বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: গাজীপুরের জয়দেবপুরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দগ্ধ বেবি বেগম (৫৫) চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তার নাতনি সানজিদা আক্তার আয়েশা (১০)।
শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় বেবি বেগমের।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বেবি বেগমের শরীরের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ৫২ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন সানজিদার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এর আগে গত ১৮ জুন দুপুর দেড়টার দিকে জয়দেবপুর উপজেলার সিঁড়ির চালা গ্রামে বোন ও নানির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দগ্ধ অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধ সানজিদার বাবা শফিকুর রহমান শফিক জানান, ওইদিন (১৮ জুন) দুপুরে নানি বেবি বেগমের সঙ্গে হেঁটে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল সানজিদা। বাসার অদূরেই রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে শুভ, সাব্বিরসহ ৩ যুবক ও দুই নারী মিলে তাদের পথরোধ করে। এক পর্যায়ে তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।
শফিকুর রহমান জানান, তার প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ সানজিদার মা ইভা ইসলাম ২০১৩ সালে মারা যাওয়ার পর ২০১৫ সালে তিনি বিয়ে করেন মনিরা বেগম নামের এক নারীকে। মনিরার আগের সংসারের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের পর কিছুদিন ভালো গেলেও পরবর্তীতে মনিরার দুই ছেলেই খারাপ পথে চলে যায়। সেজন্য দুই ছেলেকে তার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন তিনি।
সর্বশেষ মে মাসে স্ত্রী মনিরাও তাকে ছেড়ে চলে যান এবং তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠান। আর চলে যাওয়ার সময় তার বাসা থেকে ৯ লাখ টাকার পৃথক ৪টি চেক চুরি করে নিয়ে যান। সেই ঘটনায় শফিক একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা করার কারণে মনিরার ছেলে শুভ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। গত ১৫ জুন সানজিদা স্কুল থেকে একাই বাসায় ফেরার পথে শুভসহ ৩ জন মিলে সানজিদাকে হুমকি দেয়। তারা বলে, ‘তোর বাবারে বলবি, আমার মায়ের নামে মামলা উঠায়া নিতে। না হইলে তোরে তুলে নিয়ে মেরে ফেলবো’।
এমন হুমকি পর ১৬ জুন জয়দেবপুর ধানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জানিয়ে শফিকুর রহমান শফিক আরও জানান, তারই জেরে পরিকল্পিতভাবে শুভ তার সহযোগীদের নিয়ে ১৮ জুন দুপুরে এ ঘটনা ঘটায়। এহেন ঘটনার কঠোর শাস্তি দাবি করেন এই বাবা।
স্বজনরা জানান, বেবি বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে নাতনি সানজিদাকে দেখতে গাজীপুর আসেন তিনি।
এদিকে, ঘটনার পর মামলা দায়ের করেন শফিকুর রহমান শফিক। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শুভকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জয়দেবপুর থানা পুলিশ।
বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২৩/এএইচএ