ধর্ম ডেস্ক: কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন পুরুষের সতর দেখা এবং কোন নারীর জন্য অন্য কোন নারীর সতর দেখা হারাম। আর কোন পুরুষের জন্য অন্য কোন নারীর সতর দেখা তো অবশ্যই হারাম তা তো আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। সতর বলতে শরীয়তের দৃষ্টিতে মানব শরীরের যে অঙ্গ দেখা অন্যের জন্য হারাম উহাকেই বুঝানো হয়।
‘সতর’ শব্দটি আরবি ‘আস-সাতরু’ ধাতুমূল থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ ঢেকে রাখা। অর্থাৎ শরীরের যেসব অঙ্গ লজ্জার কারণে ঢেকে রাখা হয় তাকে সতর বলা হয়।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদমসন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে এবং যা শোভাস্বরূপ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম। এসব মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ: ২৬)
পুরুষের সতর: ইসলামের পরিভাষায়, পুরুষের সতর বা ঢেকে রাখতে হয়- এমন অংশ হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। অর্থাৎ এতটুকু স্থান অন্য ব্যক্তিদের সামনে ঢেকে রাখা ফরজ। বাকি মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ক্ষেত্র ও সমাজ হিসেবে যা শালীন ও খোদাভীতি প্রকাশ করে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম।
হাদিস শরিফে এসেছে, আমর ইবনে শুআইব (রহ.) তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (সা.) বলেন, ‘কোনো পুরুষ অপর পুরুষের সতরের দিকে তাকাবে না। পুরুষের সতর হল নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত।’ (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদিস: ৩২৩৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৭; সুনানে দারা কুতনী ১/৩২০)
এক সাহাবি নবী (সা.)কে সতরের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখব?’ তিনি বললেন, ‘তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সবার দৃষ্টি থেকে তোমার লজ্জাস্থান হেফাজত করবে।’
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘পুরুষেরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে?’ তিনি বললেন, ‘যত দূর সম্ভব কেউ যেন ঢেকে রাখতে হয় এমন স্থান দেখতে না পারে—তুমি তা-ই করো।’ তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে।’ তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হকদার।’ (তিরমিজি)
নারীদের সতর: মাহরামদের সামনে নারীদের সতর হলো- মাথা, চুল, গর্দান, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা, গর্দানসংশ্লিষ্ট সিনার ওপরের অংশ ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর। অর্থাৎ, এর বাইরের অংশ ঢেকে রাখতেই হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩২)
এর বাইরে নারীদের জন্য গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা ও হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন—রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি।
(ফাতাওয়া শামি : ১/৪০৬, ফাতাওয়া রহিমিয়া : ৪/১০৬ হেদায়া ১/৯২; নসবুর রায়াহ ১/২৯৬-৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২২; ১৮/৯০)
বিজনেস আওয়ার/০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