বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের দিনমজুর হাবিবুর রহমান ও রাবেয়া বেগম দম্পতির দুই সন্তান। জন্মের পাঁচ মিনিট পর থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আবির হুসাইন নাঈম (১৪) ও নূর হোসেন (৪) নামে আপন দুই ভাই। তাদের চোখ, নখসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, দেশে ও ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে পরিবারটির। এখন শুধু ভিটে-মাটিই সম্বল ওই পরিবারের। ভারতের ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পুনরায় সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য বললেও টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ দুই ভাই অল্প গরমও সহ্য করতে পারে না। কয়েক মিনিট পর পর তাদের শরীরে পানি ঢালতে হয়। রক্ত বের হতে থাকলে দেখা দেয় প্রবল শ্বাসকষ্ট। অনেক সময় হাত-পা কুঁকড়ে যায়। বিরল রোগে আক্রান্ত দুই শিশুকে দেশের বিভিন্নস্থান ছাড়াও ভারতে নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এখন পর্যন্ত রোগটিই শনাক্ত করা যায়নি। বর্তমানে টাকার অভাবে শিশু দুইটির সবরকম চিকিৎসা বন্ধ। পরিবারটি এখন নিঃস্ব। এক দিনমজুর বাবার পক্ষে সব হারিয়ে দুই সন্তানের চিকিৎসা করানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শিশু দুটি জন্মের পর থেকেই রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে। তারা অন্য শিশুদের সাথে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। মাটিতে পড়ে গেলে চামড়া ফেটে রক্ত বের হয় শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। শরীর সারাক্ষণ চুলকাতে থাকে।
শিশু দুটির মা রাবেয়া বেগম বলেন, দিনমজুর ও চা দোকান করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। এছাড়া দুটি প্রতিবন্ধী ভাতা আছে। টাকার অভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারি না। চোখের সামনে তাদের কষ্ট আর যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না। তাদের সাথে কেউ মেশে না। সারাক্ষণ বাড়ির মধ্যেই থাকে আর যন্ত্রণায় ছটফট করে। এসময় সন্তানদের চিকিৎসার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।
শিশু দুটির বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের প্রথম সন্তান সুরাইয়া এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মের ১০ মাস পর মারা যায়। এরপর দুইটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম নেয়। জন্মের পাঁচ মিনিট পরেই বড় ছেলে আবির হুসাইন নাঈম ও চার বছরের শিশু নূর হোসেনও এ রোগে আক্রান্ত হয়। বড় ছেলে ৮ পারা হাফেজি শেষ করেছে। মেজ মেয়ে সাদিয়া আক্তার সামিয়া (৯) একটি মাদরাসায় নূরানী বিভাগে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
তিনি আরও বলেন, ৬ বছর আগে দুই ছেলেকে নিয়ে ভারতের ভেলোর সিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। করোনার পর ওই হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। চোখের সামনে তাদের কষ্টের করুন দৃশ্য দেখা যায় না। আমি আমার সন্তানদের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, আমার গ্রামেই তাদের বাড়ি। তারা বিরল রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন সময়ে তাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের নামে দুটি ভাতাও করে দেওয়া হয়েছে। তাদের সরকারি কোনো সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতার চেষ্টা থাকবে। শিশু দুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
বিজনেস আওয়ার/১৪ জুন, ২০২৩/এএইচএ