মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেড়েছে বাজার মূলধন পরিমান। তবে কোম্পানিরগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন বেশি। লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৩গুন।
এদিকে, ঈদের (পবিত্র ঈদুল আযহা) আগে চার কার্যদিবনের মধ্যে তিনদিন (২১, ২২ ও ২৫ জুন) লেনদেনে চমক দেখিয়েছিল সিএসই। গত ২১ জুন (বুধবার) লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি টাকা। পরেরদিন ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) লেনদেন ছিল ৩২০ কোটি টাকা। পরের কার্যদিবস ২৫ জুন (রবিবার) লেনদেন ছিল ২৩৫ কোটি টাকা।
অবশ্য আগের দিনগুলোতে সিএসইর লেনদেন ১৫ থেকে ২২ কোটি টাকার ঘরে গড়াগড়ি করছিল। সেখান থেকে হঠাৎ করে ঈদের আগের তিন কার্যদিবস লেনদেন ৫৩০, ৩২০ ও ২৩৫ কোটি টাকা, এটা রীতিমত চমক। ঈদের পর সেই লেনদেনের চমক নেই। ধরে রাখতে ব্যর্থ সিএসই। ঈদের আগে অতি বাড়তি লেনদেনের কোন ব্যাখাও দেয়নি সিএসইর কর্তৃপক্ষ।
সিএসইর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পলিচালক মুঠোফোনে বলেন, ঈদের আগে ২১ জুন বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৫৩০ কোটি টাকা। এটা সিএসইর ইতিহাসের সেরা লেনদেন হিসেবে গন্য। ২২ জুন বৃহস্পতিবার ৩২০ কোটি টাকা এবং ২৫ জুন ২৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। টানা তিনদিন এতো বেশি লেনদেন হওয়ার কারন আমি বলতে পারবো না। এটা বলতে পারবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
আরও বলেন, বিশেষ কারনে এতো বাড়তি লেনদেন হতে পারে। তবে আমার জানা মতে, সেই ধরনের কোন ঘটনা নেই। তাই তিনদিনের এই লেনদেনের ব্যাখা, আমার কাছে নেই। তবে ঈদের পরের লেনদেন পূর্বের মতো স্বাভাবিক হয়েছে, বলেন ওই পরিচালক।
লেনদেন প্রসঙ্গে মুঠোফোনে ভিন্ন কথা শুনালেন সিএসইর একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মূলধনের বাজারে ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন, চিন্তাই করা যায় না। এতো কম লেনদেন কারন হিসেবে আমরা পতন বাজারকে দায়ী করে আসছি। আসলে এটা মোটেও ঠিক না। সিএসইর মূলধন সাড়ে ৭ কোটি টাকা হিসেবে লেনদেন ৫শ কোটি টাকার বেশি হওয়ার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেখানে লেনদেন হচ্ছে খুবই সামান্য। এটা সত্যিই দু:খজনক।
সিএসইর সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৪ কোটি ৮ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস সোমবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৬৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৮৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২৬৯ কোটি ২৯ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৮৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তালিকাভুক্ত ৩১১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৯টির, দর কমেছে ৯১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪১টি কোম্পানির।
সিএসইর সূত্র মতে, গেল সপ্তায় সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএএসপিআই দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭২০ দশমিক ৮০ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই ৫০ সূচক দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক শূন্য শূন্য ১ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, সিএসআই সূচক দশমিক ১০ শতাংশ এবং সিএসই এসএমইএক্স ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৫ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৯৮ দশমিক ২২ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৮৭ দশমিক ২৭ পয়েন্টে, ১ হাজার ১৭৭ দশমিক ৫২ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ৭ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্টে।
গেল সপ্তায় এ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ৩০ শতাংশ এবং জেড ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বি ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুজের শেয়ার। একাই ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে।
এছাড়া নদার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, এমারেল্ড অয়েলের (জেড ক্যাটাগরি) ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকোর ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, লুব-লেফের ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, জেনারেশন নেক্সটের (বি ক্যাটাগরি) ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং সিরামিকসের (বি ক্যাটাগরি) ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং জেএমআই হসপিটালের ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/৭ জুলাই, ২০২৩/এমএজেড