মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বৃহস্পতিবার সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের কার্যদিবস তুলনায় এদিন লেনদেন পরিমাণ কমেছে। লেনদেন কমে সাতশ কোটি টাকার ঘরে এসেছে। এদিন বিক্রেতার চাপ বেড়েছে। এতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন দ্বিগুন।
মন্দা লেনদেন প্রসঙ্গে একাধিক সিকিউরিটি হাউজের কর্মকর্তা বলেন, আজকের পতনেও বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে ছিল। বীমার ওপরে ভর করে বড় ধরনের সূচক পতন থেকে রক্ষা পেল ডিএসই। কমেছে লেনদেন। এদিন বীমার খাতের ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ২৭টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ২২টি কোম্পানির শেয়ার দর। বাকী ১৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বা ৮টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিল।
সূচক প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারের নতুন সময় সূচির প্রথম কার্যদিবস ডিএসইতে গত বছরের ২৪ আগস্ট পতন হয়েছিল। যা আগের টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর এই মন্দা। পতন পরের দুই কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার ও রবিবার) উত্থানে ছিল পুঁজিবাজার। ওইসময় লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিলো। পরেরদিন সোমবার লেনদেনে ভাটা পড়ে। সেখান থেকে পরের দুই কার্যদিবস লেনদেন কিছুটা বাড়ে। পরেরদিন লেনদেন ফের কমে এসেছে। এরপরের কার্যদিবস লেনদেন বেড়ে ২৩শ কোটি টাকায় ওঠেছিল। পরে জোয়ার-ভাটায় চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর লেনদেন বছরের সেরা রেকর্ড করেছিলো। ওইদিন লেনদেন ২৮শ কোটি টাকা এসেছিলো।
পরে লেনদেনের জোয়ার-ভাটা শুরু হয়। এতে ভাটার জোর বেশি থাকায় লেনদেন অপ্রত্যাশিত ভাবে কমেছে। যা গত বছরের শেষ কার্যদিবস ২৯ ডিসেম্বর লেনদেন দাঁড়িয়েছিল ৩৪৫ কোটি টাকায়। সেখান থেকে ফের কমে চলতি বছরের শুরুতে বা পহেলা জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১৭৮ কোটি টাকা। ঠিক পরেরদিন ২ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ১৪৬ কোটি টাকা। এধরনের লেনদেন ডিএসইতে মন্দার রেকর্ড হিসেবে বিবেচ্য। অবশ্য সেই মন্দা থেকে পরে বেরিয়ে এসেছিল ডিএসই। পরে ধীরে ধীরে লেনদেন বাড়ে। এরই ধারায় মে মাসের শেষদিকে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। পরে লেনদেনে ফের ভাটা। এতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লেনদেন ৮শ কোটিতে চলে আসে। সেখান থেকে আরও কমে বর্তমানে লেনদেন ৭শ কোটি নেমে এসেছে।
চলতি বছরে সূচক বেড়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ১৭৭ পয়েন্ট। আজ লেনদেন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৭ পয়েন্ট। চলতি বছরে সূচক বেড়েছে ১৩০ পয়েন্ট। গত বছরে ২০ সেপ্টেম্বর সূচক ছিল ৬ হাজার ৫৯৬ পয়েন্ট। সেই হিসেবে গত এক বছরে সূচক কমেছে ২৮৯ পয়েন্ট।
লেনদেন ও সূচক মন্দা কমলেও পুঁজিবাজারের মূলধন বেড়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, গত বছরে ২০ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। আজ মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। গত এক বছরে বাজার মূলধন ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা বেড়েছে। রেগুলেটরদের নানান ইতিবাচক উদ্যোগের কারনে পুঁজিবাজার সাইজ এতো বড় হয়েছে। এটা বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সবুজ সংকেট।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সাতশ কোটি ৭৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৭ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট ও ডিএসইএস সূচক ২ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রেমে ২ হাজার ১৩৭ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে ও ১ হাজার ৩৬৯ দশমিক ১৯ পয়েন্টে।
রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫৩টি এবং কমেছে ১০৯টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৬৭টির। এদিন ডিএসইতে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন কোম্পানিটি ৫৬ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সী পার্ল বিচের ২১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, সোনালী পেপারের ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ১৫ কোটি ৮৫ লাক টাকা, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ১৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং ইয়াকিন পলিমারের ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ৫৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৬৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৪৫টি, কমেছে ৫৯টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৪টির।
এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৫২ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৮ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৭ দশমিক ৬১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪০৪ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৫১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে সী পার্ল বিচের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন কোম্পানিটির ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমারেল্ড অয়েলের ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুডের ৭০ লাখ টাকা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪১ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোলসিমের ৩৬ লাখ টাকা, খান ব্রাদার্স পিপি ওয়েব ব্যাগের ২০ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটালের ১৫ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৪ লাখ টাকা এবং ইবনে সিনার ১৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
বিজনেস আওয়ার/৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড