মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। গত দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ার দর বৃদ্ধি করেছে। গত ২৩ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৪ টাকা। আর ১৮ জুলাই এসে দাড়ায় ৩৯ টাকা। আজ (বুধবার) দিনশেষে ৩৪ টাকা লেনদেন হয়েছে। ২ মাসের ব্যবধানে শেয়ার দর ১৪৩ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়।
তথ্য মতে, চলতি বছরের ৩১ মে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ২৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ৩০ জুন তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। অপরদিকে গত ৩১ মে সাধরন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারন ছিল ৪০ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত ৩০ জুন তাদের শেয়ার ধারন দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে শেয়ার ধারন কমেছে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। কোম্পানি কোডে শেয়ার ক্রয়ের কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। আর এর সাথে কোম্পানির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।
তথ্য মতে, কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭৭টি। আলোচিত ওই এক মসে সাধারন বিনয়োগকারী ৮২ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৭টি শেয়ার বিক্রয় করেছে। ওই সময় সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রয় করেছে। ফলে ধারন দিক দিয়ে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আলোচিত সময়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারনে কোন পরিবর্তন হয়নি। মানে গত মে মাসে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারন ছিল ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুনের সেই শেয়ার ধারন অবস্থান একই ছিল।
এদিকে কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজকে ২৫ জুন ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে ২৬ জুন কোম্পানি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। সেই শেয়ার দর বৃদ্ধি এখনো থামেনি। বরং বেড়েই চলছে। বর্তমানে শেয়ার প্রতি দর দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা।
‘বি’ ক্যাটাগরির খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারটি দর বৃদ্ধি নিয়ে এক চক্র কারসাজি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৩১ মে শেয়ার প্রতি দর ছিল ১৪ টাকা ৮০ পয়সা। ৩০ জুন শেয়ারটির দর দাঁড়ায় ২৩ টাকা ২০ পয়সা। আলোচিত এক মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৫৭ শতাংশ। দেখা যায়, আলোচিত মাসটিতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রয় করছেন। একই সময়ে সেই পরিমান শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিকরা ক্রয় করেছেন।
কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অবশ্য উত্তম জানিয়ে তারা বলেন, শেয়ারটির দর দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও। কারা এই বিনিয়োগ করছে, সেই বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের বিশেষ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেন।
কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। একই কথা সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকেও (ডিএসই) আমরা তাই জানিয়েছি। দাবি নিয়ে বলতে পারি, শেয়ার দর বৃদ্ধিতে আমাদের কোন কর্মকর্তা জড়িত নেই।
দর বৃদ্ধির আলোচিত দুই মাসে শেয়ারবাজারে আমাদের কোন পরিচালক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে নাই জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ার দর বাড়া কমা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথাও নেই।
অতি বৃদ্ধির ব্যাখা যারা শেয়ার কিনছে তারাই বলতে পারবে মন্তব্যে করে এই কর্মকর্তা বলেন, গত দুই মাসে প্রায় দেড়শ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। কেন বেড়েছে সেটা আমার জানা নেই। যারা এতো দরে শেয়ারটি কিনছে, সেটা কেবল তারাই (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) বলতে পারবে।
উল্লেখ্য গত অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের তৃতীয় প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির লোকসান কমেছে। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৪ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯১ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল শূন্য।
বিজনেস আওয়ার/ ২৬ জুলাই,২০২৩/ এমএজেড
