বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশ আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়েটির উদ্বোধন করবেন তিনি। রবিবার ভোর থেকে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ৬০ কিলোমিটার গতির একটি গাড়ি ১০ মিনিটেই কাওলা থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে পারবে। এক্সপ্রেসওয়েটি রাজধানীর যানজট এবং যাতায়াতের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেবে। এটি সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ হলে রাজধানীর কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে যাওয়া যাবে স্বল্প সময়ে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আক্তার জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়েটির উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরদিন রবিবার বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এই অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। বোর্ডিংয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীতে দুটি র্যাম্প আপাতত বন্ধ থাকবে।
আরও জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। থ্রি হুইলার, সাইকেল এবং পথচারীদের এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। মোটরবাইক এখনই চলতে পারবে না। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের কম) এবং মিনি-ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা, মাঝারি আকারের ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত) এবং ছয় চাকার বেশি বড় ট্রাক যথাক্রমে ৩২০ টাকা এবং ৪০০ টাকা দিতে হবে।
বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪ সালে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে ঢাকার যানজট নিরসনের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণের রুটের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি উঠে আসে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট বাহনগুলো শহরে ঢুকতে যাতে কোনো ধরনের বাধার মুখে না পড়ে সরাসরি বাইপাস করে চলে যেতে পারে সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার বাইরে বিশেষ করে গাজীপুরের দিক থেকে বা উত্তরবঙ্গ থেকে যে গাড়িগুলো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসে, সেগুলো যেন ঢাকাকে বাইপাস করে চট্টগ্রামে চলে যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে যানজট নিরসনের জন্য ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে গাড়ি উঠা ও নামার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রথম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি ২০১১ এবং পর্যালোচনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩। প্রকল্প সমাপ্তির সময়কাল ছিল জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০২৪। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, এতে ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ) তহবিল দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এতে ইতালীয় থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার রয়েছে ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) শেয়ার ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড