বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক:
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহকদের জমা করা বিমার টাকা লেনদেন হচ্ছে আকিজ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সইয়ে। আকিজ ফুডের কর্মকর্তাদের অনুমোদন বা সই ছাড়া প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের ক্ষমতা নেই আকিজ তাকাফুল লাইফের কর্মকর্তাদের। ফলে বিমা গ্রাহকদের টাকা কতটা নিরাপদ আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যাংক হিসাবে সই করার ক্ষমতা আকিজ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে বিজনেস আওয়ার ২৪.কমের কাছে। বিমা কোম্পানিটির নামে করা বিল আকিজ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সইয়ে তৈরি করা সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকদের প্রিমিয়াম সংগ্রহ ও দাবি পরিশোধসহ অন্য লেনদেনের জন্য নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য আলাদা তিনটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেনের জন্য কোম্পানিটির শীর্ষ দুই কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তির সই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সর্বমোট ছয়জন ব্যক্তিকে সই দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে আকিজ তাকাফুল লাইফের অর্থ লেনদেনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত (অথরাইজড) ওই ছয় ব্যক্তির চারজনই আকিজ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। অর্থাৎ, গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের পূর্ণ ক্ষমতা নেই আকিজ তাকাফুল লাইফের।
অথচ বিমা গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এসব টাকার দায় পুরোটাই আকিজ তাকাফুল লাইফের। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গ্রাহক স্বার্থবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন বোর্ডসভায়। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, একই বছরের ২৪ অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এসব বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এসকে শামিম উদ্দিন এসব বোর্ডসভায় সভাপতিত্ব করেন।
আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ হেড অফিস কমপ্লেক্স ব্রাঞ্চ, পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল (ইসলামিক) ব্রাঞ্চ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গুলশান সার্কেল-১ ব্রাঞ্চ, ঢাকা ব্যাংকের কাকরাইল ব্রাঞ্চ এবং ব্র্যাক ব্যাংকে।
এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সিগনেটরদের মধ্যে রয়েছেন- বিমা কোম্পানিটির সিইও (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী এবং ডিএমডি ও সিওও মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান খান। এছাড়াও মোহাম্মদ এমাদুল হক, আহসান বিন আহমেদ, মো. সাইফুল্লাহ সায়েম ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সিগনেটর হিসেবে রয়েছেন আকিজ তাকাফুল লাইফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
সিইও (সিসি) মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী এবং ডিএমডি ও সিওও মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান খান ছাড়া অন্য চার সিগনেটরির কেউই আকিজ তাকাফুল লাইফের কর্মকর্তা নন। তারা সবাই আকিজ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
এছাড়া আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রেও অনুমোদন নিতে হয় আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ থেকে। যে কোনো বিল অনুমোদনে বিমা কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সই দেওয়ার পর আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কর্মকর্তা সেটি অনুমোদন দিলেই কেবল বিল পরিশোধ করতে পারে আকিজ তাকাফুল লাইফ।
বিজনেস আওয়ার/এন/আন