বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: করোনার আগে ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসেন অনেক সৌদি প্রবাসী। চার মাসের ছুটিতে এসে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আর প্রবাসে ফেরা হয়নি তাদের। দেশে আসা প্রবাসীদের বেশিরভাগই রিটার্ন টিকিট করে এসেছিলেন। সেই অনুযায়ী টোকেনও সংগ্রহ করেছিলেন তারা। কিন্তু সৌদির টিকিট মিলছে না।
প্রায় ৬ মাস পর সম্প্রতি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদেশি কর্মীদের ফেরার ঘোষণা দেয়। তারপরই রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে টিকিট রিইস্যুর ঘোষণা দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স। এরপর থেকেই টিকিটের প্রত্যাশায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ে অবস্থান নেন বহু সৌদি প্রবাসি।
হবিগঞ্জের বাসিন্দা আবুল হাসান একদশক ধরে থাকেন সৌদি আরবের তাবুক এলাকায়। তিনি বলেন, দেশে ফেরার সময় রিটার্ন টিকিট করে এসেছি। কিন্তু তবুও টিকিট পাচ্ছি না। টিকিটের টোকেন থাকলেও চারদিন ধরে টিকিটের অপেক্ষায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে এয়ারলাইন্স কার্যালয়ের সামনে দিনরাত্রি যাপন করছি। তবুও টিকিটের সুখবর পাচ্ছি না।
বিক্রমপুরের শরীফ খান বলছেন, চারদিন ধরে রুটি পানি খেয়ে এখানে দিনাতিপাত করছি। কিন্তু সমাধান নেই। রিটার্ন টিকিট কেটে এসেছি, তবুও কেন এ সংকট। এটা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে। সিন্ডিকেট করে বাহিরের এজেন্ট টিকিট নিয়ে গেছে। এখন বলছে অনলাইনে নিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল মোতালেব। ২৫ বছর ধরে সৌদি আরব থাকেন। কিন্তু দেশে ফিরে এমন পরিস্থিতির শিকার কখনও হতে হয়নি। জানি না এবার ফিরতে পারবো কী না। রিটার্ন টিকিট কেটে আসলাম, তারপরও এখন টিকিট দিচ্ছে না।
মোহাম্মদ মহসিন আলী বলেন, তার টোকেনের সিরিয়াল ১৯৮। কিন্তু রোববার থেকে তিনি ভেতরেই প্রবেশ করতে পারছি না। টোকেন অনুসারে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, আকামার মেয়াদ শেষ। টোকেন না দিলে তো আসতাম না।
চাঁদপুরে মোহাম্মদ সোহেল বলেন, এ যে ক’দিন ধরে এখানে অপেক্ষা করছি, কেউ তো কিছু বলছে না। কেন আসছি, কী জন্য আসছি, তাও জিজ্ঞেস করছে না। আমাদের রিটার্ন টিকিট কেনা, তবুও কেন এতো ভোগান্তি। কিছু আমাদের তারা বলুক। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) আমার মেয়ে মারা গেছে, তবুও আমি বাড়ি যেতে পারিনি। চারদিন ধরেই এখানে অপেক্ষা করছি।
সৌদি প্রবাসী হানিফ মিয়া বলেন, সাউদিয়ার রিটার্ন টিকিট সঙ্গে থাকলেও রিইস্যুর করতে পারিনি। সোনারগাঁও হোটেলের সাউদিয়ার টিকিট কাউন্টারের সামনে দু’দিন ধরে অবস্থান নিয়েও কোনও সমাধান পায়নি। ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর, এর মধ্য যদি যেতে না পারি চাকরি থাকবে না। এখন কাজে ফিরতে না পারলে তো পথে বসতে হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি জানি না কতজনের ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। যদি ২০ হাজার লোক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি যেতে চায় তাহলে ৭৬টি ফ্লাইটের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা সপ্তাহে মাত্র ২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি এখন। আমাদের পক্ষে এতো লোককে টিকিট দেওয়া তো সম্ভব না।
বিজনেস আওয়ার/২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০/এ