ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুধু নামের মিল থাকায় নির্দোষ ইমামের কারাভোগ

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০২৩
  • 47

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শুধু নামের মিল থাকায় অপরাধ না করেও কারাভোগ করেছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার (২৮) নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিন দিন কারাভোগ শেষে রোববার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ হাওলাদারের ছেলে। ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করতে তিনি গ্রামের বাড়িতে এলে গত শুক্রবার (৩০ জুন) দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

স্বজনরা জানান, কারাভোগকারী সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। গত শুক্রবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে তিনি বাড়িতে আসেন। ওই দিনই দুপুরে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কিবরিয়া তাকে গ্রেফতার করে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।

বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির জানান, গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ইসলাম আর মামলার আসামি সিরাজুল ইসলাম একই ব্যক্তি নয় এমন তথ্য প্রমাণ আদালতে দাখিলের পর নিরপরাধ সিরাজুল ইসলামকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার নথি সূত্রে জানা জায়, ২০১৯ সালে সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে হাসান হাওলাদারের স্ত্রী সোনিয়া বেগম যৌতুক ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার, স্বামী হাসান হাওলাদার ও মামা শ্বশুর ফারুক হোসেনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় হাসান হাওলাদার ও ফারুক হোসেন জামিনে থাকলেও সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান মো. বশির উদ্দিন সিকদার বলেন, ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের আরও একজন সিরাজুল ইসলাম রয়েছে। যার বাবার নাম ও বংশ একই। তবে মামলার প্রকৃত আসামি সিরাজুলের বয়স প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি। নাম, ঠিকানা, বাবার নাম মিলে যাওয়ায় পুলিশ নিরপরাধ সিরাজুলকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। আরও একটু যাচাই-বাছাই করলে এমনটা হয়ত হত না।

কারাভোগ করা সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমার বাবা ও প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলামের বাবার নাম এবং বংশও এক। তাদের ঠিকানাও একই গ্রাম। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে আমাকে বাড়ি থেকে এসআই কিবরিয়া গ্রেফতার করেন। পরে জানতে পারি সোনিয়া নামক এক গৃহবধূর যৌতুক মামলার আসামি আমি। আমার ছেলে-মেয়ে ছোট, তাদের বিয়ের বয়সই হয়নি। গ্রেফতারের পর গ্রামের স্বজনরা মামলার কাগজপত্র তুলেন। এতে দেখা যায় আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরুব্বিদের সহযোগিতায় খোঁজখবর নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায়। মামলার অপর দুই আসামি হলেন হাসান হাওলাদার ও তার মামা ফারুক হোসেন। এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর আমাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চৌকিদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী ঢাকায় মসজিদের ইমামতি করা সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ছাড়া অন্য কোনো সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাইনি। তাই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে জানতে পারি আসল আসামি সিরাজুল ইসলাম এলাকার জামাই। গ্রামে তার পরিচিতি নেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রকৃত আসামি সিরাজকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত কীসের ভিত্তিতে তাকে জামিন দিয়েছেন তা আমার জানা নেই।

বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী সিরাজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছেন এসআই কিবরিয়া। কিন্তু কোর্টে চালান দেওয়ার পর জানা যায় একই নাম-ঠিকানার আরও একজন সিরাজ ওই গ্রামে রয়েছে। পরে জামিন পেয়ে আমাকে এসে সিরাজ নামে ওই লোকটি বলেছেন যে ‘স্যার আমি তো সেই লোক না।’

তিনি আরও বলেন, আসলে অন্য সিরাজ আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শুধু নামের মিল থাকায় নির্দোষ ইমামের কারাভোগ

পোস্ট হয়েছে : ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুলাই ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শুধু নামের মিল থাকায় অপরাধ না করেও কারাভোগ করেছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার (২৮) নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিন দিন কারাভোগ শেষে রোববার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।

সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ হাওলাদারের ছেলে। ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করতে তিনি গ্রামের বাড়িতে এলে গত শুক্রবার (৩০ জুন) দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

স্বজনরা জানান, কারাভোগকারী সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। গত শুক্রবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে তিনি বাড়িতে আসেন। ওই দিনই দুপুরে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কিবরিয়া তাকে গ্রেফতার করে বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।

বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির জানান, গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ইসলাম আর মামলার আসামি সিরাজুল ইসলাম একই ব্যক্তি নয় এমন তথ্য প্রমাণ আদালতে দাখিলের পর নিরপরাধ সিরাজুল ইসলামকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার নথি সূত্রে জানা জায়, ২০১৯ সালে সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে হাসান হাওলাদারের স্ত্রী সোনিয়া বেগম যৌতুক ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার, স্বামী হাসান হাওলাদার ও মামা শ্বশুর ফারুক হোসেনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় হাসান হাওলাদার ও ফারুক হোসেন জামিনে থাকলেও সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার পলাতক রয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান মো. বশির উদ্দিন সিকদার বলেন, ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের আরও একজন সিরাজুল ইসলাম রয়েছে। যার বাবার নাম ও বংশ একই। তবে মামলার প্রকৃত আসামি সিরাজুলের বয়স প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি। নাম, ঠিকানা, বাবার নাম মিলে যাওয়ায় পুলিশ নিরপরাধ সিরাজুলকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। আরও একটু যাচাই-বাছাই করলে এমনটা হয়ত হত না।

কারাভোগ করা সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমার বাবা ও প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলামের বাবার নাম এবং বংশও এক। তাদের ঠিকানাও একই গ্রাম। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে আমাকে বাড়ি থেকে এসআই কিবরিয়া গ্রেফতার করেন। পরে জানতে পারি সোনিয়া নামক এক গৃহবধূর যৌতুক মামলার আসামি আমি। আমার ছেলে-মেয়ে ছোট, তাদের বিয়ের বয়সই হয়নি। গ্রেফতারের পর গ্রামের স্বজনরা মামলার কাগজপত্র তুলেন। এতে দেখা যায় আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরুব্বিদের সহযোগিতায় খোঁজখবর নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যায়। মামলার অপর দুই আসামি হলেন হাসান হাওলাদার ও তার মামা ফারুক হোসেন। এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর আমাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চৌকিদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী ঢাকায় মসজিদের ইমামতি করা সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ছাড়া অন্য কোনো সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাইনি। তাই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে জানতে পারি আসল আসামি সিরাজুল ইসলাম এলাকার জামাই। গ্রামে তার পরিচিতি নেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রকৃত আসামি সিরাজকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালত কীসের ভিত্তিতে তাকে জামিন দিয়েছেন তা আমার জানা নেই।

বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ওয়ারেন্ট অনুযায়ী সিরাজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছেন এসআই কিবরিয়া। কিন্তু কোর্টে চালান দেওয়ার পর জানা যায় একই নাম-ঠিকানার আরও একজন সিরাজ ওই গ্রামে রয়েছে। পরে জামিন পেয়ে আমাকে এসে সিরাজ নামে ওই লোকটি বলেছেন যে ‘স্যার আমি তো সেই লোক না।’

তিনি আরও বলেন, আসলে অন্য সিরাজ আছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: