ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহানবী (সা.) কতবার হজ করেছেন?

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩
  • 353

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: সামর্থবান প্রত্যেক নর-নারী মুসলমানের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। হজ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এটা মানুষকে পাপমুক্ত করে, এ জন্য মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের সামর্থ্য থাকলে বেশি বেশি হজ-ওমরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আমর ইবনে দিনার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরস্পর পালন (হজ সমাপনের পর ওমরাহ এবং ওমরাহর পর হজ) করবে, কেননা তা (এ দুটি) অভাব, অনটন ও পাপকে দূর করে দেয় যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৩০)

মহান আল্লাহর নির্দেশে হজ কিংবা ওমরাহ হজ পালনকালে কাবাগৃহ প্রদক্ষিণের নিয়ম চালু করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)।

এর পর থেকে হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিবছর মানুষ হজ করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর শিক্ষা ভুলে গেলেও কাবাগৃহের মর্যাদার ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সচেতন ছিল। নিজেদের মধ্যে যতই হানাহানি থাক না কেন, কাবার পবিত্র চত্বরে কেউ কখনো প্রতিহিংসায় মেতে ওঠেনি। পবিত্র হজের মৌসুমে সবাই বেশ সংযত থাকত।

আল্লামা ইবনে হজর (রহ.) বলেন, ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগেও আরবদের মধ্যে হজ করতে পারাকে গৌরবের মনে করা হতো। তারা সফরে কিংবা অসুস্থ না থাকলে প্রতিবছর হজ করার চেষ্টা করত। আমার প্রিয় নবীজি (সা.)-ও ইসলামের আবির্ভাবের আগে হজ করেছেন বলে ইতিহাস পাওয়া যায়। জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, তিনি জাহেলি যুগে মহানবী (সা.)-কে আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে দেখেছেন।

(ফাতহুল কাদির)
আল্লামা কাশমেরি (রহ.) বলেন, ইসলাম আসার আগে কুরাইশদের অভ্যাস ছিল তারা হজের মৌসুমে মুজদালিফায় অবস্থান করতেন, কিন্তু আরাফায় যেতেন না। তবে অন্য আরবরা আরাফার ময়দানেও যেত। আমার প্রিয় নবীজি (সা.)-ও তাদের সঙ্গে আরাফার ময়দানে যেতেন। (আল আরফুশ শাজ্জি : ২/২১৬)

নবুয়তপ্রাপ্তির পরও মহানবী (সা.) হজ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ করেছেন তিনবার, দুইবার হিজরতের আগে এবং একবার হিজরতের পর।

তিনি এই (শেষোক্ত) হজের সঙ্গে ওমরাহও করেছেন। তিনি তেষট্টিটি কোরবানির উট এনেছিলেন এবং ইয়েমেন থেকে আলী (রা.) অবশিষ্ট (৩৭টি) উটগুলো এনেছিলেন। আবু জাহালের একটি উটও ছিল এই উটগুলোর মধ্যে। একটি রুপার শিকল এর নাসারন্ধ্রে (নাকের ছিদ্রে) পরানো ছিল। তিনি এটাকেও জবাই করেছিলেন। প্রতিটি কোরবানির উট থেকে এক টুকরা করে গোশত আনার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন। এগুলো রান্না করা হলে তিনি এর ঝোল পান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৫)

কিন্তু হিজরতের পরও মহানবী (সা.) হজ করেছিলেন একবার। সেটাই ছিল নবীজি (সা.)-এর শেষ হজ। কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার ওমরাহ আদায় করেছেন? তিনি বলেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ওমরাহ জুলকাদা মাসে যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল। পরবর্তী বছরের জুলকাদা মাসের ওমরাহ, যখন মুশরিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, জিরানার ওমরাহ, যেখানে নবী (সা.) গনিমতের মাল, সম্ভবত হুনায়নের যুদ্ধে বণ্টন করেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, ‘একবার’। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ-ওমরাহ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিজনেস আওয়ার/১৪ জুন, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

মহানবী (সা.) কতবার হজ করেছেন?

