মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রবিবার সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের কার্যদিবস তুলনায় আজ লেনদেন পরিমাণ বেড়েছে। লেনদেন বেড়ে ছয়শ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এদিন ক্রেতার চাপ বেড়েছে। আজ ১২২টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ৩৫টির। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান ৩ দশমিক ৪৮ গুন বেশি।
উত্থান প্রসঙ্গে একাধিক সিকিউরিটি হাউজের কর্মকর্তা বলেন, আজকের উত্থান লেনদেনে চমক দেখিয়েছে বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ার। এই খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে ছিল। ফলে বীমার ওপরে ভর করে সূচকের উত্থান। বেড়েছে লেনদেনও। এদিন বীমার খাতের ৭৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। বীমার পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল চামড়া, পাট ও আইটি খাতের প্রতি। এই তিন খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এদিন চামড়ায় ৬৬ শতাংশ, পাটে ৬৬ শতাংশ এবং আইটির ৬৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
এছাড়া ভ্রমন ও অবসর, সেবা ও আবাসন, পেপার ও প্রিন্টিং, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতের কোম্পানির শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। ফ্লোর প্রাইসের কারনে এসব খাতের অনেকগুলো কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবতিত ছিল। এরপরও ভ্রমন ও অবসরে ৫০ শতাংশ, সেবা ও আবাসনে ৫০ শতাংশ, পেপার ও প্রিন্টিংয়ের ৫০ শতাংশ এবং খাদ্য ও আনুসঙ্গিকে ৪৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
সূচক প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস ডিএসইতে গত বছরের ২৪ আগস্ট পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) উত্থানে ছিল পুঁজিবাজার। ওইসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরেরদিন সোমবার লেনদেনে ভাটা পড়ে। সেখান থেকে পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন কিছুটা বাড়ে। পরেরদিন লেনদেন ফের কমে এসেছে। এরপরের কার্যদিবস লেনদেন বেড়ে ২৩শ কোটি টাকায় ওঠেছিল। পরে জোয়ার-ভাটায় চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর লেনদেন বছরের সেরা রেকর্ড করেছিলো। ওইদিন লেনদেন ২৮শ কোটি টাকা এসেছিলো।
এরপর লেনদেনে জোয়ার-ভাটা শুরু হয়। এতে ভাটার জোরে লেনদেন অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে আসে। যা গত বছরের শেষ কার্যদিবস ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন দাঁড়িয়েছিল ৩৪৫ কোটি টাকায়। সেখান থেকে ফের কমে চলতি বছরের শুরুতে বা পহেলা জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১৭৮ কোটি টাকা। ঠিক পরেরদিন ২রা জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১৪৬ কোটি টাকা। এধরনের লেনদেন ডিএসইতে মন্দার রেকর্ড হিসেবে বিবেচ্য। অবশ্য সেই মন্দা থেকে পরে বেরিয়ে এসেছিল ডিএসই। পরে ধীরে ধীরে লেনদেন বাড়ে। এরই ধারায় মে মাসের শেষদিকে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। পরে লেনদেনে ফের ভাড়া। এতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লেনদেন ৮শ কোটিতে চলে আসে। সেখান থেকে আরও কমে বর্তমানে লেনদেন ৬শ কোটি নেমে এসেছে।
চলতি বছরে সূচক বেড়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ১৭৭ পয়েন্ট। আজ লেনদেন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩১১ পয়েন্ট। চলতি বছরে সূচক বেড়েছে ১৩৪ পয়েন্ট। গত বছরে ২০ সেপ্টেম্বর সূচক ছিল ৬ হাজার ৫৯৬ পয়েন্ট। সেই হিসেবে গত এক বছরে সূচক কমেছে ২৮৫ পয়েন্ট।
লেনদেন ও সূচক মন্দা কমলেও পুঁজিবাজারের মূলধন বেড়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, গত বছরে ২০ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। আজ মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। গত এক বছরে বাজার মূলধন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। রেগুলেটরদের নানান ইতিবাচক উদ্যোগের কারনে পুঁজিবাজার সাইজ এতো বড় হয়েছে। এটা বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সবুজ সংকেট।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, রবিবার ডিএসইতে ৬১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৪৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩১১ দশমিক ৬০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৫ দশমিক ১৭ পয়েন্ট ও ডিএসইএস সূচক ১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রেমে ২ হাজার ১৪৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে।
রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১২২টি এবং কমেছে ৩৫টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৭৫টির। এদিন ডিএসইতে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন কোম্পানিটি ৫৬ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, সিমটেক্সের ১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা, জেমিনি সী ফুডের ১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা, রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা, এমারেল্ড অয়েলের ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, নাভানা ফার্মার ১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে রবিবার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৭৩টি, কমেছে ২১টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৭৬টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩০ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৩ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ২৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৪ দশমিক ২৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৯ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪১৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৫৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭৫ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে ডেফোডিল কম্পিউটার্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফু-ওয়াং ফুডের ৬৩ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের ৪৪ লাখ টাকা, সেন্ট্রাল ফার্মার ২৩ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মার ২২ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটালের ২২ লাখ টাকা, এমারেল্ড অয়েলের ২১ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ২০ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোলসিমের ১৯ লাখ টাকা এবং মিল্ডল্যান্ড ব্যাংকের ১৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
বিজনেস আওয়ার/ ০৩ সেপ্টেম্বর,২০২৩/এমএজেড