ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাটোরের একসঙ্গে মা-ছেলের এসএসসি পাস

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩
  • 87

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: নাটোরের সিংড়ায় একসঙ্গে এসএসসি পাশ করলেন মা-ছেলে। মা লিপি আক্তার জিপিএ-৪.৫৪ এবং ছেলে লিয়াকত হোসেন (১৬) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) এসএসসির ফল প্রকাশের পর মা-ছেলে এ ফলাফল অর্জন করেন। তারা পার্শ্ববর্তী সিংড়া উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া লিপি আক্তার সিংড়ার চামারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য।

জানা যায়, ছেলে লিয়াকত হোসেন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫ এবং তিনি সিংড়া চককালিকাপুর কারিগরি স্কুল ও কলেজে থেকে পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৪.৫৪ পয়েন্ট। একসঙ্গে মা ও ছেলের এসএসসি পাশ করায় এলাকার মানুষজন অনেক খুশি এবং এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

লিপি আক্তার সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি। পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষক হিসাবে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার খুকনি গ্রামে। বিয়ের পর স্বামী-সংসার নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার। তাদের ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা লেখাপড়া না জানলেও ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায় বেশ উৎসাহী ছিলেন।

ইউপি সদস্য লিপি আক্তার বলেন, খুব ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখা করার প্রবল ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বাবার আর্থিক দীনতায় সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি তার। এজন্য খুব অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। ২০০০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই নাটোরের সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ছেলে লিয়াকতের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হই। পাঁচ বছর আগে স্বামী লোকমান মারা যাওয়ায় চরম অর্থকষ্টের মধ্যে পড়েন। তবুও হাল ছাড়িনি। সন্তানের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। শুক্রবার দুপুর এসএসসি পাসের খবর শুনে আনন্দে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে। ফল প্রকাশের পর আশপাশের মানুষ দেখতে আসছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

তবে এই আনন্দ আরও বেশি হতো,যদি স্বামী বেচে থাকতেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কারণ তার প্রেরণায় আজ এই অর্জন। আগামীতে সন্তানদের পাশাপাশি তিনিও লেখা পড়া চালিয়ে যেতে চান।

চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন মোল্লা বলেন, লিপি আক্তার আমাদের পরিষদের গর্ব। তাদের মা ছেলের পাশের খবরে এলাকার সবাই খুব আনন্দিত। তিনি তার মেধা ও পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। আমি তার আরও সফলতা কামনা করি। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন মণ্ডল জানান, মা-ছেলে দুজনের একসঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।

বিজনেস আওয়ার/২৯ জুলাই, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নাটোরের একসঙ্গে মা-ছেলের এসএসসি পাস

পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: নাটোরের সিংড়ায় একসঙ্গে এসএসসি পাশ করলেন মা-ছেলে। মা লিপি আক্তার জিপিএ-৪.৫৪ এবং ছেলে লিয়াকত হোসেন (১৬) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) এসএসসির ফল প্রকাশের পর মা-ছেলে এ ফলাফল অর্জন করেন। তারা পার্শ্ববর্তী সিংড়া উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া লিপি আক্তার সিংড়ার চামারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য।

জানা যায়, ছেলে লিয়াকত হোসেন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৫ এবং তিনি সিংড়া চককালিকাপুর কারিগরি স্কুল ও কলেজে থেকে পরীক্ষা দিয়ে পেয়েছেন জিপিএ-৪.৫৪ পয়েন্ট। একসঙ্গে মা ও ছেলের এসএসসি পাশ করায় এলাকার মানুষজন অনেক খুশি এবং এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

লিপি আক্তার সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি। পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষক হিসাবে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার খুকনি গ্রামে। বিয়ের পর স্বামী-সংসার নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার। তাদের ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তারা লেখাপড়া না জানলেও ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখায় বেশ উৎসাহী ছিলেন।

ইউপি সদস্য লিপি আক্তার বলেন, খুব ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখা করার প্রবল ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বাবার আর্থিক দীনতায় সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি তার। এজন্য খুব অল্প বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। ২০০০ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই নাটোরের সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের লোকমান হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ছেলে লিয়াকতের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হই। পাঁচ বছর আগে স্বামী লোকমান মারা যাওয়ায় চরম অর্থকষ্টের মধ্যে পড়েন। তবুও হাল ছাড়িনি। সন্তানের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। শুক্রবার দুপুর এসএসসি পাসের খবর শুনে আনন্দে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে। ফল প্রকাশের পর আশপাশের মানুষ দেখতে আসছেন। অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

তবে এই আনন্দ আরও বেশি হতো,যদি স্বামী বেচে থাকতেন। তিনিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। কারণ তার প্রেরণায় আজ এই অর্জন। আগামীতে সন্তানদের পাশাপাশি তিনিও লেখা পড়া চালিয়ে যেতে চান।

চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন মোল্লা বলেন, লিপি আক্তার আমাদের পরিষদের গর্ব। তাদের মা ছেলের পাশের খবরে এলাকার সবাই খুব আনন্দিত। তিনি তার মেধা ও পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। আমি তার আরও সফলতা কামনা করি। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।

নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন মণ্ডল জানান, মা-ছেলে দুজনের একসঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সাফল্য সমাজের অনেককে অনুপ্রাণিত করবে।

বিজনেস আওয়ার/২৯ জুলাই, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: