বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: খুলনার বটিয়াঘাটায় চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে এসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। হুমকিতে নারী ফুটবলাররা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাদিয়া নাসরিন বলেন, হামলাকারীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে, চারজনকে মারধর করেছে। হামলাকারী সালাউদ্দিন আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। মামলা তুলে না নিলে এসিড মেরে মুখ ঝলসে দেওয়ারও ভয় দেখিয়েছে। এমনকি আসামিরা নিজেদের ক্ষতি করে আমাদের সবার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। আমি সোমবারই থানায় জিডি করেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।
সাদিয়া নাসরিনের অভিযোগ, গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলন করার সময় নূপুর খাতুন নামে প্রতিবেশী এক মেয়ে তার ছবি তোলেন। পরে বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সেই ছবি দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করে আসেন। সাদিয়া ২৯ জুলাই শনিবার বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নূপুর অকথ্য ভাষায় তাকে গালাগাল করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে এলোপাতাড়িভাবে কিল, চড়, ঘুসি মেরে মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়।
সাদিয়া বলেন, বাড়িতে গিয়ে আমি বাবা-মা, কোচ ও অন্য খেলোয়াড়দের ঘটনাটি জানাই। তারা আমাকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে নূপুর খাতুনের বাড়িতে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূপুর, তার বাবা নূর আলম খাঁ, ভাই সালাউদ্দিন ও নূপুরের মা রঞ্জি বেগম আমাদের ওপর হামলা করে। এতে মঙ্গলী, হাজেরা ও জুঁই আহত হন। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেয়।
মারধরের শিকার কিশোরী ফুটবলার হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল ও রিতু বৈরাগী জানান, আগে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন অনুশীলনে মাঠে আসত, এখন আসে ১০-১৫ জন।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন হামলায় আহত কিশোরী ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী বলেন, নূপুর ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের মারধর করেছে। রড দিয়ে পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তারা ওড়না দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা আমাকে বেঁধে রাখে।
তিনি আরও বলেন, ওরা বলেছে, হাফ প্যান্ট-জার্সি পরে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা যাবে না। শুধু তাই নয়, ওরা এসিড মেরে আমাদের মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে রাতে ঘুম আসে না। তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির সভাপতি ইসলাম হাওলাদার বলেন, হামলার ঘটনায় মেয়েদের মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করছে। অনুশীলনের জন্য ডেকে ডেকে আনতে হচ্ছে। আগে কোনো দিন গ্রামের কেউ ফুটবল খেলা নিয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত বা কটূক্তি করেনি। কিন্তু নূর আলমের পরিবার এবার ঝামেলা বাধিয়েছে।
এদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও মারধরের অভিযোগে গত ৩০ জুলাই রোববার সাদিয়া নাসরিন বাদী হয়ে নূপুর, তার বাবা নূর আলম খাঁ, ভাই সালাউদ্দিন ও নূপুরের মা রঞ্জি বেগমকে আসামি করে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করেন। মামলার পর পরই পুলিশ নূর আলমকে গ্রেফতার করে।
বটিয়াঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত কবির জানান, এসিড নিক্ষেপের হুমকির অভিযোগে সাদিয়া গত ৩১ জুলাই একটি জিডি করেন। মামলা ও জিডির তদন্ত চলছে। জিডি-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বটিয়াঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৌশিক কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নূর আলম বর্তমানে কারাগারে। তবে অন্য তিন আসামি মঙ্গলবার আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। প্রতিদিন পুলিশ ওই গ্রামে টহল দিচ্ছে। মেয়ে ও তাদের অভিভাবকদের বলেছি, কোনো সমস্যা মনে করলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বিজনেস আওয়ার/০৩ আগস্ট, ২০২৩/এএইচএ