ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩
  • 69

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে ভ্যাট আহরণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ভ্যাটের চূড়ান্ত হিসাবে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, পূর্ববর্তী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় করেছে সংস্থাটি। অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এর পূর্বের বছরের আহরণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।

জুন মাসের ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যণীয়। জুন ২০২৩ এর আহরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। আগের জুনে এই আদায় ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। জুন মাসের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এনবিআরের ভ্যাট উইং এর মাঠ পর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের মোট আহরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশকিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। ব্যাবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি।

এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে মর্মে এনবিআর জানতে পেরেছে। গত অর্থবছরে ভোজ্য তেলসহ কতিপয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়।ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি।

এসব চ্যালেন্জ সত্ত্বেও এনবিআরের ভ্যাটের ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একটি বড় অর্জন। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটে মূল কারণে। প্রথমত, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম নির্দেশ মতে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ- উৎপাদন সহ হালনাগাদকরণ জোরদার। তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

তথ্য অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে। এই আইটেমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটর্স থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

কতিপয় আইটেম প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে এমএস রড ৫৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কোমল পানীয় ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিমেন্ট ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভাল করেছে। এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়। মিষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ, আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। রেস্টেুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ এ কমিয়ে আনা হয়। তা সত্ত্বেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে।

ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ, যা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যসম্পাদন মানদন্ড অনুযায়ী অসাধারণ।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ জুলাই,২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ

পোস্ট হয়েছে : ০১:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুনে ভ্যাট আহরণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ভ্যাটের চূড়ান্ত হিসাবে এনবিআরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, পূর্ববর্তী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় করেছে সংস্থাটি। অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। এর পূর্বের বছরের আহরণ ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।

জুন মাসের ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের অর্জন লক্ষ্যণীয়। জুন ২০২৩ এর আহরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। আগের জুনে এই আদায় ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। জুন মাসের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

এনবিআরের ভ্যাট উইং এর মাঠ পর্যায়ে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সর্বোচ্চ ভ্যাট আহরণ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের মোট আহরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশকিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি। ব্যাবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এলসি খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি।

এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে মর্মে এনবিআর জানতে পেরেছে। গত অর্থবছরে ভোজ্য তেলসহ কতিপয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়।ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি।

এসব চ্যালেন্জ সত্ত্বেও এনবিআরের ভ্যাটের ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একটি বড় অর্জন। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটে মূল কারণে। প্রথমত, এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম নির্দেশ মতে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা। দ্বিতীয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ- উৎপাদন সহ হালনাগাদকরণ জোরদার। তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।

তথ্য অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে। এই আইটেমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটর্স থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।

কতিপয় আইটেম প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে এমএস রড ৫৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কোমল পানীয় ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিমেন্ট ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভাল করেছে। এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়। মিষ্টিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ, আবাসিক হোটেলে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। রেস্টেুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ এ কমিয়ে আনা হয়। তা সত্ত্বেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ইটভাটার ভ্যাট আদায়ে মাঠ কর্মকর্তারা তৎপর ছিলেন। ফলে অধিকাংশ ভ্যাট অফিস শতভাগ ভ্যাট আদায় করেছে।

ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ, যা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যসম্পাদন মানদন্ড অনুযায়ী অসাধারণ।

বিজনেস আওয়ার/ ২৭ জুলাই,২০২৩/এমএজেড

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: