বিনোদন ডেস্ক: অভিনেতা সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন। সোমবার দুপুরে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাদেক বাচ্চু। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
শোক জানিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, চলচ্চিত্রের এমন ক্রান্তিলগ্নে সাদেক বাচ্চু ভাইকে এত তাড়াতাড়ি হারাব, এটা ভাবতেও পারিনি। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।
নায়ক আলমগীর বলেন, খবরটি শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। সাদেক বাচ্চু কতটা সফল বা শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন, সে বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সারা দেশের মানুষই এটি জানেন। আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন।
একটা বিষয় আমি বলতে চাই, সেটা হচ্ছে তাঁর ভাইবোনকে অনেক ছোট রেখেই সাদেক বাচ্চুর বাবা মারা যান। শুধু নিজের ভাইবোনদের প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিয়ে করেছেন অনেক পরে, যখন তাঁর সব ভাইবোন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষ হিসেবে কতটা ভালো ছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, মৃত্যু চিরন্তন সত্য। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। এমন গুণী শিল্পীর চলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। আমরা হারিয়েছি একজন সত্যিকারের ভালো মানুষকে। পরিচালকদের পক্ষ থেকে আমরা শোক প্রকাশ করছি।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, সাদেক বাচ্চু ভাই শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তিনি সব সময় আমাদের পরামর্শ দিতেন। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমরা তাঁর পাশে ছিলাম। তিনি এত দ্রুত চলে যাবেন, বুঝতে পারিনি। সবাই দোয়া করবেন, তাঁর আত্মা যেন শান্তি পায়।
কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন চিত্রনায়ক ওমর সানীর ভাষ্য- ‘সাদেক বাচ্চু একটা নাম, একজন অভিনেতা, একটা ইতিহাস, বহু বছর আগে হুমায়ুন ফরীদি ভাই যখন সুপারস্টার, তখন তার সিডিউল পাওয়া ভীষণ দুষ্কর। উত্তম আকাশ দাদা এবং আমি চিন্তা করলাম কি করা যায়, বাচ্চু ভাইয়ের কাছে গেলাম। বাচ্চু ভাই বলল, “উত্তম তুমি আমার সঙ্গে মজা করছো। তোমার ছবিতে নিবা, ওমর সানির সঙ্গে” আমি বললাম, “না বাচ্চু ভাই আপনি থাকবেন” সেই “আখেরি হামলা”, “মুক্তির সংগ্রাম”, “রঙিন রংবাজ” আরও বহু ছবি একসঙ্গে জুটি হলাম। আমার কাছে মনে হতো, একটা ভালো মানুষের ডিকশনারি, আপনি চলে গেলেন আমাদেরকে রেখে, আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুন।’
তার স্মৃতিচারণ করে অমিত বলেন, আমার ক্যারিয়ারে বহু বহু কাজ তার সঙ্গে করেছি। বাচ্চু ভাই অভিভাবক ছিলেন। আমি মিশেছি তার সঙ্গে ছোট ভাইয়ের মতো। তিনি ছিলেন আমার আত্মার আত্মীয়। সিম্পল জীবনযাপন ছিলো তার। অহমিকতা, দম্ভ দেখিনি কোনোদিন। তার সঙ্গে এত এত স্মৃতি, কোনোদিন এসব ভোলা যাবে না। কী চমৎকার মনের একজন ভালো মানুষ। আল্লাহ বাচ্চু ভাইকে বেহেস্ত নসীব করুক।
সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুর খবর শুনে আরিফিন শুভ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আরো একজন রত্ন হারালাম। উনি উনার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যা দিয়ে গেছেন, তা রিপ্লেসেবল না। অন্য কারো বা কিছুর মাধ্যমে রিপ্লেস করা যাবে না। একটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।
আরিফিন শুভ আরো বলেন, উনি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন, আমার সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসতেন। আমার সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব গভীরভাবে গল্প করতেন। আমি দেখেছি, উনি কীভাবে নীরবে সহশিল্পীদের সাহায্য করতেন। অনেকে বলেকয়ে করে, কিন্তু উনি নীরবে সহশিল্পীদের সাপোর্ট করতেন। আমার চোখে ভাসছে উনার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা। কারো সঙ্গে উনার কোনো ঝামেলা ছিল না। আমি তো দুদিন এসেছি এই ইন্ডাস্ট্রিতে। অন্য যে কারো কাছ থেকে শুনে দেখবেন, উনার সঙ্গে কারো মনোমালিন্য আছে—এ ব্যাপারেও আমার সন্দেহ আছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৫০০ সিনেমায় অভিনয় করা সাদেক বাচ্চু অভিনয়জীবনের সর্বোচ্চ অর্জন হিসেবে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি এ পুরস্কার পান।
বিজনেস আওয়ার/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০/এ