বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারীদের সম্পদ অন্যের কাছে রাখবো না জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি অবণ্টিত লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) এখনো জমা দেয়নি। সামনে সেসব কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্ট বের হবে। এরপরেই লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে সিএমএসএফ কর্তৃক আয়োজিত ‘সিএমএসএফের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমএসএফ চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। সেমিনারে সিএমএসএফের রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট কমিটি (আরএমসি) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আমিনুল করিমের স্বাগত বক্তব্যের পর বিওজি এবং আরএমসি সদস্য ডা. শেখ তানজিলা দীপ্তির “সিএমএসএফের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো” শিরোনামে একটি মূল প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সিএমএসএফ থেকে শেয়ারবাজারে ২২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম বছর এই ফান্ড থেকে মুনাফা এসেছে ১১ কোটি টাকা। চলতি বছরে আরও বেশি আসবে। বিনিয়োগ সমান অর্থ পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এখানে বিনিয়োগে আসবে, তারা যদি ২ কোটি টাকা দেয়, আমরাও তাদেরকে ২ কোটি টাকা দেব। মানে বিনিয়োগের সমান অর্থ পাবে।
পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকেই চাচ্ছে কোম্পানির পরিচালকদের ২ শতাংশ উঠিয়ে যেন দেই। তাদের মতে, ২ শতাংশের কারনে কোম্পানিতে ভাল বা যোগ্য লোক আসছে না। তাদের জন্য বলছি, আমি দেখেছি অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে এসে অর্থ সংগ্রহ করেছে। পরে সেই অর্থ ব্যয় করে নানা অজুহাতে অন্য হাতে দিয়ে তারা চলে যাচ্ছে। পরবর্তীতে সেই কোম্পানির আর ভাল অবস্থায় আনা সম্ভব হয় না। এতে করে, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এজন্য কমিশন ২ শতাংশ শেয়ার ধারন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। এটা বহাল আছে। এটা নিয়ে কাজও চলছে। সামনে আরো ভাল উপায় বের করা হবে।
শেয়ারবাজার প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে কাজ করছি জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট রয়েছে। সংকট দুর করতে কাজ করছি। ইতিমধ্যে আমরা অনেক সমস্যা দূর করেছি। ফলে শেয়ারবাজার পূর্বের চেয়ে ভাল অবস্থানে এসেছে। সূচক বেড়েছে। লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘরে ওঠেছে। মূলধন সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে পৌনে আট লাখ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করেছে। এরপরও বাজারের আরও উন্নয়নে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আশা করি এটা ধরে রাখতে পারলে, সামনে আরো সফলতা পাব।
স্থিতিশীল শেয়ারবাজার তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সবদিক থেকেই দেওয়াল দিয়ে একটি স্থিতিশীল শেয়ারবাজার তৈরি করার চেষ্টা করছি। শেয়ারবাজারে সরকারি বন্ডগুলোর লেনদেন শুরু হলে লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে আরও অনেক বেশি হবে।
শেয়ারবাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের সহায়তার হাত বাড়ানোর আহবান জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না। আমাদের কাজের ক্ষেত্রে কোন কাজটা আগে করব, সেটা আপনাদের অর্থাৎ বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই পরামর্শ চাই। আগে কী যারা লুটপাট করছে তাদের নিয়ে কাজ করব নাকি কোম্পানিগুলোর সম্পদ রক্ষায় কাজ করব। সেটা আপনারাই সিদ্ধান্ত দেবেন।
দীর্ঘমেয়াদি ফান্ড গঠনের উৎস হবে শেয়ারবাজার মন্তব্য করে সেমিনারের সন্মানিত অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, তফসিলি ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদি দায় থেকে মুক্তি দিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি লোনে আগ্রহী না জানিয়ে তিনি বলেন, শিল্প উন্নয়নে বড় ফান্ডের প্রয়োজন হয়। এই ফান্ড দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংক লোন দীর্ঘমেয়াদি দিতে আগ্রহী না। সেই ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারেই একমাত্র উৎস। যেখানে বড় বড় ফান্ড গঠন করা যায়। আমাদের সেই পথে হাটা জরুরী।
শেয়ারবাজার প্রতি আমাদের অনেকের ধারনা নেই জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আরও ভালো করতে পারত। ভাল করার অনেক সুযোগ রয়েছে। যদি তারা বুঝে শুনে জেনে বিনিয়োগ করতো। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে বিনিয়োগকারী এটাকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে ধরে নেন। এটা তাদের ভূল। এই ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শেয়ারবাজার বিনিয়োগের এটা বড় জায়গা। এখানে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগে আরো সতর্ক হতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বিজনেস আওয়ার/ ২০ জুলাই,২০২৩/এএইচএ