ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিঙ্গারে ৩৪ কোটি টাকা ফাঁকি, আদায়ে কঠোর এনবিআর

  • পোস্ট হয়েছে : ০৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
  • 83

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ ওঠেছে। একই সাথে অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধায় নেওয়ার প্রমান পেয়েছে, এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের অধীনের এক প্রতিবেদনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফাঁকি বেরিয়ে আসে। অপরদিকে ভ্যাট আইন অমান্য করে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ টাকার অবৈধ রেয়াত নিয়েছে বলে অভিযোগ সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। পরে আরেক নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উৎসে মূসক ও অবৈধ রেয়াত নেওয়ার প্রমাণ মিলে। একই সাথে আরও ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ভ্যাট না দেওয়ার চিত্র বেরিয়ে আসে। সবশেষ ভ্যাট গোয়েন্দার সমন্বিত নিরীক্ষায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট।

এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ফাঁকি রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘদিন থেকে চিঠি চালাচালি করছে এলটিইউ ও সিঙ্গার বাংলাদেশ। সর্বশেষ কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায়ে কঠোর হয়েছে এলটিইউ কর্তৃপক্ষ। রাজস্ব প্রসঙ্গে কোম্পানির (সিঙ্গার বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফাইরোজকে মুঠোফোনে পাওয়া গেলেও তার ব্যস্ততার কারনে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রাজস্ব ফাঁকির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি অভিযোগ হিসেবে দেখছে। আমার মতে, সামান্য জটিলতায় সিঙ্গারকে এমন অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এটা নিরসনে আলোচনা চলছে জানিয়ে আরও বলেন, এলটিইউর আগে কমিশনারের সময়ে এই জটিলতা তৈরি হয়। সেই সময় থেকে এটা নিয়ে কাজ চলছে। যা এখন সমধা হয়নি। বর্তমান কমিশনার এটা নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই এটা সমাধা হবে।

প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জটিলতা কমাতে ও নিয়ম অনুসারে একটি ভ্যাট নিবন্ধন করার পরামর্শ দেয় এনবিআর। সেই অনুসারে, সিঙ্গার বাংলাদেশ এলটিইউ অধীনে ভ্যাট নিবন্ধন করে। বর্তমানে এলটিউর মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি মানতে নারাজ সিঙ্গার বাংলাদেশ কোম্পানি সচিব আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটি ভ্যাট ফাঁকি নয়, এটা একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। আরও বলেন, এনবিআর আমাদের কাছে টাকা পাবে। আমরাও তার কাছে টাকা পাব। এটার সমন্বয় হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন আড়াইশ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৮৩৮টি। কোম্পানিটির রিজার্ভে রয়েছে ১৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৫৭ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বিদেশি ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারী ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে। রবিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৫১ টাকা ৯০ পয়সা।

বিজনেস আওয়ার/১৬ জুলাই, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সিঙ্গারে ৩৪ কোটি টাকা ফাঁকি, আদায়ে কঠোর এনবিআর

পোস্ট হয়েছে : ০৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ ওঠেছে। একই সাথে অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধায় নেওয়ার প্রমান পেয়েছে, এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের অধীনের এক প্রতিবেদনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফাঁকি বেরিয়ে আসে। অপরদিকে ভ্যাট আইন অমান্য করে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ টাকার অবৈধ রেয়াত নিয়েছে বলে অভিযোগ সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। পরে আরেক নিরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উৎসে মূসক ও অবৈধ রেয়াত নেওয়ার প্রমাণ মিলে। একই সাথে আরও ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ভ্যাট না দেওয়ার চিত্র বেরিয়ে আসে। সবশেষ ভ্যাট গোয়েন্দার সমন্বিত নিরীক্ষায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট।

এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ফাঁকি রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘদিন থেকে চিঠি চালাচালি করছে এলটিইউ ও সিঙ্গার বাংলাদেশ। সর্বশেষ কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায়ে কঠোর হয়েছে এলটিইউ কর্তৃপক্ষ। রাজস্ব প্রসঙ্গে কোম্পানির (সিঙ্গার বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফাইরোজকে মুঠোফোনে পাওয়া গেলেও তার ব্যস্ততার কারনে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রাজস্ব ফাঁকির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি অভিযোগ হিসেবে দেখছে। আমার মতে, সামান্য জটিলতায় সিঙ্গারকে এমন অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এটা নিরসনে আলোচনা চলছে জানিয়ে আরও বলেন, এলটিইউর আগে কমিশনারের সময়ে এই জটিলতা তৈরি হয়। সেই সময় থেকে এটা নিয়ে কাজ চলছে। যা এখন সমধা হয়নি। বর্তমান কমিশনার এটা নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই এটা সমাধা হবে।

প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জটিলতা কমাতে ও নিয়ম অনুসারে একটি ভ্যাট নিবন্ধন করার পরামর্শ দেয় এনবিআর। সেই অনুসারে, সিঙ্গার বাংলাদেশ এলটিইউ অধীনে ভ্যাট নিবন্ধন করে। বর্তমানে এলটিউর মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি মানতে নারাজ সিঙ্গার বাংলাদেশ কোম্পানি সচিব আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটি ভ্যাট ফাঁকি নয়, এটা একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। আরও বলেন, এনবিআর আমাদের কাছে টাকা পাবে। আমরাও তার কাছে টাকা পাব। এটার সমন্বয় হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন আড়াইশ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৮৩৮টি। কোম্পানিটির রিজার্ভে রয়েছে ১৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৫৭ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, বিদেশি ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারী ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার ধারন করেছে। রবিবার শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ১৫১ টাকা ৯০ পয়সা।

বিজনেস আওয়ার/১৬ জুলাই, ২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: