ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এস আলম গ্রুপের ৫ ব্যাংক টাকার সংকটে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ৫টি ব্যাংক চাহিদামতো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে না পারায় দণ্ডসুদ বা জরিমানা দিতে হচ্ছে। । ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন । এসব ব্যাংক গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তারল্যঘাটতিতে রয়েছে। তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য এসব ব্যাংককে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে জরিমানার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সিআরআর ও এসএলআরের টাকা জমা করছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুধু ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে দায় সেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোও অনিয়ম বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া শুরু করেছে।

দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এসব ব্যাংকে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সর্বমোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের সর্বমোট বিনিয়োগ বা ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১০১ কোটি টাকায়।

ইসলামী ব্যাংকের তারল্যসংকটের বড় কারণ ঋণ অনিয়ম। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংকটিতে বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ব্যাংকটির ঋণ অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাংকটি থেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলে নেন গ্রাহকেরা।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের আমানত আগের বছরের চেয়ে ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা কমে যায়। আমানত কমলেও গত বছর ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকটি। ফলে তারল্যসংকট দেখা দেয়। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির নামে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কমার্স ব্যাংকের ডিএমডি কাজী রেজাউল করিমকে ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি করা হয়েছে।

একই ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেও। মূলত ইসলামী ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেওয়ার পর তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শরিয়াহভিত্তিক অন্যান্য ব্যাংকেও।

কারণ, বেশির ভাগ শরিয়াহ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে তাদের সংকট সমাধান করত। তারল্যসংকটে পড়ায় ব্যাংকগুলোকে তারল্যসহায়তা দিতে গত আট মাসে নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজনেস আওয়ার/আই

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এস আলম গ্রুপের ৫ ব্যাংক টাকার সংকটে

পোস্ট হয়েছে : ০২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ৫টি ব্যাংক চাহিদামতো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে না পারায় দণ্ডসুদ বা জরিমানা দিতে হচ্ছে। । ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন । এসব ব্যাংক গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তারল্যঘাটতিতে রয়েছে। তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য এসব ব্যাংককে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে জরিমানার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সিআরআর ও এসএলআরের টাকা জমা করছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুধু ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে দায় সেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোও অনিয়ম বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া শুরু করেছে।

দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে ১০টি। এসব ব্যাংকে গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সর্বমোট আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। আর গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের সর্বমোট বিনিয়োগ বা ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১০১ কোটি টাকায়।

ইসলামী ব্যাংকের তারল্যসংকটের বড় কারণ ঋণ অনিয়ম। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংকটিতে বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ব্যাংকটির ঋণ অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ব্যাংকটি থেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলে নেন গ্রাহকেরা।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের আমানত আগের বছরের চেয়ে ১৭ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা কমে যায়। আমানত কমলেও গত বছর ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকটি। ফলে তারল্যসংকট দেখা দেয়। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি টেরাকোটা টাইলস রপ্তানির নামে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কমার্স ব্যাংকের ডিএমডি কাজী রেজাউল করিমকে ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি করা হয়েছে।

একই ধরনের ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেও। মূলত ইসলামী ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেওয়ার পর তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শরিয়াহভিত্তিক অন্যান্য ব্যাংকেও।

কারণ, বেশির ভাগ শরিয়াহ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে তাদের সংকট সমাধান করত। তারল্যসংকটে পড়ায় ব্যাংকগুলোকে তারল্যসহায়তা দিতে গত আট মাসে নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিজনেস আওয়ার/আই

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: