মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। সপ্তাহটিতে বেড়েছে বাজার মূলধন। বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও।
সপ্তাহটিতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। মোট লেনদেনের ৩২ শতাংশই টপটেন কোম্পানির দখলে। লেনদেন শীর্ষে ওঠে এসেছে বি ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুড শেয়ার। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর পতনের চেয়ে উত্থান বেশি হয়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র মতে, গেল সপ্তায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৫৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৮২টির, দর কমেছে ৭৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৩টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ২০টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে প্রধান সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৭ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৬৯ দশমিক ১৯ পয়েন্টে।
গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপর ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর শেয়ারবাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর শেয়ারবাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩০ কোটি ৩ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭৬ হাজার ৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৩৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে (বৃহস্পতিবার) পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৭০ শতাংশ এবং বি ক্যাটাগরির ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। মোট লেনদেনের ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। এই দশ কোম্পানি লেনদেন করেছে ৮৩৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বি ক্যাটাগরির ফু-ওয়াং ফুড শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের লেনদেন করেছে ২৩৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এছাড়া ইস্টার্ন হাউজিংয়ের (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, সী পার্ল বিচের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, রুপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ২৮ শতাংশ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ২৬ শতাংশ, জেমিনি সী ফুডের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ২৪ শতাংশ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের (বি ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ইউনিক হোটেলের (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৯১ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড