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দেশে প্রথমবারের মতো অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে এক যুবকের পেটের ভেতর থেকে ১৫টি আস্ত কলম বের করেছেন চিকিৎসকরা। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেন সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক দল চিকিৎসক।

বিজনেস আওয়ার/৩০মে, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের আরো সংবাদ