পোস্ট হয়েছে : ১২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: সামর্থবান প্রত্যেক নর-নারী মুসলমানের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। হজ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এটা মানুষকে পাপমুক্ত করে, এ জন্য মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের সামর্থ্য থাকলে বেশি বেশি হজ-ওমরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আমর ইবনে দিনার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরস্পর পালন (হজ সমাপনের পর ওমরাহ এবং ওমরাহর পর হজ) করবে, কেননা তা (এ দুটি) অভাব, অনটন ও পাপকে দূর করে দেয় যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৩০)

মহান আল্লাহর নির্দেশে হজ কিংবা ওমরাহ হজ পালনকালে কাবাগৃহ প্রদক্ষিণের নিয়ম চালু করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)।

এর পর থেকে হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিবছর মানুষ হজ করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর শিক্ষা ভুলে গেলেও কাবাগৃহের মর্যাদার ব্যাপারে তারা যথেষ্ট সচেতন ছিল। নিজেদের মধ্যে যতই হানাহানি থাক না কেন, কাবার পবিত্র চত্বরে কেউ কখনো প্রতিহিংসায় মেতে ওঠেনি। পবিত্র হজের মৌসুমে সবাই বেশ সংযত থাকত।

আল্লামা ইবনে হজর (রহ.) বলেন, ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগেও আরবদের মধ্যে হজ করতে পারাকে গৌরবের মনে করা হতো। তারা সফরে কিংবা অসুস্থ না থাকলে প্রতিবছর হজ করার চেষ্টা করত। আমার প্রিয় নবীজি (সা.)-ও ইসলামের আবির্ভাবের আগে হজ করেছেন বলে ইতিহাস পাওয়া যায়। জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, তিনি জাহেলি যুগে মহানবী (সা.)-কে আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে দেখেছেন।

(ফাতহুল কাদির)
আল্লামা কাশমেরি (রহ.) বলেন, ইসলাম আসার আগে কুরাইশদের অভ্যাস ছিল তারা হজের মৌসুমে মুজদালিফায় অবস্থান করতেন, কিন্তু আরাফায় যেতেন না। তবে অন্য আরবরা আরাফার ময়দানেও যেত। আমার প্রিয় নবীজি (সা.)-ও তাদের সঙ্গে আরাফার ময়দানে যেতেন। (আল আরফুশ শাজ্জি : ২/২১৬)

নবুয়তপ্রাপ্তির পরও মহানবী (সা.) হজ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ করেছেন তিনবার, দুইবার হিজরতের আগে এবং একবার হিজরতের পর।

তিনি এই (শেষোক্ত) হজের সঙ্গে ওমরাহও করেছেন। তিনি তেষট্টিটি কোরবানির উট এনেছিলেন এবং ইয়েমেন থেকে আলী (রা.) অবশিষ্ট (৩৭টি) উটগুলো এনেছিলেন। আবু জাহালের একটি উটও ছিল এই উটগুলোর মধ্যে। একটি রুপার শিকল এর নাসারন্ধ্রে (নাকের ছিদ্রে) পরানো ছিল। তিনি এটাকেও জবাই করেছিলেন। প্রতিটি কোরবানির উট থেকে এক টুকরা করে গোশত আনার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন। এগুলো রান্না করা হলে তিনি এর ঝোল পান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৫)

কিন্তু হিজরতের পরও মহানবী (সা.) হজ করেছিলেন একবার। সেটাই ছিল নবীজি (সা.)-এর শেষ হজ। কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার ওমরাহ আদায় করেছেন? তিনি বলেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ওমরাহ জুলকাদা মাসে যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল। পরবর্তী বছরের জুলকাদা মাসের ওমরাহ, যখন মুশরিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, জিরানার ওমরাহ, যেখানে নবী (সা.) গনিমতের মাল, সম্ভবত হুনায়নের যুদ্ধে বণ্টন করেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, ‘একবার’। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ-ওমরাহ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বিজনেস আওয়ার/১৪ জুন, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: